আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এবং সোফেনের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা: চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়  শীর্ষক আলোচনা সভাটি রোববার বিকেলে এমএসএফ এর নিজস্ব কার্যালয় ধানমন্ডির সাঁঝের মায়াতে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এমএসএফর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.

তানিয়া হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন তেজগাঁ থানার এডিসি নাসরিন সুলতানা (উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) এবং সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন। 

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চারুশিল্পী সাঈদা কামাল এবং দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ।

আলোচনা সভার শুরুতে কবি ও মানবাধিকার কর্মী সুফিয়া কামালের নারীর অধিকার বিষয়ক একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়। এরপর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে নারীর ওপর সহিংসতার একটি কনসেপ্ট নোট পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করা হয়। 

এতে বলা হয়- সহিংসতার ঘটনা অনলাইনে হলেও তার প্রভাব এতোই মারাত্মক যে, বাস্তব জীবনে নারী ও শিশুরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে অনলাইনে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ১৯টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ১৭টি ঘটনায় নারী ও শিশু এবং দুটি ঘটনায় পুরুষ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩টি ঘটনায় একজন কিশোরী, একজন নারী ও দুই সন্তানের জননীসহ মোট ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইলে সাবেক প্রেমিক ও স্বামী  আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অপমানে তারা আত্মহত্যা করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বারোটি ঘটনায় সাবেক স্বামী ও প্রেমিক, একটি ঘটনায় বর্তমান স্বামী, একটি ঘটনায় চাকরি ও মডেল হওয়ার প্রলোভন দেখানো কয়েকজন মেডিকেল শিক্ষার্থী, একটি ঘটনা চুরি সংক্রান্ত, একটি ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং একটি ঘটনায় শিশু সাহিত্যিকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর পুরুষদের অনলাইনে হয়রানির দুটি ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে একটিতে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এবং অন্যটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এছাড়াও চলতি বছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতার ৭টি ঘটনা ঘটেছে।

অনলাইনে নারী ও শিশু হয়রানির ক্ষেত্রে অধ্যাপক তানিয়া হক মনে করেন নারীর উন্নয়ন যতোখানি হয়েছে ক্ষমতায়ন ততোটা হয়নি। যার অন্যতম কারণ নারীর প্রতি সহিংসতা। এ সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি পিতৃতান্ত্রিকতা যে পুরুষের জন্যও ক্ষতিকর গবেষণার মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আনার পরামর্শ দেন, কারণ শুধুমাত্র নারী নয়, সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত পুরুষও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকার উপর গুরুত্ব দেন। একইসঙ্গে তিনি সংখ্যাতাত্ত্বিক উন্নয়নের চেয়ে গুনগত উন্নয়নের উপর জোর দেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরার শিশু ধর্ষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন বলেন, নারীরা নিরাপদ নয় বিষয়টি যেমন সত্য, পাশাপাশি আশার কথা হলো তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করছে, আন্দোলন করছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনলাইনে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতেনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান এডিসি নাসরিন সুলতানা।   

তিনি আরও বলেন, সিআইডিতে সাইবার সংক্রান্ত সেল থাকলেও বর্তমানে সেবা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আলাদাভাবে সাইবার সংক্রান্ত সেল করার কথা ভাবছে সরকার।

আলোচনা সভায় বক্তারা অনলাইনে নারী ও শিশুর প্রতি হয়রানি বন্ধে ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

এমএসএফ ও সোফেনের উদ্যোগে আলোচনা সভা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এবং সোফেনের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা: চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়  শীর্ষক আলোচনা সভাটি রোববার বিকেলে এমএসএফ এর নিজস্ব কার্যালয় ধানমন্ডির সাঁঝের মায়াতে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এমএসএফর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন তেজগাঁ থানার এডিসি নাসরিন সুলতানা (উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) এবং সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন। 

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চারুশিল্পী সাঈদা কামাল এবং দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ।

আলোচনা সভার শুরুতে কবি ও মানবাধিকার কর্মী সুফিয়া কামালের নারীর অধিকার বিষয়ক একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়। এরপর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে নারীর ওপর সহিংসতার একটি কনসেপ্ট নোট পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করা হয়। 

এতে বলা হয়- সহিংসতার ঘটনা অনলাইনে হলেও তার প্রভাব এতোই মারাত্মক যে, বাস্তব জীবনে নারী ও শিশুরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে অনলাইনে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ১৯টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ১৭টি ঘটনায় নারী ও শিশু এবং দুটি ঘটনায় পুরুষ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩টি ঘটনায় একজন কিশোরী, একজন নারী ও দুই সন্তানের জননীসহ মোট ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইলে সাবেক প্রেমিক ও স্বামী  আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অপমানে তারা আত্মহত্যা করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বারোটি ঘটনায় সাবেক স্বামী ও প্রেমিক, একটি ঘটনায় বর্তমান স্বামী, একটি ঘটনায় চাকরি ও মডেল হওয়ার প্রলোভন দেখানো কয়েকজন মেডিকেল শিক্ষার্থী, একটি ঘটনা চুরি সংক্রান্ত, একটি ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং একটি ঘটনায় শিশু সাহিত্যিকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর পুরুষদের অনলাইনে হয়রানির দুটি ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে একটিতে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এবং অন্যটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এছাড়াও চলতি বছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতার ৭টি ঘটনা ঘটেছে।

অনলাইনে নারী ও শিশু হয়রানির ক্ষেত্রে অধ্যাপক তানিয়া হক মনে করেন নারীর উন্নয়ন যতোখানি হয়েছে ক্ষমতায়ন ততোটা হয়নি। যার অন্যতম কারণ নারীর প্রতি সহিংসতা। এ সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি পিতৃতান্ত্রিকতা যে পুরুষের জন্যও ক্ষতিকর গবেষণার মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আনার পরামর্শ দেন, কারণ শুধুমাত্র নারী নয়, সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত পুরুষও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকার উপর গুরুত্ব দেন। একইসঙ্গে তিনি সংখ্যাতাত্ত্বিক উন্নয়নের চেয়ে গুনগত উন্নয়নের উপর জোর দেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরার শিশু ধর্ষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন বলেন, নারীরা নিরাপদ নয় বিষয়টি যেমন সত্য, পাশাপাশি আশার কথা হলো তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করছে, আন্দোলন করছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনলাইনে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতেনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান এডিসি নাসরিন সুলতানা।   

তিনি আরও বলেন, সিআইডিতে সাইবার সংক্রান্ত সেল থাকলেও বর্তমানে সেবা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আলাদাভাবে সাইবার সংক্রান্ত সেল করার কথা ভাবছে সরকার।

আলোচনা সভায় বক্তারা অনলাইনে নারী ও শিশুর প্রতি হয়রানি বন্ধে ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ