ত্রাণের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল
Published: 10th, March 2025 GMT
গাজায় বন্দী বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করতে এবার সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর আগে এই নির্দেশ দিল ইসরায়েল সরকার।
গতকাল রোববার ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন এ ঘোষণা দেন। এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করেন।
গতকাল এক ভিডিও বার্তায় কোহেন বলেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং যুদ্ধ শেষে গাজায় আর এক দিনও যেন হামাসের অস্তিত্ব না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের হাতে যা কিছু আছে, তার সবই আমরা ব্যবহার করব।’
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হলে শুরুতেই গাজায় পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েল সরকার বলেছে, তারা গাজায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না।
বিবৃতিতে কোহেন আরও বলেন, ‘আমি এইমাত্র গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশে সই করেছি।’
যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় প্রধান প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
আজ সোমবার কাতারে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। গাজায় ভঙ্গুর এক যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ১ মার্চ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি।
ইসরায়েল চাইছে, হামাস তাদের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময় বাড়ানোর প্রস্তাবে রাজি হোক। তবে হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ অবসানের কথা বলা আছে।
ধারণা করা হচ্ছে যে হামাসের হাতে এখনো ২৪ জন জীবিত জিম্মি এবং ৩৫ জিম্মির মরদেহ আছে।
ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর হামাস বলেছিল, এর প্রভাব গাজায় থাকা জিম্মিদের ওপরও পড়বে।
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে, সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান১৮ জানুয়ারি ২০২৫গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার পর গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নিজেদের অবস্থানে কোনো ধরনের পরিবর্তন না করেই মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ করেছে। তারা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা দ্রুত শুরু করতেও বলেছে।
যুদ্ধে গাজার বেশির ভাগ অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সেখানে জেনারেটর ও সৌর প্যানেলের মাধ্যমে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।
গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনগাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি আলোচনা ঘিরে অনিশ্চয়তা০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ ব ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
খুঁটির জোরবিহীন ইউক্রেন
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে শান্তি আলোচনার তারিখ নির্ধারণের পরে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু মার্কিন অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য আবার প্রবাহিত হতে শুরু করলেও, ইউক্রেনীয় জেনারেলদের তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থকের সুবিধামাফিক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কেননা তারা অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ইচ্ছামতো বন্ধ করে দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে এই নতুন অনিশ্চিত বিশ্বে প্রভাব পড়বে।
ইউক্রেন এখন এক ভয়াবহ উভয় সংকটের মুখোমুখি– হয় সীমিত সম্পদ নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাও অথবা শত্রুর কাছে জমি ছেড়ে দিয়ে সেনাশক্তি সংহত করো এবং রাজনৈতিক ফায়দা পেতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক সুবিধা দাও। যুদ্ধের গতিবিধি বরাবরই উপকরণ সরবরাহের ওপর নির্ভর করেছে। মস্কো আশা করে, কিয়েভের কাছে গোলাবারুদের অভাব দেখা দিলে তখন তারা নতুন আক্রমণ শানাবে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছিল ইউক্রেনে সরবরাহ ঘাটতির সময়ে।
রাশিয়া সুবিধা পেতে কামানের গোলা ব্যবহার করেছে। কৌশলগত শহর আভদিভকারের উত্তর ও পশ্চিমে অগ্রসর হতে বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে মাঝে মাঝে ইউক্রেনের প্রতিটি কামান শেলের বিপরীতে রাশিয়া পাল্টা ২০টি শেল নিক্ষেপ করেছে। ২০২৫ সালে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন থেকে উত্তরে খারকিভ পর্যন্ত নিজেদের চলমান আক্রমণাত্মক অভিযান জোরালো করতে এবং রাশিয়ান কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো বিতাড়িত করার জন্য যে কোনো সরবরাহ থামিয়ে দিতে পারে।
এর মানে ইউক্রেনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে এবং কোথায় রাশিয়ার সৈন্যদের হতাশ করার জন্য সুযোগ বুঝে বিলম্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। সুবিধা নিতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক জায়গা ছেড়ে দেওয়া একটি পুরোনো সামরিক কৌশল, কিন্তু যখন ভূখণ্ডটি আপনার সার্বভৌম অঞ্চল হয় তখন এটি বিশাল রাজনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করে। অতএব, বিলম্বিত পদক্ষেপের সামরিক যুক্তি ইউক্রেনে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি ও বেসামরিক মনোবল কমিয়ে দেয় এবং সরকারের যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেসামরিক সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই সংকট যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন তার প্রচেষ্টাকে কোথায় এবং কীভাবে গুরুত্ব দেবে, তা নির্ধারণ করবে। প্রথমত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা দিন দিন আকর্ষণ হারাবে। ইউক্রেনকে তার প্রতিরক্ষামূলক
অভিযানের জটিলতা কমাতে হবে এবং নিজস্ব ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে ফিরে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করে না। এটি আলোচনার টেবিলে সুবিধা নিতে জবরদস্তিমূলক বিমান হামলা চালায়। মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকায় রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনীয় শহর ও অবকাঠামোর ওপর হামলা বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে, যা কিয়েভকে তার সম্মুখ সারির প্রতিরক্ষা বা রাজনৈতিক কেন্দ্র রক্ষা করতে বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। ভিয়েতনাম থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত বিমানশক্তি ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দরকষাকষির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন উত্তর ভিয়েতনামে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে বোমা হামলা চালিয়েছিলেন। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সঙ্গেও একই আচরণ করতে পারে।
এ অবস্থান থেকে বলা যায়, রাশিয়া প্রতিরক্ষা দুর্বল করা এবং মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে ইউক্রেনের শহর ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে তার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অভিযান কঠোরতর করতে পারে। কিয়েভ তার আকাশপথের সুরক্ষায় গোয়েন্দা তথ্য ও মার্কিন নির্মিত প্যাট্রিয়ট ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পদ্ধতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাই এই জবরদস্তিমূলক অভিযান কার্যকর হতে পারে।
বেঞ্জামিন জেনসেন: মেরিন কর্পস ইউনিভার্সিটির অ্যাডভান্সড ওয়ারফাইটিং স্কুলের কৌশলগত
অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক; দ্য কনভারসেশন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম