জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ: ৩৮ বছর ধরে ইফতারে সৌহার্দ্য
Published: 10th, March 2025 GMT
সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে থালা। তাতে একে একে দেওয়া হয় ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, নিমকি আর সেমাই। প্রতিটি থালার চারপাশে গোল করে বসেছেন পাঁচ থেকে ছয়জন। কিছুদূরে বরফের টুকরা নিয়ে বড় হাঁড়িতে চলছে শরবত তৈরি। গ্লাসে এনে দেওয়া হয় প্রত্যেকের পাশে। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজান ভেসে আসতেই এই শরবত পান করে শুরু হয় ইফতার।
এই দৃশ্য চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের। প্রায় ৩৮ বছর ধরে এভাবেই মসজিদটিতে আয়োজিত হয়ে আসছে গণ-ইফতার। নগরের অন্যতম পুরোনো এই মসজিদে পথচারী, শ্রমজীবীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এই ইফতারে যোগ দেন। একই থালায় বসে ভেদাভেদ ভুলে ইফতার করেন তাঁরা। এ যেন সৌহার্দ্যের এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ এখানে ইফতারে শামিল হন।
ইফতার প্রস্তুত করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইফতার উৎসবে রাবি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
পবিত্র রমজানের স্নিগ্ধতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) যেন এক অন্য ভুবনে পরিণত হয়েছে। শহীদ মিনার থেকে জুবেরি মাঠসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় বিরাজ করছে ইফতারের এক উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ইফতারে মিলিত হচ্ছেন, যা ক্যাম্পাসে তৈরি করেছে এক আনন্দঘন পরিবেশ।
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, জেলা ও উপজেলা সংগঠন, এমনকি হলভিত্তিক বিভিন্ন দলও এ ইফতার আয়োজনে শামিল হচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মসজিদেও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে ইফতার করছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে রাবির শহীদ মিনার, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, জুবেরি মাঠ ও হল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা নানা পদের ইফতার সামগ্রী নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। তাদের ইফতারে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, শরবত, কলা, পেয়ারাসহ আরো কত কি।
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাবি ও রাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
নিজ বিভাগ থেকে চেয়ারম্যান দাবি রাবির ট্যুরিজম শিক্ষার্থীদের
এ ইফতার আয়োজন যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি করেছে। কেউ বাজার থেকে ভাজাপোড়া আনছেন, কেউ শরবত বানাচ্ছেন, আবার কেউ ফল কেটে প্লেট সাজাচ্ছেন। পরিবারের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীরা বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের সাথে ইফতারের মাধ্যমে যেন এক পারিবারিক আবহ তৈরি করছেন।
বিকেল গড়াতেই ক্যাম্পাসে শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। পছন্দের জায়গায় দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা গল্প-গুজবের ফাঁকে ইফতার তৈরি করেন। অ্যাকাডেমিক ভবনের ক্লাসরুম, হলের টিভি রুমেও চলছে ইফতার মাহফিল।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফাসান আলম বলেন, “পরিবার ছেড়ে ক্যাম্পাসে একা রমজান মাস কাটানোটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। বাসার ইফতারের উষ্ণতা, মায়ের হাতের রান্না মিস করি ঠিকই, তবে ক্যাম্পাসের ইফতারের অনুভূতিও আলাদা। বন্ধু-বান্ধব, হল-মেসের পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরের ইফতার আয়োজন- সব মিলিয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন বলেন, “ক্যাম্পাসে থাকার কারণে এত মানুষের সঙ্গে একত্রে ইফতার করার সুযোগ পেয়েছি। মনে হচ্ছে ক্যাম্পাসে যেন মেলা বসেছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই, ছোট ভাই সবার সাথেই নিয়মিত ইফতারের আয়োজন চলছে। একেকদিন একেক জায়গায় ইফতার, সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিহা সাঈদ নিশা বলেন, “রমজানে পরিবার ছাড়া এত দূরে থাকাটা কষ্টের। তাদের কথা সবসময় মনে পড়ে। তবে ক্যাম্পাসের বন্ধুরা এখন পরিবারের মতো হয়ে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার মজাই আলাদা। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকে, এভাবেই এবারের রমজান কেটে যাচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময় পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। তবুও জীবন তো থেমে থাকে না।”
ঢাকা/মেহেদী