রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব
Published: 10th, March 2025 GMT
আগামী শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আশ্রয়শিবির পরিদর্শন এবং একাধিক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে নিয়ে ইফতার করবেন দুজন। জাতিসংঘ মহাসচিব এর আগেও কয়েকবার আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন। তবে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এটিই প্রথম সফর।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার খবরে আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে থাকবে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, মরিচ্যা, শরবতসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খাবার।
রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দুজনের সফরের বিষয়টি শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ১৩ মার্চ চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। সফরের দ্বিতীয় দিন ১৪ মার্চ সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। কক্সবাজার বিমানবন্দরে জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুক-ই–আজম বীর প্রতীক। এরপর কক্সবাজার শহর থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে নেওয়া হবে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে। অন্যদিকে একই দিন বিকেল চারটার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরও বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে ইফতার করবেন। এরপর তাঁরা ঢাকার উদ্দেশে আশ্রয়শিবির ত্যাগ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকার ইস্যুবিষয়ক বিশেষ দূত খলিলুর রহমান ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার পাঠানো আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।
টেকসই প্রত্যাবাসন ও নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবিরোহিঙ্গা নেতারা জানান, আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল) প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চাইবেন রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণও তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার প্রভাব, তহবিলসংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরা হবে। আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাবেন রোহিঙ্গারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছাবেন। পরিদর্শনের সময় একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আশ্রয়শিবিরের বর্তমান চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন। সেখানে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করবেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ ছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন।
পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, তরুণ ও নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২০ বর্ধিত) হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন। ইফতারের আয়োজন করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। ইফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও অংশ নেবেন।
আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সচরাচর যা দিয়ে ইফতার করেন, আয়োজনে তা রাখা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ পেয়ে রোহিঙ্গারা মহাখুশি।’
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশ্রয়শিবিরে আসার খবরে সাধারণ রোহিঙ্গারা খুবই উৎফুল্ল। বৈঠকে আমরা মহাসচিবের কাছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আরাকান রাজ্যে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানাব। খাদ্যসহায়তায় কাটছাঁট করার ফলে শরণার্থীদের জীবনে যে নেতাবাচক প্রভাব পড়ছে, তা–ও তুলে ধরা হবে।’
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের হেফাজতে সেই ভাইরাল ‘চলমান খাট’
সামাজিক মাধ্যমে ক’দিন ধরে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে এক ব্যক্তি বিছানার মাঝখানে বসে আছেন। তোশক, চাদর, বালিশসহ পুরো খাটটাই চলছে। যেন একটি গাড়ি। আসলে এটি একটি চলমান বিছানা কিংবা চলমান খাটগাড়ি। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা নবাব শেখ প্রায় দেড় বছরে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ করে খাটগাড়িটি বানিয়েছেন। বিবিসি।
ঈদের দিন একটু ‘ট্রায়াল’ দিতে বেরিয়েছিলেন নিজের বিচিত্র এই গাড়িটি নিয়ে। মুহূর্তেই তা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ওই চলমান বিছানা দেখতে ব্যাপক ভিড়ও হচ্ছিল। নবাব শেখের এখন মন খারাপ। কারণ, তাঁর সাধের গাড়িটি মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার পুলিশ নিয়ে গেছে। ভাইরাল হওয়ার স্বপ্ন তো ছিলই, এর সঙ্গে ছিল বিছানায় বসে বসে চায়ের দোকানে চা খেতে যাওয়ার স্বপ্নও। তবে মোটর ভেহিকলস আইন অনুযায়ী কোনো গাড়িকে বদলে চালানোর অনুমতি নেই।
নবাব বলেন, ‘আমি ঘুমের মধ্যেই একদিন স্বপ্ন দেখি যে খাটে চেপেই যদি আমি চা খেতে যেতে পারতাম! সেই ভাবনা থেকেই শুরু।’ এর পরে তিনি খাটটিতে চারটি চাকা ও ইঞ্জিন লাগিয়ে চলন্ত খাট বানান। ঈদের দিন একটু ট্রায়াল দিতে বেরিয়েছিলাম। আমার কয়েকজন বন্ধু সেটার দুটো ভিডিও করে। সেটা আমি ফেসবুক পেজে দিলেই ভাইরাল হয়ে যায়।