নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আইনগুলো কার্যকর নয়
Published: 10th, March 2025 GMT
দুঃশাসন মানুষকে হতভাগ্য আর উদ্ধত করে তোলে। দুঃশাসনের একটি ভয়ানক ডমিনো ইমপ্যাক্ট থাকে। এতে জুলুম পর্যায়ক্রমে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের দিকে আবর্তিত হতে থাকে, যা সুশাসনের ঠিক বিপরীত।
পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র কার্যকর কিনা, তা বুঝতে হলে আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্রমিক অগ্রগতির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী কিনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ গত ৫৩ বছরে এসব ক্ষেত্রে কিছু পোস্টার পার্সন তৈরি করা ছাড়া মৌলিক অগ্রগতি আনতে পারেনি।
দেশের নারী জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ অংশ পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, মজলুমদের মধ্যে সবচেয়ে নিপীড়িত। নারীদের এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে পুঁজিপতি ও শিল্পমালিকরা তাদের সস্তাশ্রমের ওপর ভর করে কারখানা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে। শ্রমবাজারে ব্যাপক নারী শ্রমিকের উপস্থিতির কারণে পুরুষদের মজুরিও ব্যাপক হারে সংকোচন করতে সক্ষম হয়েছে। গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের মতো স্বাভাবিক জৈবিক কাজ দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার জন্য নারীদের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে উঠেছে।
এ দেশে নবজাতকের মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুহার এখনও সন্তোষজনকভাবে কম নয়। এ দেশের বেটাগিরি রাজনৈতিক সংস্কৃতি নারীদের রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণী পরিসরগুলোতে প্রকৃত অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ করে প্রতীকী প্রতিনিধিত্বে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।
নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে প্রণীত আইনগুলো স্পষ্টতই কার্যকর নয়। সহিংসতার শিকার নারী বিচার চাইতে গিয়ে পুনরায় সহিংসতার শিকার হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুশাসনগুলোকে প্রায়ই নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও বৈষম্যকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির প্রশ্ন নারী মুক্তির প্রশ্ন থেকে আলাদা নয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো রাষ্ট্রকাঠামো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার যত বলয় আমাদের সমাজে ছিল, তার প্রতিটিই সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে।
এ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের ন্যায়ানুগ সমতার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব বাড়ানোর জন্য সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনৈতিকভাবে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের সুযোগ বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কর্মক্ষেত্র ও প্রকাশ্যে তাদের অংশগ্রহণ সহজ করতে হবে। নারীর নিরাপত্তায় আইনের কঠোর বাস্তবায়ন ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করে সমতাপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব।
এর জন্য অবশ্যই পরিবার ও সমাজে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহিমূলক কার্যকরী রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট ক র যকর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এর আগে, গত ১৬ এপ্রিল হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরের ১ মে থেকে আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, ‘‘বুধবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত যেসব মাছ আহরণ করা হবে, তা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিবহন সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় শুকনো মাছ আজ সন্ধ্যার মধ্যে পরিবহন শেষ করতে হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মাছ আহরণ বন্ধ থাকাকালীন জেলেদের ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত প্রায় ২৬ হাজার ৮৬৬ জন জেলে রয়েছেন।’’
কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে নৌ পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এসময় বন্ধ থাকবে জেরার সব বরফকল। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন হ্রদে কেউ মাছ ধরলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
ঢাকা/শংকর/রাজীব