স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় ঐকমত্য কমিশন
Published: 10th, March 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব, অতীতে বাংলাদেশে এটা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলো মতামত জানাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর শুরু হবে আলোচনা। আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর প্রতি যত দ্রুত সম্ভব মতামত জানাতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই। এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। আমরা চাই দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’
গত বছরের অক্টোবরে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়। এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।
আলী রীয়াজ বলেন, পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোকে ছকের আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। এই ছকগুলো ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতে মোট সুপারিশের সংখ্যা ১৬৬টি। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে সুপারিশ ২৭টি, বিচার বিভাগ–সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসন–সংক্রান্ত সুপারিশ ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন–সংক্রান্ত সুপারিশ ২০টি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ ও ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়। এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ ও ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা আশা করছেন, ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো তাদের মতামত জানাবে। ইতিমধ্যে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা ব্যাখ্যার দরকার হয়, তবে কমিশন সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সব সময় প্রস্তুত আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত জানার জন্য খুব শিগগির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত মত জ ন দলগ ল র র মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর দেখতে চায় এনসিপি
রাষ্ট্র সংস্কারের ‘জুলাই সনদ’ আগামী নির্বাচনের আগেই কার্যকর দেখতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ যে কথা উঠেছিল, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটিরও বাস্তবায়ন দেখতে চায় তারা। এই দুই দাবির বিষয়টি উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বিচার, সংস্কার, পরিবর্তনের কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার)—এগুলোর মধ্য দিয়ে যাতে আমরা নির্বাচনের দিকে যাই।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এনসিপি। এর আগে এই কার্যালয়ে এনসিপির প্রথম সাধারণ সভা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এনসিপি এ বিষয়ে কেন স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না? এর উত্তরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময়ের চেয়েও তাঁরা প্রেক্ষাপটের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ‘জুলাই সনদের’ কথা প্রধান উপদেষ্টা নিজে বলেছেন। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সনদ তৈরি হবে। যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা কেমন হবে, কী কী সংস্কার এই সময়ে করা হবে, কী কী সংস্কার ভবিষ্যতে করা হবে, কী কী সংস্কারের ধারাবাহিকতা থাকবে—রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) জনগণের কাছে দিতে হবে। সেটাকে জুলাই সনদ বলা হচ্ছে।
পরিবর্তন ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা থেকে মানুষ গণ-অভ্যুত্থানে এসেছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই বিষয়গুলো তো মানুষকে দিতে হবে, পূরণ করতে হবে। তার আগে আমরা কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাব? সেই কথাটাই আমরা বলছি। এটা যাতে আমরা ভুলে না যাই। বিচার, সংস্কার, পরিবর্তনের কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার)—এগুলোর মধ্য দিয়ে যাতে আমরা নির্বাচনের দিকে যাই।’
গণপরিষদ নির্বাচন ও সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন মূলত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে। যদি সেই ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যেই গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব। তবে নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন দেখতে চান তাঁরা।
‘ক্রাউড ফান্ডিং’
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সে নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে নাহিদের বরাত দিয়ে লেখা হয়, বাংলাদেশজুড়ে অনেক ‘সম্পদশালী’ (অ্যাফ্লুয়েন্ট) ব্যক্তি এনসিপিকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে ওই সাক্ষাৎকারে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
এ বিষয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে কিছু মিসকোট (ভুলভাবে উদ্ধৃত) করা হয়েছে বা ভুল অনুবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দলের আর্থিক বিষয়ে আমি বলেছিলাম, সমাজের সচ্ছল মানুষ, আমাদের সচ্ছল সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষী যাঁরা আছেন, তাঁরা মূলত আমাদের সহযোগিতা করেন। আমরা অনলাইন ও অফলাইনে একটা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের (গণচাঁদা সংগ্রহ) দিকে যাচ্ছি, যে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা দলের কার্যালয় স্থাপনসহ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করব। আমার এ কথার একটা ভুল অনুবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। এটা সংশোধনের জন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে