৭৫ বছর বয়সী গাভাস্কারের শিশুর মতো নাচ ও রোহিতের ‘দ্বিতীয় গুরুদক্ষিণা’
Published: 10th, March 2025 GMT
ঘটনাটা গত ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে। ঋষভ পন্ত বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পর চরম সমালোচনা করেছিলেন সুনীল গাভাস্কার। সেই সমালোচনায় ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসাও টের পাওয়া গিয়েছিল। পরে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এবিসি তাঁর কাছে ক্রিকেটের প্রতি আবেগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘সত্যি বলতে এই খেলাটা আমাকে তৈরি করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট আমাকে তৈরি করেছে।’
আরও পড়ুনফাইনালের মঞ্চে পিসিবির কাউকে না দেখে অবাক শোয়েব, আসলে যা ঘটেছে ৩৪ মিনিট আগেটেস্টে প্রথম ১০ হাজারি ক্লাবের দেখা পাওয়া গাভাস্কার ক্রিকেটের কত বড় কিংবদন্তি তা সবারই জানা। বর্তমান ভারতীয় দলের সবার চোখেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। রোহিত–কোহলিরা কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর এই শ্রদ্ধার পাত্রকে শিশুর মতো আনন্দ নিয়ে নাচতে দেখেছেন, ৭৫ বছর বয়সী মানুষটি ভুলে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের ওজন। বরং মনটাকে শিশুর মতো হালকা করে নেচে নেন দু–কদম!
গাভাস্কারের নাচের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টস তাঁর নাচের সেই ভিডিও এক্সে পোস্ট করে ক্যাপশনও দিয়েছে যথার্থ। বলিউডের ‘ইশকিয়া’ সিনেমার গানের লাইন, ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি।’
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারায় ভারত। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে রোহিত–কোহলিরা যখন সাদা ব্লেজার পরে শিরোপা বুঝে নেন, গাভাস্কার তখন সেখান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ধারাভাষ্য প্যানেলের অংশ গাভাস্কারের সঙ্গে ছিলেন মায়ান্তি ল্যাঙ্গার এবং ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা। রোহিতরা শিরোপা বুঝে নেওয়ার সময় হাত–পা ছুড়ে শিশুর মতো নাচ শুরু করেন ’৮৩ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি।
ক্যামেরায় গাভাস্কারের নাচ ভালোভাবে ধরতে সামনে থেকে সরে দাঁড়ান মায়ান্তি। উথাপ্পা তখন হেসেই কুটিকুটি। একটি উইলোখণ্ড দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে যিনি এত দিয়েছেন, পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণে তাঁর প্রতি সবার শ্রদ্ধা বাড়িয়েছেন, সেই মানুষটির ভেতর থেকে যখন শিশুসুলভ কোনো ভক্ত বেরিয়ে আসে, সেই দৃশ্য অবশ্যই ফ্রেমে গেঁথে রাখার মতোই।
আরও পড়ুনশামির মায়ের পা ছুঁয়ে পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ কোহলির২ ঘণ্টা আগেস্টার স্পোর্টসের সঞ্চালক যতীন সাপরু তখন বলেন, ‘গাভাস্কারকে থামাবে কে?’ পাশ থেকে ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং বলেন, ‘তাঁকে থামানো উচিত নয়। মুহূর্তটা সুন্দর। মজা লাগছে দেখে। তিনি একজন কিংবদন্তি এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর জন্যই আমরা খেলা শুরু করেছি, সৌভাগ্যবান হিসেবে ট্রফিগুলো জিততে পেরেছি। আর আজ (কাল) তাঁর মধ্যে সেই একই অনুভূতি ফিরে এসেছে।’
গাভাস্কার পরে রোহিতের দলকে সাদা বলে এই গ্রহের সেরা দলও বলেছেন ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে, ‘যে দল তিনটি ফাইনাল খেলেছে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রানার্সআপ, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ও এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়—কোনো সন্দেহ ছাড়াই সাদা বলে তাদের অবশ্যই এই গ্রহের সেরা দল বলতে হবে।’
রোহিতের নেতৃত্বে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয় ভারত। এরপর গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতল তাঁর অধিনায়কত্বেই। রোহিতের শৈশবের কোচ দিনেশ লাদ মনে করেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে রোহিত তাঁকে দ্বিতীয় গুরুদক্ষিণা দিয়েছেন।
ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে দিনেশ বলেছেন, ‘কিছু বলার ভাষা নেই। সকাল থেকে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেছি, আমরা জিতব। রোহিতও যাওয়ার আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের কথা বলে গেছে। সে আমাকে দ্বিতীয় গুরুদক্ষিণা দিয়েছে।’
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বিবেচনায় নিলে দুই বছরের মধ্যে টানা চারটি আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল খেলল ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দলকে আইসিসির বড় চারটি ইভেন্টের ফাইনালে তোলার কীর্তি গড়লেন রোহিত। এর মধ্যে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাঁর শৈশবের কোচের জন্য সম্ভবত প্রথম গুরুদক্ষিণা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভয় দেখালে আলোচনা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ইরান
ইরান আজ সোমবার বলেছে, ‘ভয় দেখানো’ হলে দেশটি কোনো ধরনের আলোচনায় অংশ নেবে না।
এর আগে ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরাককে কিছু ছাড় দেওয়ার সুযোগ বাতিল করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়ের আওতায় নিষেধাজ্ঞার পরও ইরাক প্রতিবেশী দেশটি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারত।
বিশ্লেষকদের মতে, তেহরানকে আরও বেশি চাপ দেওয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে ইরাকের জন্য বিশেষ ছাড় বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এর পরই ইরান জানাল, ভয় দেখালে দেশটি পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনায় বসবে না।
জাতিসংঘে ইরানের মিশন গতকাল রোববার ইঙ্গিত দেয়, পারমাণবিক কর্মসূচির সম্ভাব্য সামরিকীকরণ সম্পর্কে মার্কিন উদ্বেগ দূর করতে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে তেহরান। যদিও কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ হবে না।
এর পরদিন, অর্থাৎ আজ সোমবার ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক এমন আলোচনার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বরাবরই পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সামরিকীকরণ বলে কিছুই নেই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরঘাচি বলেন, ‘চাপপ্রয়োগ আর ভয় দেখানোর পর আমরা আলোচনা করব না। এটা কখনোই বিবেচনা করা হবে না। যা–ই হোক না কেন।’
এ বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি পুনর্বহাল করেন। বিশেষ করে তেল শিল্পকে বিপর্যয়ে ফেলার লক্ষ্যে নতুন করে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানায়, তেহরানের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞায় ইরাকের ছাড় পাওয়ার বিষয়টি নতুন করে নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইরান যাতে অর্থনৈতিক বা আর্থিকভাবে কোনো ধরনের স্বস্তি না পায়, আমাদের পক্ষ থেকে সেটা নিশ্চিত করা হবে।
ইরাকের গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদার এক–তৃতীয়াংশ জোগান দেয় প্রতিবেশী ইরান। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা তেহরান যথেষ্ট পরিমাণ আয়ের সুযোগ পায়।
২০১৮ সালে ইরাককে এই ছাড় দেওয়া হয়েছিল। একই সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে তেহরানের সঙ্গে সই হওয়া পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র গতকাল বলেন, ইরানের জ্বালানি উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে ইরাককে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসতে হবে।
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রাশ টানা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার কৌশল বেছে নিয়েছেন।
আরও পড়ুনইরানের ওপর ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ আবার ব্যর্থ হবে?২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনপারমাণবিক চুক্তি আলোচনায় ট্রাম্পের কোনো চিঠি পায়নি ইরান০৮ মার্চ ২০২৫