মাগুরার শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

শিশুটির চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে গঠিত বোর্ডের একজন চিকিৎসক ও শিশুটির স্বজনের সঙ্গে আজ সোমবার সকালে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল রোববার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন পোস্টে বলা হয়, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শিশুটির লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে এখন পিআইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে এ তথ্যের সত্যতা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসক ও শিশুটির স্বজন।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্‌! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’১৯ ঘণ্টা আগে

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির লাইফ সাপোর্ট একবারের জন্যও খোলা হয়নি। শিশুটি এখনো সংকটাপন্ন। তার অবস্থা অপরিবর্তিত। সে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।

শিশুটির মামাতো ভাই প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক তাঁদের জানিয়েছেন, অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। লাইফ সাপোর্টেই আছে।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের এই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মাগুরার আদালত।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ মার্চ ২০২৫

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর ৩ ঘণ্টা আগে

সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্‌রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুনবোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ০৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক স র জন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম যন্ত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে সেই শিশুর

তিন দিনেও জ্ঞান ফেরেনি লাইফ সাপোর্টে থাকা মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটির। তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে তাকে সেখানে নেওয়া হয়। 

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে গতকাল মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে চারজনকে। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলো– শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব শেখ, সজিবের ভাই রাতুল শেখ, বাবা হিটু শেখ ও মা জাবেদা বেগম। এজাহারে বলা হয়েছে, আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে তার বোনের শ্বশুর হিটু শেখ।

বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার রাতে মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয় সে। বৃহস্পতিবার সকালে অচেতন অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন হিটুর স্ত্রী জাবেদা বেগম। পরে তিনি পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর স্বজন হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে আনা হয় ঢামেক হাসপাতালে। 

গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। চেপে ধরার কারণে তার গলার আঘাত গুরুতর। শিশুটির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ডে চারটি বিভাগের চিকিৎসকরা রয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, দুপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে হাসপাতালে দেখতে আসেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। উপদেষ্টার নির্দেশ ও শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে শিশুটিকে বিকেলে সিএমএইচে নেওয়া হয়। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্বজন জানান, খাওয়া-দাওয়া না করায় শিশুটির মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল বিকেল তাঁকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় নেওয়া হয়েছে।

মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, এজাহারভুক্ত চারজনকে আগেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। রোববার তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

এজাহারে যা বলা হয়েছে
শিশুটির মা ঢাকা থেকে স্বামী ও বড় মেয়েকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান।  মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ওই দিন রাতে বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ কেউ করেনি। 

সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস উপদেষ্টার
গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। এ সময় তিনি বলেন, যে শিশুটি এখনও মেয়ে হয়ে ওঠেনি, নারী হয়ে ওঠেনি, তার গায়ে হাত দেয় কী করে? দেশটা কী কাপুরুষের দেশ হয়ে গেল? যারা আট বছরের মেয়ের গায়ে হাত দিল! এর পরও কাপুরুষগুলো পুরুষ হয়ে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি সেই শিশুর, কাটেনি শঙ্কা
  • মাগুরার সেই শিশুর বুকে বসানো হলো টিউব
  • মাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্‌! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’
  • মাগুরার সেই শিশুটির ছবি-ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ
  • মাগুরার সেই শিশুকে দেখতে সিএমএইচে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ
  • ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • কৃত্রিম যন্ত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে সেই শিশুর
  • মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুকে সিএমএইচে স্থানান্তর
  • মাগুরার সেই শিশুটিকে সিএমএইচে নেওয়া হলো