স্বামীর গুমের তদন্তে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান দেখছেন না, অভিযোগ ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর
Published: 10th, March 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেও স্বামীর গুমের বিষয়ে তদন্ত বা অনুসন্ধান চালানোর স্পষ্ট কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা)। বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা ছিল ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সবাইকে ফেরত পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান দেখতে বা জানতে পারিনি।’
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর পিরেরবাজার এলাকায় গতকাল রোববার বিকেলে দশঘর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাহসিনা রুশদীর এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়ার জন্য এ দোয়ার আয়োজন করা হয়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন গুম করেছিল। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় বিশ্বনাথ উপজেলায়, যে হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন।
সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে জোরালো আন্দোলন দানা বাঁধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে। আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই আন্দোলন অতীতে কমই দেখা গেছে। সিলেট-২ আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করে ইলিয়াস আলী দুবার বিজয়ী হন।
জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে বক্তৃতায় অভিযোগ করেন তাহসিনা রুশদীর। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।’
তাহসিনা রুশদীর আরও বলেন, ‘কেউ বলছেন আগে স্থানীয় নির্বাচন। আবার ছাত্ররা নতুন দল করে বলছেন হাসিনার বিচার হওয়ার পর নির্বাচন হবে। বিচার একটি আইনি প্রক্রিয়া, তার গতিতেই চলবে। বিচার শেষ হতে যদি সাত থেকে আট বছর লেগে যায়, তাতে কি মানুষ অপেক্ষা করবে? আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা করে দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন।’
ইফতার মাহফিল–পূর্ব সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন। উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম ও যুবদল নেতা আরিফ মিয়া কর্মসূচি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলী, সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক, দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন খান ও জেলা যুবদলের সদস্য ইমাম উদ্দিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র উপজ ল য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানচরকে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে
ভাসানচরকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে হাতিয়া দ্বীপ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রেসক্লাবের সামনে ‘হাতিয়ার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ’–এর ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়।
আয়োজকদের দাবি, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ২০১৬-১৭ সালের দিয়ারা জরিপে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ভাসানচরকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতি জাহেদুল আলম বলেন, ২০১৬-১৭ সালেই নবসৃষ্ট ভাসানচর অংশটির (ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা এবং কেউয়ারচর) দিয়ারা জরিপ শেষ করে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। এর ফলাফল ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি গেজেটে ভাসানচর অংশের ছয়টি মৌজা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জাহেদুল আলম আরও বলেন, ২০১৮ সালে সন্দ্বীপের জনৈক অধিবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরবর্তী সময়ে সব কার্যক্রম শেষ করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট নোটিশ জারি করা হয়েছে। ভাসানচর অংশের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বর্ণিত ছয়টি মৌজা নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের অধীন ভাসানচর থানা গঠিত হয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতির দাবি, ‘দীর্ঘদিন পর দূরভিসন্দিমূলকভাবে চলতি বছরের ২৩ মার্চ জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস চট্টগ্রাম, নোয়াখালী (হাতিয়া) ও চট্টগ্রাম (সন্দ্বীপ) অংশের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। একই দিন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) আন্তজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আদেশ জারি করা হয়। এটা সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করছি।’
জাহেদুল আলম বলেন, ‘জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট। একটি কুচক্রী মহল ওই অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াসে ভাসানচরকে একটি ইস্যু হিসেবে সামনে এনেছে, যা অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক কারিমুল হাই নাঈম, হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাবেক সভাপতি হেদায়েত হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, নোয়াখালী জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি শাহ মিজানুল হক মামুন, অ্যাডভোকেট শাহ মো. মাহফুজুল হক প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।