পাঁচ ফুট ৯ ইঞ্চির উচ্চতার কারও ওজন ৬৫.৩ থেকে ৭৯.৮ কেজি হয়ে থাকে। সেই হিসাবে রোহিত শর্মার ৭২ কেজি ওজন অন্তত বাড়াবাড়ি কিছু নয়। কিন্তু যা হয় আর কি, প্রত্যাশামতো পারফরম্যান্স না হলে লোকে তাঁর ওজন নিয়েই কথা বলে থাকে। এতদিন আড়ালে-আবডালে থাকলেও কিছুদিন আগে ভারতের কংগ্রেস মুখপাত্র শামা মুহাম্মদের একটি এক্স হ্যান্ডেল বার্তা তাতে ঝড় তোলে। শামা তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে রোহিতকে ‘মোটা’ বলে সমালোচনা করেন। যার উত্তরে সুনীল গাভাস্কার এক টকশোতে বলেন, ‘যদি শুধু চিকন ছেলেদের চান, তবে মডেলিং প্রতিযোগিতায় গিয়ে মডেলদের বেছে নিন। ক্রিকেট মাঠে দরকার পারফরম্যান্স, চেহারা নয়। বড় ইনিংস খেলতে গেলে মানসিক দৃঢ়তা থাকা সবচেয়ে জরুরি। কেউ কতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারে, কত ভালো ব্যাট করতে পারে– সেটাই আসল বিষয়।’
পোড়খাওয়া গাভাস্কারের কথাগুলোই আরেকবার সত্য প্রমাণিত করে দিলেন রোহিত শর্মা। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চেই হাত খুললেন তিনি ৮৩ বলে ৭৬ রান করে। বিশ্বসেরার মঞ্চে গত বছরের টি২০ বিশ্বকাপের পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের মুকুট পরে নিলেন তিনি।
রোহিতের টস ভাগ্য খারাপ হতে পারে, তা না হলে টানা ১২ ম্যাচে টস হেরে কেন তাঁর নাম বসবে লারার পাশে। ক্যাচ ফেলানোতেও বেখেয়ালি হতে পারেন, তা না হলে ড্যারেল মিচেলের ক্যাচ কেন পড়বে তাঁর হাত থেকে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মাঠে তাঁর অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। সে কারণেই তিনি একমাত্র অধিনায়ক, যিনি কিনা আইসিসির ভিন্ন ভিন্ন চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দলকে নিয়ে গেছেন এবং যার দুটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। হয়তো মাহেন্দ্র সিং ধোনির মতো তাঁকে কেউ ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলেন না। তবে বিরাট কোহলি ও রোহিতদের এই দলটি যেভাবে গত তিন বছর ধরে দলকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন, তাতে ‘ক্যাপ্টেন হিটম্যান’ বলা যায় তাঁকে। তবে ফাইনালের এই মঞ্চ ঘিরে একটি বিশাল অপূর্ণতা ছিল তাঁর।
গত ১৮ বছর ধরে আইসিসির আটটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে একটি হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না রোহিতের ব্যাটে। ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩০, ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ৯, ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ম্যাচে ২৯, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য, ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ ও ৩০ রানে আউট হয়েছিলেন। এর পর ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দুই ইনিংসে ১৫ ও ৪৩, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ৪৭ রানের পর গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে করেন মাত্র ৯ রান। ফাইনালে কোথায় গিয়ে যেন আটকে যায় রোহিতের ব্যাট। অবশেষে সেই আক্ষেপ পূরণ করে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। তবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও হারিয়েছেন এদিন।
আসলে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে ওডিআই খেলেছেন রোহিত। ২০২৪ সালে মাত্র তিনটি ওডিআইয়ে দেখা গেছে তাঁকে। এবার অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির কারণে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেমেছিলেন নেতৃত্ব দিতে। কটকে ইংলিশদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও যেন মন ভরেনি অনেকের। তাই যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪১, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ রান করলেন; তখন সেই আবার ফিসফাস– সব তো বাকিরাই করছেন, অধিনায়ক করছেন কী?
এই প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন গতকাল ফাইনালে। শুভমান গিলকে নিয়ে রোহিত শুরুতে তাঁর ‘হিটম্যান’ মেজাজে ৪১ বলে ফিফটি করার পর যখন ১০৫ থেকে ১০৬ রানের মধ্যে গিল আর কোহলি আউট হয়ে যান, তখন ৬৯ রানে থাকা রোহিত কিছুটা শ্লথ খেলায় মনোযোগী হন। কিন্তু ‘হিটম্যানের’ কি আর ওভাবে চলে, তাই রাচিনকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উইকেট দিতে হয় তাঁকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
এবার জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী!
ইংল্যান্ডপ্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আবির্ভাবের পর বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা বদলে গেছে। প্রিমিয়ার লিগ খেলা এ তারকার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর কানাডাপ্রবাসী সামিত সোমও আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর পাসপোর্ট করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবলের বাইরে অন্য ফেডারেশনগুলোতে প্রবাসী খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তাদের চিঠি দেওয়ার আগে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা এ অ্যাথলেটের পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠিও দিয়েছে তারা।
ছেলেদের ছয়টি ইভেন্টের মধ্যে জ্যাক আশিকুল তিনটিতে বেশ ভালো। পোমেল হর্স, ফ্লোর এবং ভল্টিং ইভেন্টে তিনি অসাধারণ শৈলী দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন কর্তাদের। ভিডিওতে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হলেও পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেটকে ঢাকায় এনে ট্রায়াল দিতে চায় ফেডারেশন। ‘আগে তার পাসপোর্ট হোক। তার পরই দেশে এনে তাকে আমরা দেখব। ভিডিওতে যা দেখেছি, আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তারকা সে হতে পারবে’–আত্মবিশ্বাসের সুরে গতকাল সমকালকে জানান বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল।
তবে কবে নাগাদ জ্যাক আশিকুলকে পাওয়া যাবে, সেটি এখনই বলতে পারছেন না জামিল। সামনে কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসে তাকে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের, ‘এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবকিছু নির্ভর করছে তার পুরো প্রক্রিয়ার ওপরে। প্রক্রিয়াগুলো একটু জটিল। অনেক ধাপ আছে। এশিয়ান গেমসের মতো আসরগুলোতে তাকে পাওয়া গেলে আমাদের দলটা শক্তিশালী হবে।’ প্রতিনিয়ত আশিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জামিল। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ জিমন্যাস্টও বাবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে মুখিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন জামিল, ‘বাংলাদেশে খেলার জন্য সে খুবই আগ্রহী। তার মধ্যে অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করছে। আমার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছে সে।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যাতে ভালো করে সেই জন্য সরকারও চাচ্ছে ভালো মানের প্রবাসীরা যেন এই দেশে আসেন। স্বপ্ন জাগিয়েও নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদের বেশি দিন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। ২০২২ কমনওয়েলথ এবং একই বছর তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে অংশ নেওয়া আলী কাদের পরবর্তীতে হারিয়ে যান। এরপর থেকেই বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন নতুন প্রবাসীর সন্ধানে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় খুঁজে পায় জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। ১৮ বছর বয়সী এ তরুণ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাঁর বাবা আশিকুল ইসলামের বাড়ি রংপুরে। মা আমেরিকান। মূলত চাচার মাধ্যমে জ্যাক আশিকুলের সন্ধান পায় বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। আশিকুলের খেলার ভিডিওগুলো দেখে ভালো লেগেছে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিলের।
গতকাল সমকালের সঙ্গে নতুন এ প্রবাসী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মে মাসের দিকে যোগাযোগ হয়েছে। তার পরে দেশের পট পরিবর্তনের কারণে অনেক দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এখন কাজটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। এখন তার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি যতটুকু তার পারফরম্যান্স দেখেছি তাতে সন্তুষ্ট বলা যায়। আমি বলব না, একেবারে অলিম্পিক লেভেলের। সাইক সিজার যখন খেলছিল সে অন্য লেভেলের ছিল। জ্যাক ইসলামের মাত্র ১৮ বছর বয়স। এখনও ইয়ং। তার মধ্যে ভালো সম্ভাবনা আছে। পারফরম্যান্স যতটুকু দেখলাম, আমাদের জাতীয় দল যেটা করছে, তাদের মতোই কিংবা তাদের চেয়ে একটু ভালো বলা যায়।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত অ্যাথলেট ছিলেন জিমন্যাস্ট সাইক সিজার। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেট ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ভোল্ট, ফ্লোর এবং অলরাউন্ড ইভেন্টে পারদর্শী ছিলেন। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্ট দলের সহকারী কোচ ছিলেন সিজার। তাঁর মতো প্রতিভাবান না হলেও জ্যাক আশিকুল ইসলামকে নিয়ে আশাবাদী জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন।