কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম কারাগারে
Published: 10th, March 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ছাতকে এক কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে শফিকুর রহমান (৪২) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও (উত্তরপাড়া) গ্রামের মসজিদের ইমাম ও খতিব।
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে অভিযুক্ত ইমামকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সুনামগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে, শনিবার বিকেলে তাকে আটক করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ও শনিবার শফিুকুর রহমান ভিকটিমকে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন এবং এই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেন। শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগী বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
আরো পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ‘ধর্ষণ’: প্রধান আসামি ৭ দিন, বাকিরা ৫ দিনের রিমান্ডে
ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে খোলা হচ্ছে ‘হটলাইন’
এ সময় তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে। পরে ভিকটমের ফুফু বাদী হয়ে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/মনোয়ার/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিরিয়ায় বাড়িতে ঢুকে আলাউইতদের হত্যা করা হয়েছে
সিরিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের অনুগত অঞ্চলগুলোয় নৃশংসতা ও প্রতিশোধমূলক হত্যা অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া ও তারতুসে শত শত মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই দুই প্রদেশ আসাদ–সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে লুটপাট ও গণহারে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার উপকূলীয় নগরী বানিয়াসের পাশের শহরতলি হাই আল কুসুর আলাউইতদের এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, সেখানে সড়কে মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে আছে, স্তূপ হয়ে আছে এবং সড়ক রক্তে ভেসে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেখানে বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আলাউইত সম্প্রদায় শিয়াপন্থী ইসলামের একটি শাখা। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ আলাউইত। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ সুন্নি মুসলিম। আসাদ আলাউইত সম্প্রদায়ের ছিলেন।
গত শুক্রবার সেখানে লোকজন এমনকি বাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে ভয় পাচ্ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না, তবে যখনই ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছিল, তখন স্থানীয় লোকজন ফেসবুক পোস্টে প্রতিবেশীদের মৃত্যুর খবর জানতে পারছিলেন।
আয়মান ফারেস নামের এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, সম্প্রতি তিনি কারাদণ্ড ভোগ করে এসেছেন, এ কারণে বেঁচে গেছেন। ২০২৩ সালের আগস্টে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের অভিযোগ তুলে আসাদের সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন আয়মান। এর পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আসাদ–বিরোধী বাহিনী দেশটির কারাগারগুলো থেকে কারাবন্দীদের মুক্ত করে দেয়। আয়মানও তখন কারামুক্ত হন।
যে যোদ্ধারা হাই আল কুসুরের সড়কে অভিযান চালাচ্ছেন, তাঁরা আয়মানকে চিনতে পেরেছিলেন। তাই মৃত্যুর হাত থেকে তিনি বেঁচে গেছেন, কিন্তু লুটপাটের শিকার হয়েছেন। যোদ্ধারা তাঁর গাড়ি নিয়ে গেছেন এবং অন্যান্য বাড়িতেও অভিযান চলছে।
বিবিসির প্রতিবেদককে ফোনে আয়মান আরও বলেন, ‘তাঁরা অচেনা ছিলেন, আমি তাঁদের পরিচয় বা ভাষা বুঝতে পারিনি, তবে তাঁদের উজবেক অথবা চেচেন মনে হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন সিরিয়ানও ছিলেন, তবে তাঁরা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ নন। যাঁরা মানুষ হত্যা করছেন, তাঁদের দলে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।’
আয়মান বলেন, তিনি বাড়ির ভেতর বাসিন্দাদের হত্যা করতে দেখেছেন। দেখেছেন নারী ও শিশুরা রক্তে ভিজে আছে। কয়েকটি পরিবার প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির ছাদের দিকে দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়তে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রাণে রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন, ‘এটা ভয়ংকর।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস উপকূলীয় নগরী লাতাকিয়া, জাবলেহ ও বানিয়াসে ৭৪০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে। এর বাইরে নিরাপত্তা বাহিনী ও আসাদ বাহিনীর অবশিষ্টদের মধ্যে লড়াইয়ে আরও ৩০০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি স্বাধীনভাবে নিহতের সংখ্যা যাচাই করে দেখতে পারেনি।
আয়মান বলেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী বানিয়াস শহরে পৌঁছালে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। তাঁরা অন্যান্য বাহিনীকে শহর থেকে বের করে দিয়েছে এবং পরিবারগুলোকে নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছে।
আয়মানের মতো একই কথা বলেছেন বানিয়াসের আরেক বাসিন্দা আলী। তিনি বিবিসিকে তাঁর পুরো নাম প্রকাশ না করতে বলেছেন। আলী স্ত্রী ও ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে কুসুরে বসবাস করতেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
আলী বলেন, ‘তাঁরা আমাদের ভবনে এসেছিলেন। আমরা শুধু গুলির শব্দ শুনে ও প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনেই অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যখনই ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছিলাম, তখনই আমরা ফেসবুক পোস্টে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পারছিলাম। কিন্তু যখন তাঁরা আমাদের ভবনে এলেন, আমাদের মনে হয়েছিল আমরা শেষ।’
আরও পড়ুনসিরিয়ায় ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা, মরদেহ পড়ে আছে খোলা মাঠে১৪ ঘণ্টা আগেযাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের লুটপাট করাই মূল লক্ষ্য ছিল বলেও মনে হয়েছে আলীর। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘তাঁরা অর্থের খোঁজে ছিলেন। তাঁরা আমাদের প্রতিবেশীর দরজায় কড়া নেড়ে তাঁর গাড়ি, অর্থ, সব সোনা ও বাড়িতে আর যেসব মূল্যবান বস্তু ছিল, তা নিয়ে নেন। কিন্তু তাঁকে প্রাণে মারেননি।’
আলী ও তাঁর পরিবারকে তাঁর সুন্নি প্রতিবেশীরা সরিয়ে নিয়েছেন এবং আলীরা এখন তাঁদের সঙ্গেই আছেন। আলী বলেন, ‘আলাউইত, সুন্নি ও খ্রিষ্টান, আমরা বছরের পর বছর একসঙ্গে বসবাস করেছি। আমরা আগে কখনো এমন দেখিনি। হত্যাকাণ্ডের সময় সুন্নিরা আলাউইতদের রক্ষা করতে ছুটে আসেন এবং এখন শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি বাহিনী শহরে এসে গেছে।’
এ নৃশংসতার সূত্রপাত হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। আসাদের অনুগত ব্যক্তিরা যাঁরা অস্ত্র জমা দিতে রাজি হননি, তাঁরা লাতাকিয়া ও জাবলেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি ছোড়েন এবং তাঁদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন।
আসাদ বাহিনীর এক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ ডাল্লাহ সিরিয়ার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি দ্য ‘মিলিটারি কাউন্সিল ফর দ্য লিবারেশন অব সিরিয়া’ প্রতিষ্ঠা করছেন।
কোথাও কোথাও খবর পাওয়া যাচ্ছে, আসাদ বাহিনীর যেসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা অস্ত্র জমা দেননি, তাঁরা পাহাড়ে একজোট হয়ে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলছেন।
আরও পড়ুনসিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নিহত ১০০০০৯ মার্চ ২০২৫আয়মান বলেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এবারের নৃশংসতার জন্য ডাল্লাহ ও আসাদের অন্য কট্টর অনুসারীদের দায়ী করেছেন।
তবে অন্যরা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তিনি সিরিয়ার নিরাপত্তা, সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে বিলুপ্ত করেছেন। এতে যে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও সদস্য বেকার হয়ে পড়েছেন, তাঁদের কী হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা তাঁর নেই।
এসব বাহিনীর কিছু সদস্য, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যের আসাদের আমলে হত্যাকাণ্ড চালানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। নতুন সরকার কয়েক হাজার সরকারি কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করেছে।
সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। হাজার হাজার মানুষের আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। নতুন একটি বিদ্রোহের জন্য এটা খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।
আরও পড়ুনসিরিয়ায় আসাদের অনুসারীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ, ৭০ জনের বেশি নিহত০৭ মার্চ ২০২৫