তারাবি নামাজে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। তারাবি জামাতের সঙ্গে পড়া হয় এবং রমজান মাসের রাতে পড়া হয়।
সুতরাং কেউ যদি কিয়ামুল লাইলের সওয়াব পেতে চায়, তাহলে তার উচিত হবে জামাতের সঙ্গে তারাবি আদায় করা এবং ইমাম যত রাকাতই পড়ুন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার অনুসরণ করে যাওয়া। কেননা হাদিসে রয়েছে, যে-ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে নামাজ পড়ে এবং তার নামাজ শেষ করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকে, সেই ব্যক্তির জন্য সারা রাত্রি ‘কিয়াম’ করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস: ১২২৭)
অন্য হাদিসে আরও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। আবু যর (রা.
সুতরাং যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে নামাজ পড়ে এবং কিয়ামুল লাইলের সওয়াব পেতে চায়, তাকে অবশ্যই ইমাম যত রাকাত পড়ান, তার পুরোটাতেই অংশগ্রহণ করতে হবে—এ-ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। এ-হাদিস এটাও প্রমাণ করে—তারাবি নামাজের রাকাতের সংখ্যার ক্ষেত্রে ব্যক্তি-বিশেষের সীমা-আরোপ করা এবং ইমামের নামাজ সমাপ্তির পূর্বেই প্রস্থান করা বৈধ হলেও তা কিছুতেই উত্তম ও প্রশংসনীয় নয়। যারা এভাবে বিষয়টির ‘ইজতিহাদ’ (বিভিন্ন বিষয়ে ওলামাদের গবেষণাকে ইজতিহাদ বলে) করেন, তাদের ইজতিহাদ পূর্ণ এক রাত্রির সওয়াব বিনষ্ট করা ব্যতীত কোনও সুফল বয়ে আনবে না।
একদল আলেম মনে করেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নামাজির ওপর। সে যদি মনে করে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে, তাহলে তার জন্য ভালো হয় দীর্ঘ সময় ধরে দশ রাকাত তারাবি এবং ৩ রাকাত বিতর পড়া। কেননা, রাসুল (সা.) এভাবেই পড়েছেন। কিন্তু সে যদি টানা দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে, তাহলে উচিত ছোট ছোট করে বিশ রাকাত তারাবি পড়া। কারণ সাহাবায়ে কেরাম এভাবেও আমল করেছেন এবং বর্তমান মুসলিম সমাজেও এটা বেশ প্রচলিত। ইমাম আহমাদ (রহ.), ইমাম ইবনে হাজার (রহ.), ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-সহ বহু ইমামের দৃষ্টিভঙ্গি এমনটাই। (ফাতহুল বারি, ৪/২৯৮); ইমাম তাইমিয়া, মাজমুঊ ফাতাওয়া, ২৩/১১৩)
আরও পড়ুনখাবারে মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেয়০৬ মার্চ ২০২৫শায়েখ ইবনে উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে গিয়ে যদি মুসল্লি দেখে যে, ইমাম এগারো রাকাআতের বেশি পড়ছেন, তখন সে ইমামের অনুসরণ করবে নাকি কিয়াম থেকে ফিরে আসবে? তিনি বলেন, সুন্নত হলো ইমামের অনুসরণ করা। কেননা, যদি সে ইমামের নামাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ফিরে আসে, তবে তার ‘কিয়ামুল লাইল’র সওয়াব মিলবে না। সাহাবিগণ নামাজের মতো শরয়ি বিধানে ‘অতিরিক্ত বৃদ্ধি’ করার পরও তাদের ইমামের অনুসরণ করেছেন। ওসমান ইবনে আফফান (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.), আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এমনকি ওসমান (রা.)-এর প্রথম আট বছর এভাবে অতিবাহিত হলো যে, তারা সবাই হজের সময় মিনাতে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। কিন্তু এর পরে এসে ওসমান (রা.) চার রাকাত পড়া শুরু করেন। সাহাবিরা তার মতটি মানেন নি, তবুও তাকে অনুসরণ করে তারা চার রাকাত নামাজ পড়েন। যদি ইমামের অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই হয় সাহাবিদের প্রদর্শিত পথ, তবে আজকাল যে কতিপয় মানুষ ইমামের নামাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ‘এগারো রাকাতই শরয়ি হুকুম’—এ অজুহাতে সরে পড়ে, আমরা বলব, শরিয়তের দৃষ্টিতে ইমামের অনুসরণই অধিক ওয়াজিব। (ইবনে উসাইমিন, মাজমুঊ ফাতাওয়া, ১/১৯৪-১৯৬)
আরও পড়ুনযেভাবে ইস্তিগফার করা যায়০৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ন য় র সওয় ব
এছাড়াও পড়ুন:
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে ওয়াসা কর্মকর্তা
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব শহিদুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম নিজের লেখা একটি ছড়া তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। ছড়ার বিষয় ছিল রাজধানীর আলোচিত সেই ঈদ শোভাযাত্রার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে ফিরে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে। হোজ্জারূপী ওই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা হয়।
শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘লেখালেখি পুরোনো অভ্যাস। এর দু-একটি ফেসবুকে শেয়ারও করি। ঈদের পর একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমার লেখা কিনা? হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে, কেন লিখেছি জানতে চান তিনি। আমি স্যারকে বলি, অভ্যাস থেকে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু লেখালেখি করি। ছড়াটি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লিখিনি।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর পর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কী লেখা যাবে, আর যাবে না– তা উল্লেখ রয়েছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ করে লিখিনি। ছড়াতে অপরাধ কী হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেলে অফিস ছাড়ার সময় একটি অফিস আদেশ আমাকে দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’
ছড়া লেখায় কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে তা গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। অতীতে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের নিছক রসাত্মক ছড়াকে পুঁজি করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবী কী লিখতে পারবেন, কী পারবেন না, সে নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাঁর লেখা ছড়ায় সে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসা সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী প্রতিবেদন দেয়।
ছড়ায় যা আছে
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
পেয়ো নাকো লজ্জা
ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো
রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো
গাঁধা নাকি ঘোড়া সে
কি করে কে বলে যে
গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ
তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক
কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী
কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী
ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে
কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে
বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে
ঢাক ঢোলের তালে তালে
গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো
আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?
যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।
শহিদুলের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান সমকালকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার জন্য। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। ছড়াটিতে সরকারের সমালোচনা আছে বলে মনে হয়নি। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যে অবয়বে তুলে ধরা হয়েছে, তা জামায়াতের এক নেতার প্রতিকৃতি মনে হতে পারে।’
একসময় আবু করিম নামে এক কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক লেখা লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে আবু করিমকে চাকরিচ্যুত করেন।
মোহন রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুলের এ ছড়ার মধ্যে এমন কিছু আছে, যার জন্য তাঁর পেশাগত জীবনে কোনো শাস্তি আরোপ হতে পারে। বরং শাস্তি দিলে তাঁর সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে।’