রোজা পালনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে মুমিনের আত্মিক উন্নতি নিশ্চিত করা। আর মানুষের শরীরের সঙ্গে আত্মার গভীর সংযোগ রয়েছে। এজন্য আল্লাহ আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন রোজাকে, যার মূলকথা হলো পানাহার ও ভোগ সম্ভার ত্যাগ করা। মানুষের এই ভোগসম্ভার ত্যাগ করার ভেতর মুমিনের আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত উপকারও রয়েছে। তাই রমজানে পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। 

রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.

) এর খাদ্যাভাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতেন। যেমন তিনি ইফতারে খেজুর ও পানীয় গ্রহণ করতেন। কখনো কখনো খেজুরের সঙ্গে ক্ষিরাই মিশিয়ে খেতেন।

খাবার কেন পরিমিত হতে হবে: দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে মানুষ। আত্মার সম্পর্ক ঊর্ধ্ব জগতের সঙ্গে এবং তা ফেরেশতার গুণাবলী ধারণ করে। আর দেহের সম্পর্ক নশ্বর জগতের সঙ্গে এবং তা পশুর বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। একইভাবে খাবার প্রাকৃতিক নিয়মে নশ্বর পৃথিবীতে জন্ম নেয়। তাই খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মানুষের ভেতর পশুর বৈশিষ্ট্য প্রবল হয়। আর পরিমিত খাবার গ্রহণ করলে মানুষের ভেতর ফেরেশতার গুণাবলী বিকশিত হয়। কেননা ফেরেশতারা পানাহার করে না। রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আত্মাকে উপোস রেখে পশুত্ব বিলোপ করা এবং আত্মিক উন্নয়ন ঘটানো।

রমজান স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাস: রমজান শুধু ইবাদত-বন্দেগির মাস নয়, বরং এটা স্বাস্থ্য সচেতনা তৈরিরও মাস। কেননা রমজান মানুষকে খাবার গ্রহণে সংযমের শিক্ষা দেয়। আর পরিমিত খাবার গ্রহণ শারীরিক সুস্থতার অন্যতম মাধ্যম। ইসলামের প্রাথমিক যুগে একজন চিকিৎসক মদিনায় এসেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন মদিনায় যেহেতু খুব বেশি চিকিৎসক নেই, তাই তিনি হয়ত অনেক বেশি উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন অবস্থানের পরও কোনো রোগী এলো না। তখন তিনি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে কারণ জানতে চাইলেন। তখন মহানবী (সা.) বললেন, “মদিনার অধিবাসীরা ভালো মতো ক্ষুধা না লাগলে খায় না এবং খাওয়ার সময় উদরপূর্তি করে খায় না। সামান্য ক্ষুধা বাকি থাকতে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এজন্য তাদের রোগ কম হয়।” খাদ্যগ্রহণে এই পরিমিতি বোধই সুস্থতার সর্বোত্তম পদ্ধতি। 

সাহরিতে যা খাবেন: সাহরির রোজাদার যা খায় সেটা তার সারা দিনের ক্ষুধা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। তাই সাহরিতে এমন খাবার প্রস্তুত করা প্রয়োজন যা ক্ষুধা ও পুষ্টি উভয় প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো,
১. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করা। যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এমন খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলে, চাল, গম, যব, আলু, মিষ্টি আলু, মটর, গাজর, দুধ, কলা ইত্যাদি।
২. প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করা। এটা শারীরিক দুর্বলতা রোধ করে। এমন খাবারের মধ্যে আছে ডিম, দুধ, দই, মুরগি, ডাল ইত্যাদি।

৩. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। ফাইবার যুক্ত খাবার হজমের পক্ষে ভালো। যার মধ্যে ফল, সবজি ও ড্রাইফ্রুট জাতীয় খাবার।
৪. পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার খাবার গ্রহণ করা। যেমন শরীরে ডি-হাইড্রেশন তৈরি না হয়।
৫. চা ও কফি না খাওয়া। কেননা এগুলো শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরি করে। 

ইতফারিতে যা খাবেন: ইফতারের সময় এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যা সহজ পাচ্য ও সহজে শক্তি যোগায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসদের পরামর্শ হলো।
১. খেজুর ও পানি: খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। পানি ও খেজুর শরীরের অবসাদ দূর করে।
২. শরবত ও পানীয়: লেবুর শরবত, দুধ ও দুধের তৈরি শরবত, ফলের রস, রুহ আফজার মতো প্রাকৃতিক নির্যাসে তৈরি শরবত।
৩. প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। যেমন মুরগি, ডাল, সবজি, ফল ও ড্রাইফুড।
৪. চর্বিমুক্ত খাবার গ্রহণ করা। যেমন ছোলা, দই ইত্যাদি।
৫. ইফতারে অধিক তেলযুক্ত খাবার ও ভাজা-পোড়া পরিহার করা আবশ্যক। কেননা এগুলো পাকস্থলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৬. ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত বার বার পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। যেন শরীরে পানি স্বল্পতা না থাকে।

অসুস্থ ব্যক্তিরা সতর্ক থাকবেন: যাদের ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্ত চাপের মতো রোগ আছে। অথবা অন্য কোনো সমস্যা আছে নিজ নিজ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাবার গ্রহণ করেন। চিকিৎসকের দেওয়া রুটিন মেনে চলবেন।

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।

ঢাকা/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এমন খ ব র চ ক ৎসক র পর ম পর ম ত রমজ ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।

পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।

অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’

সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।

নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।

জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসন

পদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ