ঢাকার বনানীতে লরির ধাক্কায় দুই গার্মেন্টস কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন তাদের সহকর্মীরা। 

সোমবার (১০ মার্চ) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোরে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় লরির ধাক্কায় দুই গার্মেন্টস কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে চেয়ারম্যানবাড়ীতে দুই পাশের সড়ক অবরোধ করা হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গার্মেন্টস কর্মীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানীতে নামার র‍্যাম্পও বন্ধ করে রেখেছেন। ফলে বনানীগামী যানবাহনগুলো এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামতে পারছে না। এতে পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল সারওয়ার রাইজিংবিডিকে জানান, তাৎক্ষণিক নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

ঢাকা/মাকসুদ/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

জমি বিক্রির ৩৮ বছর পর বিড়ম্বনায় শতবর্ষী রইচ, বিচারের আশায় ঘুরছেন

রইচ উদ্দিন ও সন্তেষ প্রামানিক ৬৬৩ নম্বর দাগে ২৭ শতক ফসলি জমি বিক্রি করেছিলেন। ক্রেতার বংশধররাও সেই দাগের জমি ভোগদখলে রেখেছিলেন। ৩৮ বছর পর সেই জমির খাজনা খারিজ করতে গিয়ে জানা যায়, দলিল করার সময় ভুলবশত দাগ নম্বর ৬৬৩ এর স্থলে ৬৭৭ লেখা হয়েছিল। ৬৭৭ নম্বর দাগের জমি রইচ উদ্দিনের বসতভিটা।

জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ক্রেতার বংশধররা দলিলে থাকা ওই ৬৭৭ নম্বর দাগের জমি দাবি করছেন। এ নিয়ে জমির মালিক রইচ উদ্দিন আদালতে মামলা করে ও দলিলে দাগ নম্বর সংশোধন করে ডিক্রিও পেয়েছেন। কিন্তু, ক্রেতাপক্ষ তা না মেনে উল্টো রইচ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখন বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শতবর্ষী রইচ উদ্দিন ও তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী রইচ উদ্দিন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের জবেরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম রঙমিস্ত্রি। ক্রেতার বংশধররা হলেন একই গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন, আব্দুল আলিম ও মনিরুল ইসলাম। তারা জমির ক্রেতা আফসার শেখের নাতি।

জমির দলিল ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রইচ উদ্দিন ও সন্তেষ প্রামানিক ১২/০১/১৯৭৬ তারিখে উথুলী মৌজার ৬৬৩ নম্বর দাগের ২৭ শতক ফসলি জমি বিক্রি করেন একই গ্রামের আফসার শেখ ও আছিয়া বেগমের কাছে। জমি রেজিস্ট্রির সময় তৎকালীন দলিল লেখক ভুলবশত বিক্রি করা জমির দাগ নম্বর ৬৬৩ এর স্থলে ৬৭৭ উল্লেখ করেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লেখাপাড়া না জানায় বিষয়টি তখন কেউই বুঝতে পারেননি। ৩৮ বছর ধরে ৬৬৩ নম্বর দাগের ফসলি জমি ভোগদখলের পর ২০১৪ সালে ওই জমি খাজনা খারিজ করতে গিয়ে আফসার শেখ জানতে পারেন, দলিলে ৬৬৩ নম্বর দাগের স্থলে দাগ নম্বর ৬৭৭ উল্লেখ আছে। ততদিনে বাড়ির জমির দামও বেড়েছে কয়েক গুণ।

তখন চাটমোহর এসি ল্যান্ডের কাছে মিসকেস করেন আফসার শেখ। সেখানে তিনি দাবি করেন, তারা জমি কিনেছেন ৬৭৭ নম্বর দাগে। দলিলে সেটা উল্লেখ আছে। তাই, ওই দাগ নম্বরের কেনা জমি তাদের নামে নামজারি করে দেওয়া হোক। ওই মিসকেসের নোটিশ পেয়ে রইচ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল মিসকেসের বাদীদের বলেন, “দলিলে দাগ নম্বর ভুল হয়েছে, তোমরা দলিল সংশোধন করে নাও। আমি করে দিচ্ছি। তোমরা চাইলেও ৬৭৭ নম্বর দাগে ২৭ শতক জমি পাবে না। কারণ, এই দাগে জমি মোট ৪১ শতক। তার মধ্যে রইচ উদ্দিনের জমি সোয়া ১৩ শতক। বাকি জমি অন্য ওয়ারিশদের।” রইচ উদ্দিনের নামের জমি খাজনা খারিজ করা ৩০/১১/২০০৮ তারিখে। যার হিসাব নম্বর ৭৯৯। নামজারি কেস নম্বর ১৪৯০/০৮-০৯।

রইচ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, “তারা (ক্রেতাপক্ষ) সে প্রস্তাব না মানায় মিসকেসের নোটিশ নিয়ে চাটমোহর পৌর ভূমি অফিসের তৎকালীন নায়েব কাশেম আলীর কাছে যাই। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমার কাগজপত্র না দেখে, আমার কোনো কথা না শুনে তাদের পক্ষে কথা বলেন এবং আমার বাবা রইচ উদ্দিনের নামজারি বাতিল করেন।”

এরপর রইচ উদ্দিন ও সন্তেষ প্রামানিক ০২/০১/২০১৪ তারিখে পাবনার আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ২৮/১১/২০১৯ তারিখে মামলায় দোতরফা সূত্রে ডিক্রি পান তারা। সেই ডিক্রিতে আদালত আদেশ দেন, বিক্রিত তফসিল বর্ণিত ১২/০১/১৯৭৬ তারিখে ১৬৪৬ নম্বর দলিলে ভুল দাগ নম্বর ৬৭৭ কর্তন করে তদস্থলে ৬৬৩ নম্বর দাগ সংশোধন করা হলো। অত্র আদেশের অনুলিপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্টার বরাবর প্রেরণ করা হলো।

তারপর ২১/১০/২০২৪ তারিখে সংশোধিত দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে এসি-ল্যান্ড অফিসে গিয়ে মিসকেস করেন রইচ উদ্দিন ও তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম। বিবাদী করেন আফসার শেখের নাতি আমির হোসেন, আব্দুল আলিম ও মনিরুল ইসলামকে। মিসকেস করার পর চাটমোহর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোস্তফা শামীম সরেজমিন তদন্ত করে এসি-ল্যান্ডের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন ২৪/০২/২০২৫ তারিখে। সেই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উভয় পক্ষের শুনানি ও দলিল যাচাই করে ৪৯৯৬/২০১৬-১৭ নম্বর নামজারিবলে খোলা হিসাব নম্বর ১৩৭৮ থেকে নালিশি আরএস ৮৬৪ দাগে (যার এসএ দাগ নম্বর ৬৭৭) ০ দশমিক ২৭ একর জমি কর্তন করে মূল খতিয়ানভুক্ত করা যেতে পারে।

রইচ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, “গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে চাটমোহর এসি-ল্যান্ড অফিসে উভয় পক্ষের শুনানি হয়। কিন্তু, এসি-ল্যান্ড সাহেব আমাদের কোনো কাগজপত্র না দেখে বলেন, বিবাদী পক্ষ আদালতে আপিল করেছেন। আমার কিছু করার নেই।’ তিনি মিসকেস বাতিল করে দেন।

তিনি বলেন, “বিবাদী আমির গং আমাদের দলিল সংশোধনের ডিক্রির বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছে। তারা দলিলে ৬৬৩ নম্বর দাগ না দিয়ে ৬৭৭ নম্বর দাগ দাবি করেছে। ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদে তিনবার শালিসে বসার জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও আমির হোসেন গং হাজির হয়নি এবং নোটিশেও স্বাক্ষর করেনি।”

তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মো. আজিজুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬৭৭ ও ৮৬৪ নম্বর দাগে রইচ উদ্দিনের বসতঘর আছে। ৬৭৭ নম্বর দাগ ভুলক্রমে আফসার শেখের দলিলে ওঠে। ৬৬৩ নম্বর দাগের জমি ৬০ শতক আফসার শেখ ভোগদখল করছেন।

আশরাফুল ইসলাম আরো বলেন, “আদালত থেকে ডিক্রি পাওয়ার ইনফরশেন স্লিপ ও ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র এসি-ল্যান্ড স্যারকে দিলেও তিনি গ্রহণ করেননি। তারা আমার কাগজপত্র না দেখে আদালতের আদেশ না মেনে আদালত অবমাননা করেছেন বলে মনে করি। আমি ন্যায়বিচার চাই। আমাদের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ, দলিল-কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে আমাদের? আমার বাবার একশত বছরের বেশি। তিনিও খুব ভেঙে পড়েছেন। শুধু চোখের পানি ফেলছেন। বিবাদী আমির গং এলাকায় প্রভাবশালী, টাকাওয়ালা মানুষ। তারা চ্যালেঞ্জ করেছে, যেকোনো মূল্যে ৬৭৭ দাগের জমি নেবে।”

রইচ উদ্দিন বলেন, “আমি তো ৬৭৭ দাগে জমি বিক্রি করি নাই। বিক্রি করছি ৬৬৩ দাগে। সেখানেই তারা ৩৮ বছর ধরে ভোগদখল করে আইসে। এহন আমার বাড়ির জমির দাগ দাবি করতিছে। ওই সময় সবাই মুর্খ মানুষ ছিলেম। কেউ লেহাপড়া জানতেম না। মুহুরি ভুল কইরে দলিলে ৬৭৭ নম্বর দাগ তুইলে দিছে। সিডা আবার আমরা আদালত থেকে সংশোধানও করে লিছি। তাহলি কেন তারা মানতিছে না। এতকিছুর পরও কি ন্যায়বিচার পাবো লায়?’

ক্রেতাপক্ষের আমির হোসেন বলেন, “তারা জাল দলিল করে নিয়ে জমি খারিজ করেছে। তারা সব দাগেই জমি কেনাবেচা করেছে। ২০১৪ সালে আমার দাদা আফসার শেখ যখন আমাদের নামে জমি লিখে দেন, তখন জমি খারিজ করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। তাদের ওয়ারিশান জমি নয়, কেনা সম্পত্তি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শালিসে বসার জন্য তাদের বলা হলেও তারা বসেনি। আমরা ডিক্রির বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছি। এখন আইনের মাধ্যমে যেটা হয়, হবে। এখন এ নিয়ে বেশি কথা বলে লাভ নাই।”

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল বলেন, “বাদী বা বিবাদী পক্ষ কেউ যদি আমার রায়ে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তারা আমার রায়ের কপি পাওয়ার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আপিল করতে পারবেন। তখন যদি এডিসি স্যার প্রয়োজনে আমার কাছে নথি তলব করেন, তখন আমার রায়ের সকল নথি তার কাছে সরবরাহ করব।”

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরো বলেন, “কোনো মামলার বিরুদ্ধে যদি আপিল হয়, তাহলে মূল মামলা চলমান থাকে। যদি তাদের (রইচ উদ্দিন গং) মামলার ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করে বিবাদী পক্ষ (আমির গং), তাহলে ওই মামলা এখন চলমান বুঝতে হবে। তাই, সেটার রায় না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। কে ভুল, কে সঠিক, তা নির্ধারণ করবেন আদালত।”

ঢাকা/শাহীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ