সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের (রজ্জুপথ) সংরক্ষিত বাংকার এলাকার যে চিত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তাতে করে কারও কাছে স্বাধীন–সার্বভৌম অঞ্চল বলে বিভ্রমের সৃষ্টি হতে পারে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ৩৫৯ একরের এই বাংকার থেকে নির্বিচার পাথর লুট করে চলেছে।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যে শিথিলতা তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বিকারতা। ফলে সাত মাসে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে। নির্বিচার লুটের কারণে বাংকারটি শিগগিরই পাথরশূন্য হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের বরাতে, আগে মানুষ আড়ালে-আবডালে পাথর তুলত। ৫ আগস্ট বাংকারের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) আবাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ভাঙচুর করা হয়। এর পর থেকে প্রকাশ্যে পাথর তোলা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযান চললে লুটপাটকারীরা সটকে পড়ে। অভিযানকারীরা চলে গেলে আবার লুটপাট শুরু হয়। দিনে পাথর উত্তোলন কম হলেও বিকেলের পর থেকে সারা রাত অবাধে চলে।
পাথর তুলে শ্রমিকেরা বারকি নৌকার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। নৌকার মালিকেরা ক্রাশার মিলমালিকদের কাছে তা বিক্রি করছেন। সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে করে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।
ফলে পাথর উত্তোলন, পাথর বিক্রি, পাথর ভাঙা ও পাথর পরিবহন—সব কাজ এতটাই পদ্ধতিগতভাবে চলছে যে পুরো বিষয়টা যে অবৈধ, সেটা কে বলবে? উপজেলা প্রশাসনের ভাষ্য হচ্ছে, নিয়মিত অভিযান চালিয়েও লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না। অভিযান চালাতে গেলে লুটপাটকারীরা সরে যায়। চলে এলে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করে দেয়।
বোঝাই যাচ্ছে, অতি প্রভাবশালী গোষ্ঠী এর পেছনে রয়েছে। ফলে শুধু শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এটা বন্ধ করা যাবে না। শ্রমিকদের কাছ থেকে পাথর যাঁরা কিনছেন, যাঁরা ভাঙছেন এবং যাঁরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাথর পাঠাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এই লুট কি আদৌ বন্ধ করা যাবে?
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বাংকারটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরএনবির সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের আবাসনও ভাঙচুর করা হয়েছিল। ফলে তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। দিনের বেলা তাঁরা পাহারায় থাকলেও সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পুরো এলাকা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে প্রকাশ্যে পাথর লুট হবে আর প্রশাসন কেন চোখ বন্ধ করে রাখবে? ভোলাগঞ্জের সংরক্ষিত বাংকার এলাকা থেকে যেকোনো মূল্যে পাথর লুট বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, অজুহাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় গরুসহ সিলেটে কোটি টাকার পণ্য উদ্ধার
সিলেট সীমান্ত থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় আরেকটি বড় ধরনের চোরাচালানের পণ্য উদ্ধার করেছে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলার বাংলাবাজার ও সিলেট জেলার বিছনাকান্দি, উৎমা লবিয়া, কারাইরাগ, সোনালীচেলা, সংগ্রাম, তামাবিল ও প্রতাপপুর সীমান্ত এলাকা থেকে এই চালান উদ্ধার করা হয়। ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ১৭টি গরুও রয়েছে। উদ্ধার হওয়া পণ্যের বাজারমূল্য ৯৫ লাখ টাকা।
বিজিবি জানিয়েছে, ভারতীয় পণ্যের মধ্যে চিনি, সাবান, পাথর, মাল্টা, আঙ্গুর, নারিকেল, চকলেট, ফুচকা, শীতের কম্বল, সুপারি, সালফার, মদ ও ইনজেকশন রয়েছে। এছাড়াও ওই সময় বাংলাদেশ হতে পাচারকালে রসুন ও শিং মাছ উদ্ধার করে বিজিবি।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল ৪৮ বিজিবি সংগ্রাম, দমদমিয়া, লবিয়া, কালাইরাগ, তামাবিল, বাংলাবাজার, শ্রীপুর ও বিছনাকান্দি সীমান্ত থেকে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার চোরাচালানের পণ্য উদ্ধার করা হয়।