প্রায় চার দশক আগে বাংলাদেশে বিয়ে হয় ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার মেয়ে মহিলা বেগমের (৫৭)। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আগে সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় স্বজনদের দেখাসাক্ষাৎ। এরপর পাসপোর্ট-ভিসা করে কয়েকবার বাবা-মায়ের কাছে গেছেন। সম্প্রতি কিছুদিন ধরে ভিসা না পাওয়ায় বাবা-মায়ের সাক্ষাৎ পাচ্ছিলেন না।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের শূন্যরেখায় স্বামী ও স্বজনদের নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মহিলা বেগম। সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আবেগঘন ক্যাপশন দিয়ে সেই ভিডিও শেয়ার করছেন। শূন্যরেখায় শতবর্ষী বাবা ও মেয়ের পরস্পরকে ছুঁয়ে দেখার ভালোবাসাময় দৃশ্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

১ মার্চ স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে মুঠোফোনে কথা বলে শূন্যরেখায় বাবা-মেয়ের হৃদয়স্পর্শী সাক্ষাৎ ঘটে। এতে সহায়তা করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। এ সময় মহিলা বেগমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী নজমুল হকসহ (৭৫) স্বজনেরা। ভারত থেকে এসেছিলেন তাঁর বাবা সপিজ উদ্দিন (১০৭), মা অফিলা খাতুনসহ (৯০) স্বজনেরা।

নজমুল হক ও মহিলা বেগম দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া এলাকায়। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মহিলা বেগমের বাবার বাড়ি ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার শোলমারি এলাকায়। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মহিলা বেগম তৃতীয়। অন্য ভাইবোনদের ভারতে বিয়ে হলেও প্রায় ৪০ বছর আগে বাংলাদেশে বিয়ে হয় তাঁর।

ওই দম্পতি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নজমুল হকের আগে আরও চারজন স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের চার ছেলেমেয়ে আছে। প্রায় ৪০ বছর আগে পঞ্চগড় সদরের জগদল-হটরাপাড়া এলাকায় ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন মহিলা বেগম। তখন অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের প্রস্তাবের মাধ্যমে মহিলা বেগমকে বিয়ে করেন নজমুল হক। বিয়ের পর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়ি-বাবার বাড়িতে যাতায়াত করতেন তাঁরা। পরে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পাসপোর্ট–ভিসা করে দুবার বাবার বাড়িতে গেছেন মহিলা বেগম। সর্বশেষ আড়াই বছর আগে ভারতে গেলেও এরপর ভিসা না পাওয়ায় মা–বাবাকে দেখার ইচ্ছা থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিজিবির সহায়তা চান। পরে সীমান্তের শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের জয়েন্ট রিট্রিট প্যারেডের সময় দুই পরিবারের সাক্ষাৎ হয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে দুই পাশ থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বাবা ও মেয়ে, সঙ্গে অন্য স্বজনেরা। কাছে গিয়ে বাবা-মেয়ে প্রথমে হাতে হাত রেখে স্পর্শ করার পর শতবর্ষী বাবা মেয়েকে বুকে টেনে নেন। এ সময় মহিলা বেগমের মাসহ অন্যদের কান্না করতে দেখা যায়।

মহিলা বেগমের স্বামী নজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী মা–বাবাকে দেখার জন্য ছটফট করছিল। আমরা দুজন পাসপোর্ট করলেও ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে এভাবে দেখা করেছি। সেখানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় পেয়েছি। পরে কে যেন ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিছে।’

মহিলা বেগম বলেন, অনেক দিনে ধরে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে ভারত। মা–বাবাকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। ওই দিন মা–বাবাকে এভাবে সীমান্তে দেখে কলিজায় আগুন ধরে গেছে। বয়স্ক মা–বাবাকে এভাবে অল্প সময়ের জন্য দেখে কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে। কবে ভিসা পাবেন আর বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে একটু সেবাযত্ন করতে পারবেন, জানেন না।

পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শূন্যরেখায় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে জয়েন্ট রিট্রিট প্যারেড হয়। ওই দুটি পরিবার সাক্ষাতের জন্য আগেই মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছিল। পরে তাঁরা বিজিবির সহায়তা চাইলে প্যারেডের পর তাঁদের দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়। বিএসএফের পক্ষ থেকেও এতে সম্মতি দিয়ে সহায়তা করা হয়। বাবা-মেয়ের মধ্যে এমন ভালোবাসাময় দৃশ্য সত্যি তাঁদের অনেক ভালো লেগেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসএফ র ব গম র

এছাড়াও পড়ুন:

চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়: মাঠে বিরাট-আনুশকার আনন্দঘন মুহূর্ত

নিউ জিল‌্যান্ডকে হারিয়ে ভারতের চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতার পর রাতের দুবাই আরো বেশি ঝলমলে হয়ে উঠেছিল। জয়ের পরই ক্রিকেটার স্বামী বিরাট কোহলির সঙ্গে উদযাপনে মেতে ওঠেন বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা।

এ ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠেই উপস্থিত ছিলেন আনুশকা শর্মা। পরেছিলেন ডেনিম শর্টস আর শার্ট। চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে খেলা দেখতে দেখা যায় তাকে। জয়ের পরই বদলে যায় সব দৃশ্যপট। গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে যান এই অভিনেত্রী।

গ্যালারির সিঁড়ি বেয়ে যখন আনুশকা মাঠের দিকে নামছেন, তা দেখতে পান বিরাট কোহলি। দ্রুত মাঠ থেকে মধ্য সিঁড়িতে ওঠে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর দুজনে মাঠে নেমে যান।

আরো পড়ুন:

রোহিত ম্যাচসেরা, রাচিন সিরিজ সেরা

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ভারত

অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আনুশকা-কোহলি পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কখনো বিরাটের চুল ঠিক করে দিতে দেখা যায় যত্নবান স্ত্রী আনুশকাকে। এমন বেশ কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন দর্শকরা; যা এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।

দীর্ঘদিন চুটিয়ে প্রেম করেন বিরাট-আনুশকা। কিন্তু মিয়া-বিবি কেউ-ই মুখ খুলছিলেন না। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন এই যুগল।

২০২০ সালের আগস্টে আনুশকার প্রথম সন্তানের মা হতে যাওয়ার খবর জানা যায়। এরপর বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বেবি বাম্পের ছবি পোস্ট করেন এই অভিনেত্রী। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি কন্যা সন্তানের মা হন আনুশকা।

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন আনুশকা শর্মা। এরপর থেকে স্বামী-সন্তান নিয়েই বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী। গত কয়েক বছরে তার অভিনীত কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়: মাঠে বিরাট-আনুশকার আনন্দঘন মুহূর্ত
  • ‘আমার বাপটার লাশটা আইনা দেন, আমি নিজের হাতে গোসল করামু’
  • বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, কড়া প্রতিবাদ বিজিবির 
  • ভারতীয় খাসিয়াদের হামলায় নিহত যুবকের লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
  • পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত, পতাকা বৈঠক
  • পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু
  • পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
  • ভারতীয় খাসিয়াদের হামলায় বাংলাদেশি যুবক নিহত
  • ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে চোরাচালান দ্বন্দ্ব, নিহত বাংলাদেশি যুবক