এলাকাটির নাম আগে ছিল ‘বাগ-ই-মুসা খাঁ’। স্থানটি অনেকেরই কমবেশি দেখা, জানা। তবে এই নামে সাধারণত কেউ একে চেনেন না। এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকা। বাংলার স্বাধীন শাসক বারো ভূঁইয়ার প্রধান মসনদ-ই আলা ঈসা খানের পুত্র মুসা খান এ এলাকায় একটি মনোরম বাগিচা তৈরি করেছিলেন।

হাকিম হাবিবুর রহমান তাঁর ‘আসুদগান-ই ঢাকা’ বইতে উল্লেখ করেছেন, মুসা খানের নামানুসারেই এলাকাটির ওই নামকরণ করা হয়েছিল। দেওয়ান মুসা খানের বাগানটি নেই। তবে তাঁর কবর আছে এখানেই। আর তাঁর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট ‘মুসা খান মসজিদ’।

মুসা খান মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকজুড়ে আছে অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব বিভাগ, শহীদুল্লাহ হলসহ বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যালয়। সামনে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে নাজিমুদ্দিন (একদা এর নাম ছিল মুসা খান সড়ক) রোডের দুই পাশ দিয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের দোতলা বাসগুলো। উপরন্তু এই দিকটিতে ফুটপাতের পর থেকে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। সামনে দিয়ে যাতায়াতও করা যায় না। মসজিদটি সহজে চোখেও পড়ে না।

মুসা খানের মসজিদের কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। সে কারণে সুনির্দিষ্ট করে এর নির্মাণকাল জানা যায় না। মসজিদটির নাম মুসা খান মসজিদ হলেও তিনি এর নির্মাতা নন বলেই অধিকাংশ ঐতিহাসিকের অনুমান।

উপেক্ষায়–অযত্নে মুসা খানের মসজিদ এখন মলিন বিবর্ণ। বহু বছর আগে এর বুরুজ আর সরু মিনারগুলো ছাই রং ও দেয়ালে ফিকে হলুদ রং করা হয়েছিল। তা রোদে–বৃষ্টিতে বিবর্ণ। ময়লা, ছত্রাক জন্মেছে স্থানে স্থানে। মসজিদের ভেতরের দৃশ্যেও কোনো ভিন্নতা নেই। হয়তো একই সময় ভেতরের দেয়ালে সাদা রং করা হয়েছিল। তা এখন কালচে হয়ে আছে। গম্বুজের ভেতরে, মিনারে নিচের দিকের কলসগুলো থেকে ঝরে পড়ছে আস্তরণ। মেঝেতে নামাজিদের জন্য যে মাদুর পাতা আছে, তার অবস্থাও তথৈবচ।

মসজিদে নামাজ হয় নিয়মিতই। তবে আজান দেওয়ার মুয়াজ্জিন নেই। রক্ষণাবেক্ষণের খাদেম নেই। শনিবার দুপুরে মসজিদে গিয়ে দেখা গেল এক তরুণ কোরআন তিলাওয়াতে মগ্ন। খানিক পরেই জোহরের ওয়াক্ত হলে তিনিই উঠে গিয়ে মাইকের সুইচ চালু করে আজান দিলেন।

মুসা খান মসজিদের ভেতরের একাংশ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ ন মসজ দ মসজ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী এবার

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩০ হাজার ৪৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসবে। এ বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৫ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।

সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৮ ছাত্রী। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী এ বছর ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ ছাত্রী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১ লাখ। সংখ্যায় তা ৯৫ হাজার ২২২ জন। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ এবং ২০২১ সালে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো বছরই রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে না। এটাকে ঝরে পড়াও বলা যায় না। সাধারণত কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবনে ফিরে না এলে তাকে ঝরে পড়া বলে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে এক বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে পরের বছর অংশ নেয়।

রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস সমকালকে বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনও হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম বা বেশি বছরভেদে হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ মনে করেন, এখনও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি। উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়ে ছিল। উপবৃত্তির পরিমাণটা এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।

এবার প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকাল হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে।’

কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ

ঢাকা মহানগরী এলাকায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ