রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিকল্প নেই। প্রতিদিন হাজারো ভারী যানবাহনের আসা-যাওয়া এই পথে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের শৃঙ্খলা এক রকম ভেঙে পড়েছে। হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে শিথিলতার কারণে দিনদিন নাজুক হয়ে উঠেছে এ সড়কের পরিস্থিতি। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। চালকেরা কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রী নিয়ে ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করেন। 
গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কটি এসব অটোরিকশার দখলে চলে গেছে বললেও ভুল হবে না। সরেজমিন শুক্রবার বিকেলে কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে অটোরিকশার জট দেখা যায়। কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রার ত্রিমোড় এলাকার বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে এলাকার দিকে ছেড়ে যেতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রা নামে পরিচিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কয়েকজন বাসযাত্রী ও পথচারী জানায়, হাইওয়ে পুলিশ এসব যানবাহন আটকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। কিন্তু আবারও মহাসড়কে চলাচল করছে। কয়েক মাসে এসব যানবাহন চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আনুমানিক অর্ধশতাধিক মানুষ।
নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই চলাচল করছে অবৈধ অটোরিকশাগুলো। কিন্তু পুলিশকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সফিপুর বাজার পয়েন্টের ফ্লাইওভারের নিচে শুক্রবার দেখা যায় অটোরিকশা নিয়ে বসে আছেন শতাধিক চালক। কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াতের জন্য চালকরা যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। এ পয়েন্টেই ইউটার্ন। কিন্তু অটোরিকশার জন্য ভারী 
যানবাহনকে মোড় ঘোরাতে গিয়ে যানজটে পড়তে হয়। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘কী করব ভাই? এসব অবৈধ অটোরিকশা মহাসড়ক দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু চালকেরা মানছেন না। বিশেষ করে সরকার পতনের পর থেকে এরা বেপরোয়া 
হয়ে পড়েছে। তাদের কারণে মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে।’
এ মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার দীর্ঘ যানজটের কারণও এসব অটরোকিশা। শুক্রবার বিকেলে পুলিশের দুই সদস্য চালকদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বলছিলেন। কিন্তু বারবার তাদের নির্দেশনা অমান্য করে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের। মৌচাক বাজার এলাকায়ও একই চিত্র। এখানে হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য পাওয়া যায়নি। ফলে চালকেরা নিজের খুশিমতো যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। 
মো.

রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার নামে দুই চালক বলেন, পেটের দায়েই অটোরিকশা নিয়ে মহাসড়কে এসেছেন। এখানে চালাতে পারলে আয় একটু বেশি হয়। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে তেমন যাত্রী মেলে না। 
সোহেল রানা নামে আরেক চালক বলেন, কয়েক দিন আগেও তাঁর অটোরিকশা ধরে থানায় নিয়ে যেত নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ। মামলা তুলতে ২ হাজার ৬০০ টাকা গুনতে হতো। পরে অটোরিকশা ছাড়িয়ে আনতেন। তবে পুলিশ কোনো কাগজ বা রসিদ দিত না।
সফিপুর বাজারের ব্যবসায়ী শিপলু মিয়া ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার মুদি দোকানি মহিদুল ইসলাম বলেন, নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ কয়েক মাস ধরে সড়কের পাশ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তুলে দিয়েছেন। মহাসড়কের যানজট নিরসনের কারণ দেখিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। অথচ মহাসড়কে যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ অটোরিকশা। এ বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নীরব। 
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি রইছ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে বোর্ডঘর এলাকা পর্যন্ত চলাচলকারী অবৈধ অটোরিকশা চালকের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে আর অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না। কেউ মহাসড়কে উঠলে চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র ব যবস সদস য য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন

ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।

বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ