বকশীগঞ্জে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ বানানোর কথা বলা দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুর রহমান চন্দ্রাবাজ শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামে। গতকাল রোববার সকালে অর্ধশত ভুক্তভোগী স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ও অভিযুক্ত হামিদুর রহমানের বিচার দাবি করেন।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান। ২০১৯ সালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছে থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। পরে তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র ও সনদপত্রও দেন। সনদপত্রে লেখা ‘ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’। যার ওপরে লেখা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা কর্তৃক নিবন্ধন নম্বর ২৩৯/১৭। কিন্তু এসব সনদ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন এগুলো ভুয়া। এর পর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও চতুর হামিদুর টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি মামলা হামলার ভয়ভীতি দেখান তাদের। এ ঘটনায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সময় উপস্থিত হননি তিনি।
কয়েকদিন আগে নাশকতা মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জামালপুর কারাগারে রয়েছেন আসামি হামিদুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে।
কথা হয় প্রতারণার শিকার মধ্যপলাশতলা গ্রামের ইসমাইল হোসেন, হাসমত আলী, খলিলুর রহমান, জমিলা বেগম ও আবেদন বেগমসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন জানান, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে হামিদুর তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। বলেছিলেন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হলে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা ও সরকারি পাকা ঘর পাবেন। এ ছাড়া আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন বুঝতে পারছেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হামিদুরের বিচার চান তিনি।
ভুক্তভোগী জমিলা বেগম বলেন, ‘এ দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মাসে মাসে টাকা দেওয়ার কথা বলে হামিদুর আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। আমি ধারদেনা করে তাঁকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি প্রতারণা করেছে। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেন। আমি তাঁর শাস্তি চাই।’
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন হামিদুর। বাট্টাজোড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বেয়াই হওয়ার কারণে চলতেন দাপটের সঙ্গে। যে কারণে তাঁকে কেউ কিছু বলার সাহস করত না। অন্যের জমি দখল ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হামিদুর। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন তিনি। তাঁকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত হামিদুর রহমান জামালপুর জেলা কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার সুপার আবদুর রশিদের ভাষ্য, হামিদুর রহমানের প্রতারণার বিষয়টি জানতেন না তিনি। এখন লোকমুখে শুনছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নওশেদ আলী বলেন, একটা প্রতারক চক্র সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আসলে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই। যারা প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ম দ র রহম ন সরক র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকরে প্রস্তুত ইসরায়েল-হামাস 

গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। তারা কাতারের দোহায় আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছিল। অবশেষে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটবে বলে আশা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির। তবে হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনিরা আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

রয়টার্স জানায়, হামাসের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারের কর্মকর্তারাও এই আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করা হোক। একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা পরিচালনায় ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে তারা সম্মত। 

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের কাছে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে। এর পর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি টানার কথা। যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে হামাস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতি আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আরও সরাসরি আলোচনা চায়। 

এদিকে গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে ইউরোপের চার দেশ। গত শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্প্রতি সৌদিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা দখল করতে চায়, তাদের জানা উচিত সংকটের মূলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব। এ সময় কায়রোতে গৃহীত পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান। 

অন্যদিকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। রাফায় ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে গুলি হয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক থেকে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে সাত লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৫৩ নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জন আহত হয়েছে।   

জ্বালানির অভাবে গাজার খান ইউনিসে ছয়টি বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর ওপর হাজার হাজার পরিবার নির্ভরশীল। গাজা উপত্যকায় কোনো বিনামূল্যে খাবার থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনের মসজিদগুলোতে আজান বন্ধ করে দিয়েছে।  

গত সপ্তাহে গাজায় প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। ইসরায়েল প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল। হামাস এতে সায় দেওয়ায় গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। তাদের দাবি ছিল, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। তেলআবিবের আশঙ্কা, হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে অর্ধেকও আর বেঁচে নেই। গতকাল তেলআবিবে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছে। তারা হামাদের দাবি মেনে নিয়ে জিম্মিদের মুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ১১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে ও  অবকাঠামো খাতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৬ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ