মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রতারণার জালে আটকা দেড় শতাধিক মানুষ
Published: 9th, March 2025 GMT
বকশীগঞ্জে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ বানানোর কথা বলা দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুর রহমান চন্দ্রাবাজ শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামে। গতকাল রোববার সকালে অর্ধশত ভুক্তভোগী স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ও অভিযুক্ত হামিদুর রহমানের বিচার দাবি করেন।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান। ২০১৯ সালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছে থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। পরে তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র ও সনদপত্রও দেন। সনদপত্রে লেখা ‘ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’। যার ওপরে লেখা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা কর্তৃক নিবন্ধন নম্বর ২৩৯/১৭। কিন্তু এসব সনদ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন এগুলো ভুয়া। এর পর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও চতুর হামিদুর টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি মামলা হামলার ভয়ভীতি দেখান তাদের। এ ঘটনায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সময় উপস্থিত হননি তিনি।
কয়েকদিন আগে নাশকতা মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জামালপুর কারাগারে রয়েছেন আসামি হামিদুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে।
কথা হয় প্রতারণার শিকার মধ্যপলাশতলা গ্রামের ইসমাইল হোসেন, হাসমত আলী, খলিলুর রহমান, জমিলা বেগম ও আবেদন বেগমসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন জানান, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে হামিদুর তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। বলেছিলেন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হলে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা ও সরকারি পাকা ঘর পাবেন। এ ছাড়া আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন বুঝতে পারছেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হামিদুরের বিচার চান তিনি।
ভুক্তভোগী জমিলা বেগম বলেন, ‘এ দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মাসে মাসে টাকা দেওয়ার কথা বলে হামিদুর আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। আমি ধারদেনা করে তাঁকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি প্রতারণা করেছে। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেন। আমি তাঁর শাস্তি চাই।’
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন হামিদুর। বাট্টাজোড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বেয়াই হওয়ার কারণে চলতেন দাপটের সঙ্গে। যে কারণে তাঁকে কেউ কিছু বলার সাহস করত না। অন্যের জমি দখল ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হামিদুর। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন তিনি। তাঁকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত হামিদুর রহমান জামালপুর জেলা কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার সুপার আবদুর রশিদের ভাষ্য, হামিদুর রহমানের প্রতারণার বিষয়টি জানতেন না তিনি। এখন লোকমুখে শুনছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নওশেদ আলী বলেন, একটা প্রতারক চক্র সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আসলে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই। যারা প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ম দ র রহম ন সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের মাতাল বিমানযাত্রী সহযাত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করলেন
এয়ার ইন্ডিয়ার এক যাত্রীর বিরুদ্ধে আরেক সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দিল্লি থেকে ব্যাংককে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও ভারতের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এটিই প্রথম নয়। তাঁরা একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গতকালের ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অভিযোগের ঘটনা খতিয়ে দেখবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার যে ফ্লাইটে সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করার ঘটনা ঘটেছে, সেটার নম্বর এআই২৩৩৬। ভুক্তভোগী যাত্রীর অভিযোগের পর উড়োজাহাজের ক্রুরা ওই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন।
এক বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া ওই ঘটনাকে ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছে। এ ঘটনার কথা বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরকে (ডিজিসিএ) জানিয়েছে তারা এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া আরও জানিয়েছে, তাদের ক্রুরা যাত্রীদের কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী যাত্রীকে ব্যাংককে নামার পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে অনুরোধ করেছেন। তবে ভুক্তভোগী যাত্রী প্রাথমিকভাবে ব্যাংককে অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু বলেছেন, ‘যদি কোনো অন্যায় করা হয়ে থাকে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ তাঁর মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করবে এবং ফ্লাইট পরিচালনা কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবে।
ঘটনা খতিয়ে দেখতে এয়ার ইন্ডিয়া একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কমিটি ঘটনা যাচাই করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাবে।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আর্য ভোহরা নামের এক ভারতীয় শিক্ষার্থী একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করেছিলেন। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনস তাঁকে নিষিদ্ধ করে। আর্য ভোহরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন শংকর মিশ্র নামের এয়ার ইন্ডিয়ার এক যাত্রী মাতাল অবস্থায় এক বয়স্ক নারী সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় বেশ সমালোচনা হয়েছিল।