মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি পুনরায় প্রমাণ করিল– বাহিরে তো বটেই, গৃহেও নারী ও শিশু নিরাপদ নহে। শনিবার সমকাল জানাইয়াছে, ৮ বৎসর বয়সী শিশুটি গত বুধবার মাগুরায় সহোদরার বাড়ি বেড়াইতে গিয়া নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে যথাক্রমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হইয়াছে। কিন্তু তাহার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটেনি। শুক্রবার রাত্রে শিশুটিকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ তথা কৃত্রিম জীবনীশক্তি সহায়তা দেওয়া হইলেও রবিবার অত্র সম্পাদকীয় রচনাকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সহিত যুধ্যমান। পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণপূর্বক শিশুটিকে ধর্ষণের ব্যাপারে অভিযোগের তীর সহোদরার শ্বশুরের প্রতি নিবদ্ধ হইলেও উক্ত দুষ্কার্যের সহযোগীরূপে স্বামীও রহিয়াছে সন্দেহের তালিকায়। উভয়েই ইতোমধ্যে আটক হইয়াছে, আইনি প্রক্রিয়াও চলমান। কিন্তু বড় প্রশ্ন– শিশুটি শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পাইবে কিনা।

স্বীকার্য, এই দেশে ধর্ষণের অঘটন নেহাত অল্প নহে। কিন্তু অল্পবয়সী শিশুর প্রতি এইরূপ পাশবিকতা আমাদের যদ্রূপ বেদনাহত, তদ্রূপ বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু ভুলিলে চলিবে না, এহেন বর্বর ঘটনা ঘটাইতে নারী-সম্পর্কিত প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, তৎসহিত সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার দায় সামান্য নহে। নারীও যে পুরুষের ন্যায় স্বাভাবিক মানুষ; তাহার অধিকারও যে বিপরীত লিঙ্গের কাহারও অপেক্ষা কম নহে– এই বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচিত হইলেও তৃণমূলে উহার প্রভাব নাই বলিলেই চলে। এই কারণেই ভুক্তভোগী শিশুটি যদ্রূপ নিকটাত্মীয়ের ধর্ষণের শিকার হইবার পরও বলিতে সাহস করে নাই, তদ্রূপ ঘটনা প্রকাশের পরও উক্ত পরিবারের কেহ বিশ্বাস করে নাই। উপরন্তু, এহেন অভিযোগ জানাইবার জন্য ভুক্তভোগীর বোনকে শারীরিক নির্যাতন অবধি করা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে একজন অসহায় নারী তো বটেই, অন্য অনেকেরই থানা-পুলিশ করিবার সাহস পাইবার কথা নহে। বস্তুত দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনসহ যৌন নির্যাতনের বিবিধ ঘটনায় বহু ক্ষেত্রে মামলা না হইবার কারণটি এখানেই নিহিত।

অন্যদিকে দুঃখজনক হইলেও সত্য, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হইলেও খুব কম ক্ষেত্রেই অপরাধীকে শাস্তি পাইতে দেখা যায়। একদিকে নারী বিষয়ে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হইয়া পুলিশ সহজে মামলা গ্রহণ করিতে চাহে না। আর মামলা হইলেও সঠিকভাবে উহার তদন্ত হয় না। ফলস্বরূপ আদালতে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অপরাধ প্রমাণ দুরূহ হইয়া পড়ে। অন্যদিকে মান্ধাতার আমলের বিচার প্রক্রিয়ার কারণে এক পর্যায়ে বাদীপক্ষ বহু ক্ষেত্রে মামলা চালাইতে উৎসাহ হারাইয়া ফেলে। একই কারণে অপরাধীর শাস্তিও খুব কম ক্ষেত্রেই হয়। সর্বোপরি, বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ধার্য করিবার পরও এহেন অপরাধ আদৌ হ্রাস পাইতেছে না, বরং ক্রমবর্ধমান। শনিবার প্রকাশিত সমকালেরই আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসেই অন্তত ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের শিকার। এক মাসে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার হইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ৩৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব ভায়োলেন্স’-এর মাধ্যমে নারী হয়রানির বাড়বাড়ন্ত অবস্থাও যে এহেন নারী-বৈরী সামাজিক পরিস্থিতি এবং আইনগত দুর্বলতার ফসল, ইহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইতে হয় না।

আশার বিষয়, নারীর এই নিরাপত্তাহীনতা লইয়া ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের মধ্যে গভীর উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাইতেছে। ইহার অংশ হিসাবে বিশেষত তরুণ সমাজে এক প্রকার জাগরণও দৃশ্যমান। দুই দিন যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণ-তরুণীরা যেইভাবে ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ, তাহা অব্যাহত থাকা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। অস্বীকার করা যাইবে না, এহেন সামাজিক সচেতনতাই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করিবে। সমাজ জাগিয়া উঠিলে রাষ্ট্র বেশিক্ষণ নিদ্রিত থাকিতে পারিবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত অপর ধ হইল ও

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকরে প্রস্তুত ইসরায়েল-হামাস 

গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। তারা কাতারের দোহায় আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছিল। অবশেষে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটবে বলে আশা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির। তবে হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনিরা আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

রয়টার্স জানায়, হামাসের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারের কর্মকর্তারাও এই আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করা হোক। একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা পরিচালনায় ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে তারা সম্মত। 

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের কাছে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে। এর পর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি টানার কথা। যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে হামাস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতি আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আরও সরাসরি আলোচনা চায়। 

এদিকে গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে ইউরোপের চার দেশ। গত শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্প্রতি সৌদিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা দখল করতে চায়, তাদের জানা উচিত সংকটের মূলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব। এ সময় কায়রোতে গৃহীত পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান। 

অন্যদিকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। রাফায় ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে গুলি হয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক থেকে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে সাত লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৫৩ নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জন আহত হয়েছে।   

জ্বালানির অভাবে গাজার খান ইউনিসে ছয়টি বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর ওপর হাজার হাজার পরিবার নির্ভরশীল। গাজা উপত্যকায় কোনো বিনামূল্যে খাবার থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনের মসজিদগুলোতে আজান বন্ধ করে দিয়েছে।  

গত সপ্তাহে গাজায় প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। ইসরায়েল প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল। হামাস এতে সায় দেওয়ায় গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। তাদের দাবি ছিল, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। তেলআবিবের আশঙ্কা, হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে অর্ধেকও আর বেঁচে নেই। গতকাল তেলআবিবে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছে। তারা হামাদের দাবি মেনে নিয়ে জিম্মিদের মুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ১১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে ও  অবকাঠামো খাতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৬ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ