সমাজ জাগিয়াছে, রাষ্ট্রের নিদ্রা ভাঙিবে?
Published: 9th, March 2025 GMT
মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি পুনরায় প্রমাণ করিল– বাহিরে তো বটেই, গৃহেও নারী ও শিশু নিরাপদ নহে। শনিবার সমকাল জানাইয়াছে, ৮ বৎসর বয়সী শিশুটি গত বুধবার মাগুরায় সহোদরার বাড়ি বেড়াইতে গিয়া নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে যথাক্রমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হইয়াছে। কিন্তু তাহার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটেনি। শুক্রবার রাত্রে শিশুটিকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ তথা কৃত্রিম জীবনীশক্তি সহায়তা দেওয়া হইলেও রবিবার অত্র সম্পাদকীয় রচনাকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সহিত যুধ্যমান। পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণপূর্বক শিশুটিকে ধর্ষণের ব্যাপারে অভিযোগের তীর সহোদরার শ্বশুরের প্রতি নিবদ্ধ হইলেও উক্ত দুষ্কার্যের সহযোগীরূপে স্বামীও রহিয়াছে সন্দেহের তালিকায়। উভয়েই ইতোমধ্যে আটক হইয়াছে, আইনি প্রক্রিয়াও চলমান। কিন্তু বড় প্রশ্ন– শিশুটি শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পাইবে কিনা।
স্বীকার্য, এই দেশে ধর্ষণের অঘটন নেহাত অল্প নহে। কিন্তু অল্পবয়সী শিশুর প্রতি এইরূপ পাশবিকতা আমাদের যদ্রূপ বেদনাহত, তদ্রূপ বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু ভুলিলে চলিবে না, এহেন বর্বর ঘটনা ঘটাইতে নারী-সম্পর্কিত প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, তৎসহিত সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার দায় সামান্য নহে। নারীও যে পুরুষের ন্যায় স্বাভাবিক মানুষ; তাহার অধিকারও যে বিপরীত লিঙ্গের কাহারও অপেক্ষা কম নহে– এই বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচিত হইলেও তৃণমূলে উহার প্রভাব নাই বলিলেই চলে। এই কারণেই ভুক্তভোগী শিশুটি যদ্রূপ নিকটাত্মীয়ের ধর্ষণের শিকার হইবার পরও বলিতে সাহস করে নাই, তদ্রূপ ঘটনা প্রকাশের পরও উক্ত পরিবারের কেহ বিশ্বাস করে নাই। উপরন্তু, এহেন অভিযোগ জানাইবার জন্য ভুক্তভোগীর বোনকে শারীরিক নির্যাতন অবধি করা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে একজন অসহায় নারী তো বটেই, অন্য অনেকেরই থানা-পুলিশ করিবার সাহস পাইবার কথা নহে। বস্তুত দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনসহ যৌন নির্যাতনের বিবিধ ঘটনায় বহু ক্ষেত্রে মামলা না হইবার কারণটি এখানেই নিহিত।
অন্যদিকে দুঃখজনক হইলেও সত্য, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হইলেও খুব কম ক্ষেত্রেই অপরাধীকে শাস্তি পাইতে দেখা যায়। একদিকে নারী বিষয়ে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হইয়া পুলিশ সহজে মামলা গ্রহণ করিতে চাহে না। আর মামলা হইলেও সঠিকভাবে উহার তদন্ত হয় না। ফলস্বরূপ আদালতে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অপরাধ প্রমাণ দুরূহ হইয়া পড়ে। অন্যদিকে মান্ধাতার আমলের বিচার প্রক্রিয়ার কারণে এক পর্যায়ে বাদীপক্ষ বহু ক্ষেত্রে মামলা চালাইতে উৎসাহ হারাইয়া ফেলে। একই কারণে অপরাধীর শাস্তিও খুব কম ক্ষেত্রেই হয়। সর্বোপরি, বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ধার্য করিবার পরও এহেন অপরাধ আদৌ হ্রাস পাইতেছে না, বরং ক্রমবর্ধমান। শনিবার প্রকাশিত সমকালেরই আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসেই অন্তত ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের শিকার। এক মাসে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার হইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ৩৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব ভায়োলেন্স’-এর মাধ্যমে নারী হয়রানির বাড়বাড়ন্ত অবস্থাও যে এহেন নারী-বৈরী সামাজিক পরিস্থিতি এবং আইনগত দুর্বলতার ফসল, ইহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইতে হয় না।
আশার বিষয়, নারীর এই নিরাপত্তাহীনতা লইয়া ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের মধ্যে গভীর উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাইতেছে। ইহার অংশ হিসাবে বিশেষত তরুণ সমাজে এক প্রকার জাগরণও দৃশ্যমান। দুই দিন যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণ-তরুণীরা যেইভাবে ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ, তাহা অব্যাহত থাকা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। অস্বীকার করা যাইবে না, এহেন সামাজিক সচেতনতাই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করিবে। সমাজ জাগিয়া উঠিলে রাষ্ট্র বেশিক্ষণ নিদ্রিত থাকিতে পারিবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত অপর ধ হইল ও
এছাড়াও পড়ুন:
বিনিয়োগ সম্মেলনে স্টারলিংকের ইন্টারনেট–সেবা, গতি ১০০–১২০ এমবিপিএস
বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট–সেবা চালু করেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আজ বুধবার স্টারলিংকের ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামীকালও সবার জন্য এটি উন্মুক্ত থাকবে; অর্থাৎ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দুদিন স্টারলিংক বিনা পয়সা বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ইন্টারনেট–সেবা দিচ্ছে।
মূলত বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) সেখানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট–সেবা প্রদর্শন করছে। এর মাধ্যমে সম্মেলনে আসা অতিথি ও দর্শনার্থীরা সরাসরি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। বিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭ এপ্রিল থেকেই তাঁরা স্টারলিংকের ইন্টারনেট চালুর জন্য কাজ করছিলেন৷ আজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়েছে। তবে দেশে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর বিষয়ে সরকার বা স্টারলিংকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) স্টারলিংককে বিনিয়োগ নিবন্ধনের অনুমোদন দেয়। যেখানে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৯০ কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট–সেবা দিতে হলে স্টারলিংককে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অর্বিট) নিবন্ধন নিতে হবে। এই নিবন্ধনের জন্য চলতি সপ্তাহে বিটিআরসিতে আবেদন করেছে কোম্পানিটি।
বিনিয়োগ সম্মেলনস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, সম্মেলনের মূল প্রবেশপথের একটি স্থানে বুথ বসিয়ে সবাইকে স্টারলিংকের ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বিএসসিএল। এ কারণে বুথটির সামনে দুপুরের পর থেকেই উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বিনিয়োগ সম্মেলনে স্টারর্লিংক ব্যবহার করছেন একজন দর্শনার্থী