জরিপের তথ্য কতটা সঠিক হয়, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। বাংলাদেশের মতো দেশে নির্বাচনী জরিপের তথ্য নিয়ে বিতর্ক আরও বেশি। তারপরও জরিপের মাধ্যমে একটা ‘ট্রেন্ড’ বোঝা যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শনিবার প্রকাশিত একটি জরিপের তথ্য ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপটি পরিচালনা করেছে ইনোভেশন; সহযোগিতায় ছিল ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্ম। মাঠ গবেষণার নমুনা হিসেবে ৬৪ জেলার ১০ হাজার ৬৯০ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে নমুনার এই সংখ্যাও প্রশ্নযোগ্য বটে।
জরিপের একটি প্রশ্ন ছিল– এখন নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন? এর উত্তরে বিএনপির পক্ষে ভোট দিয়েছে ৪১.
চব্বিশের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনের এই হার অনেককেই বিস্মিত করেছে। সে জন্য খোদ জরিপের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বিশেষত, গত বছরের জুলাই-আগস্টে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বলা চলে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেই ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক দরের তো আরও বেশি জনসমর্থন পাওয়ার কথা! বিএনপি এগিয়ে থাকবে– এটাই অনুমিত। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতকে এত বেশি মানুষ ভোট দেবে? ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থন জামায়াতেরও নিচে নেমে এসেছে– অনেকেই মানতে চাইবেন না। কারণ ক্ষমতাচ্যুত হলেও দলটির কোটি কোটি কট্টর সমর্থক দেশ থেকে রাতারাতি উবে যায়নি।
যা হোক, জরিপটি চালানো হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চের মধ্যে। আর ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। ভোটের হিসাবনিকাশ নিঃসন্দেহে জটিল। যেখানে নতুন দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ভোট দেবেন কিনা– তা হয়তো দলটির কর্মকাণ্ড দেখেই ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। ছয় মাস পর নতুন করে জরিপ হলে ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন হতে পারে।
অনেকের ধারণা, গণঅভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনে ভালো করবে। কিন্তু ভোটে সেভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে নাগরিক পার্টির যে এখনও অনেক করণীয় আছে, এ জরিপ অন্তত সে ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেবল শহরকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিলেই হবে না, গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে তাদের পৌঁছতে হবে।
মনে আছে, গত ২ অক্টোবর প্রকাশিত আরেকটি জরিপের ফলে দেখা গেছে, ৪৭ শতাংশ নাগরিক অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন বছর বা এর বেশি চান এবং ৫৩ শতাংশ নাগরিক চান ২ বছর বা এর কম। অথচ শনিবারের জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৫৮ শতাংশ ভোটার ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চান। তার মানে দেখা যাচ্ছে, ছয় মাসের ব্যবধানেই মানুষের ধারণা পাল্টে গেছে।
তা ছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যে আন্দোলন, তার ভিত্তি ছিল শহরাঞ্চল। তাদের বিষয়ে গ্রামাঞ্চলে জানতে চাওয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই ভালো সাড়া পাওয়ার কথা নয়।
জরিপে এও দেখানো হয়েছে, ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি, তারা কাকে ভোট দেবেন। ভোটের মাঠে এ অংশ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থাৎ তারা প্রার্থী ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর বাইরেও ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের প্রভাব কতটা, তাও উঠে এসেছে, যেখানে ৪৭ শতাংশ মানুষ স্বীকার করেছেন, তারা পরিবারের সিদ্ধান্তে ভোট দেন। বিপরীতে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক থেকে পাওয়া সংবাদকে সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ডিসেম্বরেও যদি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও নির্বাচনের আগে আমরা পরিস্থিতির নানা চড়াই-উতরাই দেখতে পাব। ভোটের সঙ্গে আমরা যদি জোটের হিসাবের কথা বলি, যেখানেও এ জরিপকে যুক্ত করা যায়। যেমন, দেখা গেছে ভোটারের পছন্দে থাকা শীর্ষ দল বিএনপি এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী উভয়ই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নিজেদের জোটে টানতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে মাত্র ২.৬ শতাংশ মানুষ ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। বাস্তবে দলটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে?
বলাবাহুল্য, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির আরও অনেক কিছুই দেখার বাকি। বিশেষ করে গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রথম নির্বাচন এটি। অন্তত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ সবাই প্রত্যাশা করছে।
জরিপে বিএনপিকে এর চেয়েও বেশি মানুষ ভোট দেবে বললেও বিস্ময়ের কিছু ছিল না। কিন্তু জরিপে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বাস্তবতা যে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল– তা হয়তো দলটিও ভালো জানে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামী যে শক্তিশালী অবস্থানে, তা স্বীকার্য। একসঙ্গে দলটি জোটগত নির্বাচন করলে হয়তো বড় চমক দেখাতে পারে।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের জরিপ সামনে আরও দেখা যাবে। সে ক্ষেত্রে এ জরিপ একটা সূচনা বটে। জরিপের অনেক তথ্য বাস্তব মনে নাও হতে পারে, তবে এর প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ বলে কথা– অনেক সময় মানুষ বলে একটা, করে আরেকটা।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশকে দেওয়া ২ স্থলবন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল ভারতের
পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। এ সুবিধা বাতিল হলেও ভারতের ভূখণ্ড হয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে দিল্লি। তবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করার পর গতকাল বুধবারই বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি।
এদিকে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে গতকাল রাতেই জরুরি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির যে প্রক্রিয়া তাতে এ সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ সার্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দরের নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। সেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের জন্য যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তাতে ভারতের বিমান ও সমুদ্রবন্দরে উল্লেখযোগ্য জট হতো। ফলে পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি ও রপ্তানিকারকদের খরচ বেড়ে যেত। তবে এটিও পরিষ্কার– এ সুবিধা বাতিলে নেপাল ও ভুটানে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য ট্রানজিটে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সিবিআইসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পেট্রাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্যকে কলকাতা স্থল ও বিমানবন্দর এবং মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে নাভা শিভাবন্দরে পরিবহনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া একই সময় রেল সুবিধা ব্যবহার করে পেট্রাপোল ও গেদে বা রানাঘাট স্থলবন্দর ব্যবহার করে নাভা শিভাবন্দরে পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যা বাতিল করা হলো। তবে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আগের বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করে শুধু কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরের এয়ার কার্গোকেও সংযুক্ত করে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, ইতোমধ্যে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। একই দিন ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল, যা উদ্বেগের। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের স্থল ও বিমানবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। বিঘ্নিত হতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম। কারণ, সুবিধাটি বাণিজ্য সহজ ও খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। এখন বাংলাদেশের জন্য লজিস্টিক্যাল চাপ বাড়তে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গত ৪ এপ্রিল বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকের এক সপ্তাহ না পেরোতেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিল ভারত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেছেন, ভারত সমুদ্রবন্দরগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে সেগুলো ব্যবহারের জন্য আমাদের একাধিকবার বলেছে। কিন্তু রুটটি পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের জন্য খুব বেশি সুবিধাজনক না হওয়ায় তেমন ব্যবহার করা হয়নি। এ বন্দরগুলো হয়ে নগণ্য পরিমাণ পণ্য যেত। ফলে সুবিধা বাতিলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে এ মুহূর্তে দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতা বিরাজ করছে, সে বিবেচনায় সিদ্ধান্তটির যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিজিএমইএসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর প্রভাব কী হতে পারে, তা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে তেমন পড়বে না বাণিজ্যিক প্রভাব
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সর্ম্পকে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ট্রানজিটের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ পণ্য আনা- নেওয়া হয়েছে তাতে সরাসরি বাণিজ্যিক প্রভাব তেমন বেশি হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত পাঁচ বছরে খুব অল্প পরিমাণ ট্রানজিট পণ্য আনা-নেওয়া করেছে ভারত। এসব পণ্য থেকে বাংলাদেশ খুব বেশি রাজস্বও পায়নি। ভারত হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি না। তবে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে বাংলাদেশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না।
ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে কিছু গার্মেন্ট পণ্য যায়। এটিও রপ্তানি হারের তুলনায় অনেক কম বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত শুল্কনীতি ভারতকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। তারা হয়তো ভেবেছে, এই সুযোগ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের পণ্য সেখানে নিয়ে ‘মেড ইন ভারত’ লিখে রপ্তানি করার সুযোগ নিতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হয়তো এ কারণে সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এটিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে মোকাবিলা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার এনামুল করিম বলেন, ট্রানজিটের আওতায় চার-পাঁচটি চালানে পণ্য এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাত্র আট টন চা পাতা এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়ছে ভারতে। বন্দরের মোট হ্যান্ডলিংয়ের তুলনায় এটি খুবই সামান্য।
চার মালবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত
বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় গতকাল বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি মালবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। পরে রপ্তানি পণ্যবোঝাই চারটি ট্রাক ঢাকায় ফেরত আসে।
এ বিষয়ে ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ভারত সরকার ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় আজ (বুধবার) বেনাপোল থেকে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ফেরত গেছে। ঢাকার রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের ছিল ট্রাকগুলো।