ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন এমন সময় ইউক্রেনের ব্যাপারে চুক্তি করার সন্নিকটে, যখন লন্ডনের ল্যাঙ্কাশায়ার হাউসে ১৮ জন ইউরোপীয় নেতা সম্মিলিত সভায় বার্তা দেন, জেলেনস্কি ভালো অবস্থায় রয়েছেন। ঘটনার বিন্দুগুলো সংযুক্ত করে পেন্টাগন ও ক্যাপিটল হিলে সাবেক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা স্টিফেন ব্রায়ান সাবস্ট্যাকে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে তাদের বক্তৃতা তুলে ধরার জন্য ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা সুস্পষ্ট। ফরাসিরা মোটামুটি অসন্তুষ্ট হয়ে চলে গেল, কিন্তু স্টারমার সাধারণভাবে সম্মত বলে মনে হয়েছিল।
ট্রাম্প তাঁর শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে যে কৌশল নেবেন, তা পরবর্তী পরিস্থিতির ইঙ্গিতবহ। ট্রাম্প ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অথবা আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন– এমন এক জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এটা খুবই অসম্ভাব্য, ট্রাম্প ইইউর মেজাজে ক্ষুব্ধ হবেন বা যুক্তরাজ্যের প্রদর্শনীমূলক পদক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত হবেন। জার্মানি আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য সরকারবিহীন থাকবে; এটি ইউরোপীয়দের পাটাতন দুর্বল করে।
নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করেছে, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ মার্কিন সাইবার কমান্ডকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে সব অভিযানের বড় আকারে পুনর্মূল্যায়নের অংশ হিসেবে।’ একইভাবে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুতিন রাশিয়ার সংস্থাগুলোকে আটকানোর জন্য অনুরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন পৃথকভাবে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের দ্য টাইমসের অনুসন্ধানকে সমর্থন দিয়েছে। এতে বলা হয়, মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের উষ্ণতা সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘রাশিয়াকে আর সাইবার নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে মনে করছে না।’
এতে দাবি করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার সিক্রেট সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিসা) বিশ্লেষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তাদের ‘মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল, তারা যেন রাশিয়ান হুমকিগুলো অনুসরণ না করে কিংবা রিপোর্ট না করে, যদিও এটি আগে এজেন্সির প্রধান ফোকাস ছিল।’ স্পষ্টতই, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ‘বিশেষ সম্পর্ক’তে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, ট্রাম্প প্রশাসন সিসাকে দুর্বৃত্ত অভিযান থেকে আলাদা করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
স্নায়ুযুদ্ধকালে গুপ্তচর সংস্থাগুলোর বেআইনিভাবে অভিযান চালানোর ইতিহাস রয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি দেখা গেছে ১৯৬০ সালের ১ মে। ফ্রান্সিস গ্যারি পাওয়ারস চালিত একটি মার্কিন গুপ্তচর বিমান ৮০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নরত অবস্থায় সোভিয়েত বিমান ঘাঁটিতে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল। এই ঘটনা কূটনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করেছিল। এতে প্যারিসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুয়েইট আইজেন হাওয়ার ও সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের শীর্ষ এক সম্মেলন বাতিল হয়। হঠাৎ দুই নেতার মৃত্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতা নিরসনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
আজ একটি সাদৃশ্যপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়েই এ বিষয়ে সচেতন। ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউসের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপের চারপাশে এমন গোপনীয়তার আবরণের প্রয়োজনীয়তা নিজেই তার প্রমাণ। গোটা পাশ্চাত্যে এমন অনেক বিরোধিতাকারী রয়েছে, যারা যে কোনো মূল্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না, বরং তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
এ রকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সামরিক-প্রতিরক্ষা শিল্পের জটিল বা প্রতিশোধমূলক মানসিকতার সঙ্গে অত্যধিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে যতই ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর থাকুক, রাশিয়ার পক্ষে ক্রেমলিনের রিট শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য পায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় এটি এমন নয়, যেখানে পুরোনো শাসনের অবশিষ্টাংশ এখনও সংবেদনশীল অবস্থানে রয়েছে; যেমনটা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। সুতরাং, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে এটি চমৎকারভাবে পরিণত হতে পারে, যেমনটা স্টিফেন ব্রায়ান বলেছেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প ‘ইউক্রেনকে ভেঙে পড়তে দেবেন, তবে জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হলে ইউক্রেনের ব্যাপারে পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তি চাইতে পারেন।’
এম কে ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। স্থানীয় সময় রোববার নতুন দলীয় নেতা হিসেবে কার্নিকে নির্বাচিত করে দেশটির ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি। পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট সচিত মেহরা। যদিও নিয়ম অনুযায়ী দলীয় প্রধানই নতুন প্রধানমন্ত্রী হন।
মার্ক কার্নি চার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলীয় প্রধান হন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ট্রুডো কার্নির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কার্নি।