সরকার পাল্টালে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে: ভারতের সেনাপ্রধান
Published: 9th, March 2025 GMT
সরকার পাল্টালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভের এক অধিবেশনে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। খবর এনডিটিভির।
অধিবেশনে সেনাপ্রধান ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি, চলমান সংঘর্ষ থেকে শিক্ষণীয় বিষয়, বাংলাদেশ এবং লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) ও লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
চীন ও পাকিস্তানের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে দ্বিবেদী বলেন, তাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার যোগাযোগ রয়েছে, যা মেনে নিতে হবে। এর অর্থ আমার মতে, দুটি ফ্রন্টের হুমকি এখন বাস্তবতা।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাড়তে থাকা সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, যেহেতু সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র একটি নির্দিষ্ট দেশে; যদি তারা আমাদের কোনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তবে আমাকেও চিন্তা করতে হবে। কারণ আমার দৃষ্টিতে, ওই দেশ থেকেও সন্ত্রাসবাদের পথ ব্যবহার হতে পারে, যা আমাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে এখন সিদ্ধান্ত নিলে তা অনেক তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত হবে। সেখানে সরকারের পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের পরিবর্তন আসতে পারে। কেননা, আমি এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট– বর্তমান সামরিক বাহিনীর (বাংলাদেশের) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী। আমাদের মধ্যে নিয়মিত নোট বিনিময় হয়, যাতে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব এড়ানো যায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান-চীন সমীকরণকে কীভাবে দেখে– জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদের যা বুঝতে হবে তা হলো, এখানে তাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার যোগাযোগ রয়েছে, যা আমাদের মেনে নিতে হবে। ভার্চুয়াল জগতের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১০০ শতাংশ। আর ভৌত ক্ষেত্রে, আমি বলব যে, বেশির ভাগ সরঞ্জাম চীনের উৎপত্তি। সুতরাং আজকের পরিস্থিতিতে এই যোগাযোগ উদ্বেগের। এর অর্থ, আমার মতে, দুই ফ্রন্টের হুমকি এখন একটি বাস্তবতা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকরে প্রস্তুত ইসরায়েল-হামাস
গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। তারা কাতারের দোহায় আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছিল। অবশেষে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটবে বলে আশা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির। তবে হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনিরা আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, হামাসের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারের কর্মকর্তারাও এই আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করা হোক। একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা পরিচালনায় ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে তারা সম্মত।
গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের কাছে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে। এর পর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি টানার কথা। যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে হামাস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতি আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আরও সরাসরি আলোচনা চায়।
এদিকে গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে ইউরোপের চার দেশ। গত শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্প্রতি সৌদিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা দখল করতে চায়, তাদের জানা উচিত সংকটের মূলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব। এ সময় কায়রোতে গৃহীত পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান।
অন্যদিকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। রাফায় ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে গুলি হয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক থেকে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে সাত লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৫৩ নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জন আহত হয়েছে।
জ্বালানির অভাবে গাজার খান ইউনিসে ছয়টি বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর ওপর হাজার হাজার পরিবার নির্ভরশীল। গাজা উপত্যকায় কোনো বিনামূল্যে খাবার থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনের মসজিদগুলোতে আজান বন্ধ করে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে গাজায় প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। ইসরায়েল প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল। হামাস এতে সায় দেওয়ায় গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। তাদের দাবি ছিল, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। তেলআবিবের আশঙ্কা, হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে অর্ধেকও আর বেঁচে নেই। গতকাল তেলআবিবে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছে। তারা হামাদের দাবি মেনে নিয়ে জিম্মিদের মুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ১১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে ও অবকাঠামো খাতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৬ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।