মাগুরার ঘটনায় এক মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি
Published: 9th, March 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মাগুরার সেই শিশুটির ধর্ষণের ঘটনায় এক মাসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
আজ রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই পাঁচ দাবি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখান থেকে মশালমিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘ধর্ষকের গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে বাণিজ্য অনুষদ হয়ে শাহবাগের দিকে যান। শাহবাগ থেকে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে মিছিল শেষ করেন তাঁরা। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন।
প্রথম দুটি দাবি ঘোষণা করেন আশরেফা। দাবি দুটি হলো: ১.
পরের তিনটি দাবি ঘোষণা করেন উমামা ফাতেমা। দাবিগুলো হলো: ৩. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে। ৪. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। সারা দেশে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৫. ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং–সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।
এ সময় উমামা ফাতেমা বলেন, ‘বাংলাদেশের আপামর জনগণের উদ্দেশে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে আপনারা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনারা অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করুন এবং তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করুন।’
এর আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, রাষ্ট্র নারীদের কেন নিরাপত্তা দিতে পারছে না? তাঁরা বলেন, যত দিন পর্যন্ত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ স্থায়ী হবে। বক্তৃতায় বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে একটা তিন বছরের বাচ্চাও নিরাপদ না, নব্বই বছরের বৃদ্ধাও নিরাপদ না। আমার মা–বোনেরা আজ গণপরিবহনে নিরাপদ না, তারা কোথাও নিরাপদ না।’ তিনি বলেন, একজন মুনিয়া (মোসারাত জাহান) কিংবা মাগুরার শিশুটি—এরা প্রতীকী; এসব ঘটনার বিচার করে বাকি ঘটনাগুলোরও বিচার করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ন র পদ ন শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে ব্যস্ত থাকায় শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা, কার্টনবন্দি করে লাশ মানিকগঞ্জে ফেলেন স্বামী
মানিকগঞ্জে বিউটি গোস্বামী (৩৯) নামের এক নারী তার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী বিউটি গোস্বামীকে নিজেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে এসির কার্টনে ভরে ভাড়া করা প্রাইভেট কারে ঢাকার উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকায় ফেলে দেন তিনি।’
ঘটনার চারদিন পর ফরিদপুর থেকে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি টিম স্ত্রী হত্যার অভিযোগে অলোক গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, গত শুক্রবার মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকা থেকে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কার্টন থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেন, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি বিউটি গোস্বামীর। দুই সন্তানের জননী বিউটি গোস্বামী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নিহারঞ্জন গোস্বামীর মেয়ে। স্বামী অলোক রঞ্জনের সঙ্গে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন তিনি। অলোক রঞ্জন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের মৃত প্রদীপ কুমার গোস্বামীর ছেলে। বিউটির লাশ উদ্ধারের পর দিন নিহতের বাবা নিহারঞ্জন গোস্বামী বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা হওয়ার পর ডিবিপুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। ৭ এপ্রিল রাতে ফরিদপুর থেকে বিউটির স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অলোক রঞ্জন জানিয়েছেন, স্ত্রী বিউটির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। অলোকের দাবি, বেশির ভাগ সময় ফেসবুক, অনলাইন বিজনেস ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন তার স্ত্রী বিউটি। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতে পারতেন না। কিছু বললেই মা-বাবা তুলে গালাগালি করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বিউটি গোস্বামী রান্না করতে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। পরে ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান ও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। পরে এসির কার্টনে ভরে রশি দিয়ে তা বাধা হয়। গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করা হয়। প্রাইভেট কারটির পেছনের সিটে কার্টনটি বসিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা এলাকায় আসেন তারা। সহযোগীর মাধ্যমে কৌশলে প্রাইভেট কারচালককে সামনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কের এগারোশ্রী এলাকায় স্ত্রীর মরদেহটি ফেলে দেন অলোক। শেষে ওই প্রাইভেট কারেই পালিয়ে যান তিনি ও সহযোগী।
গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় হয়। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।