কাইল জেমিসনের শর্ট বলটা কোমর উচ্চতায় উঠেছিল। রোহিত শর্মাকে এমন বল দিয়ে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন কেবল রোহিত যদি ভাবতেন, ‘মাত্রই তো ইনিংস শুরু হলো…।’ কিন্তু রোহিত রোহিত বলেই তা ভাবেননি। ২৫১ রান তাড়া করার ম্যাচেও ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই পুল শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে সবকিছু ভারতের জন্যই সাজানো ছিল। নিউজিল্যান্ড যেন উপলক্ষ মাত্র। ফাইনালে আরেকটা দল লাগে বলেই তারা খেলল। তবু অদৃষ্ট হয়তো চাইল, নিউজিল্যান্ড যেহেতু খেলছেই, বিষয়টাকে আরেকটু বাস্তব রূপ দেওয়া যাক। টসটা তারাই জিতুক, বাকি সবই তো ভারতেরই। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিজয় উদ্‌যাপনে। ২০১৩ সালের পর দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়। সব মিলিয়ে তৃতীয়। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টানা দ্বিতীয় আইসিসি শিরোপা। তা-ও সেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে, আইসিসির কোনো আসরের ফাইনালে যাদের সঙ্গে আগে কখনো জেতেনি ভারত।

দুপুরে মিচেল স্যান্টনার টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন, ওদিকে হিসেব চলতে থাকল রোহিত শর্মা তো টানা ১২ ওয়ানডেতে টস হেরে ব্রায়ান লারাকে ধরে ফেললেন! যেন এতগুলো ম্যাচে টসে হারা বিশাল এক লজ্জা ভারত অধিনায়কের জন্য। খেলা ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। সুন্দর শুরু নিউজিল্যান্ডের জন্য। দুই ওপেনার উইল ইয়াং-রাচিন রবীন্দ্র মিলে ৭.

৫ ওভারেই করে ফেললেন ৫৭। কিন্তু টস থেকে এ পর্যন্তই। মাঝে একটু টুইস্টের মতো হলেও এরপর থেকেই গল্পটা বদলাতে থাকল। কিংবা কে জানে, গল্পটা হয়তো এভাবেই লেখা ছিল।

উদ্বোধনী জুটিতেই ১০৫ রান যোগ করেছেন রোহিত শর্মা (বাঁয়ে) ও শুবমান গিল

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা

সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে। 

জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়। 
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন। 

খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না। 

অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। 

কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।

জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।

কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ