বরিশালে ছাত্রদল নেতার দুই হাত ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’র ঘটনায় বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার
Published: 9th, March 2025 GMT
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মো. আসাদ উল্লাহ খানের দুই হাত কুপিয়ে ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’ করার ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আজ রোববার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁদের বহিষ্কার করার তথ্য জানানো হয়।
রোববার রাতে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নাসির উদ্দিন জমাদ্দার বলেন, দলের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত চিঠি পোস্ট করে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বরিশাল দক্ষিণ জেলার আওতায় বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ৯টার দিকে বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি বন্দরে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আসাদ উল্লাহ খানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। স্বজনেরা জানান, সন্ত্রাসীরা ছাত্রদল নেতা আসাদ উল্লাহকে নির্মমভাবে কুপিয়ে তাঁর দুই হাত ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’ করে দেয়। দুই পায়ের রগ কেটে ফেলে এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে গুরুতর জখম করে। পরে আসাদ উল্লাহকে উদ্ধার করে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)।
ছাত্রদল নেতা আসাদ উল্লাহর ওপর হামলার পর তাঁর স্বজনেরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে নিয়ামতি বন্দরে নিজেদের ফলের দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজী ও তাঁর ভাই সোহেল ফরাজীর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসাদ উল্লাহর ওপর হামলা চালান।
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ও সোহেল ফরাজীর মুঠোফোনে ফোন করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। নিয়ামতি বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘটনার পর থেকেই শাহীন ও অভিযুক্ত অন্যরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আরও পড়ুনবরিশালে প্রতিপক্ষের হামলায় ছাত্রদল নেতার দুই হাত ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ন ত ব ক রগঞ জ বর শ ল ন য় মত
এছাড়াও পড়ুন:
এআই’র তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন সুলতানা, দাবি স্বজনের
দশ মাস আগে জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়। দু’মাস পরই স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। প্রবাসে সোনার সংসার গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর নববধূর জীবন তছনছ করে দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে বানানো একটি ভুয়া ভিডিও। ওই রমণী বেছে নেন আত্মহননের পথ। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভীনের জীবনে। গত রোববার দুপুরে বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আত্মহত্যার পর এমনটাই দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
এদিকে মৃত্যুর আগে লিখে যান তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। স্বামী অনিকের বোন জামাই পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ মৃদুলকে দায়ী করে সুলতানা লেখেন, ‘মৃদুলকে ছেড়ে দিও না, ওর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ওকে ছেড়ে দিও না। আমার সংসার, অনিক, কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারলাম না।’
গতকাল মঙ্গলবার সুলতানাদের বাড়ি গেলে দেখা যায়, মা ফিরোজা বেগম বাকরুদ্ধ। কোস্টগার্ডে কর্মরত একমাত্র ভাই আলিমুল ইসলাম আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছি। অথচ আমার পরিবারে নিরাপত্তা নেই। ওরা সবাই মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ফেক আইডি থেকে অনিকের পর্তুগালপ্রবাসী বোন জামাই মৃদুল আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি প্রথমে সুলতানাকে, পরে তাঁর স্বামী অনিককে পাঠানো হয়। এই ভিডিওর কারণে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। অনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি ডির্ভোস দেবেন বলেও হুমকি দেন। পরে জানা যায়, ভিডিও এআই দিয়ে তৈরি।
মা ফিরোজা বেগম বলেন, সবাই মিলে মেয়েটাকে হত্যা করেছে। অনিক, অনিকের মা, বোন জামাই মৃদুলের ফাঁসি চান তিনি। দু’এক দিনের মধ্যে থানায় মামলা করব।
জাপানপ্রবাসী অনিকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ভগ্নিপতি মৃদুলের সঙ্গে আমার স্ত্রীর বচসা হয়। সুলতানা কীভাবে সংসার করে, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মৃদুল। তার কারণে আমাদের সংসারে অশান্তি হয়। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সুলতানা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে পর্তুগালপ্রবাসী মৃদুলের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কল রিসিভ করেননি। তাঁকে মেসেজ পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আকবর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।