গাড়ি আমদানি ও বিক্রির ব্যবসা করেন মাশরুর নাঈর (২৯)। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘হুইল ডিলস’ থেকে একটি জিপগাড়ি কেনার জন্য যোগাযোগ করেন এক ব্যক্তি। পরে গাড়ি দেখতে এসে ‘টেস্ট ড্রাইভ’ বা পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িটি চালিয়ে দেখতে চান তিনি। ক্রেতার চাওয়া অনুযায়ী গাড়িটি চালাতে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। কিছুক্ষণ পর গাড়িতে থাকা মালিকের প্রতিনিধির মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারী চক্র।

টয়োটা হ্যারিয়ার (হাইব্রিড) ব্র্যান্ডের এই গাড়ির দাম আনুমানিক মূল্য ৮৫ লাখ টাকা বলে ব্যবসায়ী মাশরুর নাঈর জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার রাত সোয়া আটটার পর রাজধানীর শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচ থেকে গাড়িটি ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর গাড়ির মালিকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এ ঘটনায় মামলা না করতে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট না দিতে কয়েকটি বার্তা পাঠায় ছিনতাইকারীরা। আরেক বার্তায় ছিনতাইকারী লেখে, ‘ভাই, গাড়ি পেয়ে যাবেন। এ জন্য ৭ দিন সময় লাগবে।’

এ ঘটনায় আজ রোববার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর পুলিশ চক্রটিকে শনাক্ত করতে কাজ করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক ব্যক্তি তাঁর মুঠোফোন নম্বর থেকে মাশরুর নাঈরকে কল করে টয়োটা হ্যারিয়ার (হাইব্রিড) জিপগাড়ি কিনতে চান বলে জানান। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে নাঈর তাঁর বাসার গ্যারেজে গাড়ি দেখতে যেতে বলেন। পরদিন ৮ মার্চ রাত পৌনে আটটার দিকে ওই ব্যক্তি নাঈরের পরীবাগের বাসার নিচের গ্যারেজে আসেন। এ সময় গাড়িটির বিষয়ে জানতে ওই ব্যক্তিকে চাচাতো ভাই মো.

পিয়াল মাহমুদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন গাড়ি ব্যবসায়ী নাঈর।

ব্যবসারী মাশরুর নাঈর জানান, তাঁর চাচাতো ভাই পিয়াল তেজগাঁওয়ের একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে তেল নেওয়া অবস্থায় গাড়িটিকে শনাক্ত করেন। পাম্পের লোকজনকেও বলতে থাকেন যে গাড়িটি ছিনতাই করা হয়েছে। পাশে থাকা পাঁচজন পুলিশ সদস্যকেও বিষয়টি জানান। তবে তাঁরা তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাড়ি নিয়ে পাম্প থেকে সরে পড়ে ছিনতাইকারী চক্র।

মামলার এজাহারে বলা হয়, কথাবার্তার এক পর্যায়ে গাড়িটি ‘টেস্ট ড্রাইভের’ জন্য চান অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি। পরে তিনি গাড়িটির চালকের আসনে বসেন। এ সময় নাঈরের চাচাতো ভাই পিয়ালও গাড়িতে ওঠেন। তাঁরা পরীবাগ মোড়ে গেলে গাড়ি কিনতে আসা ব্যক্তির সহকর্মী পরিচয়ে আরও দুই ব্যক্তি গাড়িতে ওঠেন। রাত সোয়া আটটার পর পিয়ালের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাড়িটি ছিনতাই করা হয়।

মাশরুর নাঈর প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি নিয়ে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি যখন পরীবাগের বাসা থেকে বের হন, তখন তিনি সহকর্মী পরিচয়ে ফোনে কয়েকজনের সঙ্গে বারবার কথা বলছিলেন। পরীবাগ মোড়ে গেলে সেখানে তিন ব্যক্তি অবস্থান করছিলেন। তখন গাড়ি কিনতে আসা ব্যক্তি তাঁদেরকে বলছিলেন, ‘এতে দেরি করলে কেন? তারাবির নামাজ আছে। দ্রুত গাড়ি দেখে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে।’ এ কথা বলার পর সেখান থেকে দুজন গাড়িতে ওঠেন।

ছিনতাইয়ের পর তেজগাঁওয়ের একটি পেট্রলপাম্পে গাড়িটির দেখা পেয়ে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের জানানো হলেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন এর মালিক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব গ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের মাতাল বিমানযাত্রী সহযাত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করলেন

এয়ার ইন্ডিয়ার এক যাত্রীর বিরুদ্ধে আরেক সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দিল্লি থেকে ব্যাংককে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও ভারতের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এটিই প্রথম নয়। তাঁরা একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গতকালের ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অভিযোগের ঘটনা খতিয়ে দেখবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার যে ফ্লাইটে সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করার ঘটনা ঘটেছে, সেটার নম্বর এআই২৩৩৬। ভুক্তভোগী যাত্রীর অভিযোগের পর উড়োজাহাজের ক্রুরা ওই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন।

এক বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া ওই ঘটনাকে ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছে। এ ঘটনার কথা বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরকে (ডিজিসিএ) জানিয়েছে তারা এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া আরও জানিয়েছে, তাদের ক্রুরা যাত্রীদের কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী যাত্রীকে ব্যাংককে নামার পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে অনুরোধ করেছেন। তবে ভুক্তভোগী যাত্রী প্রাথমিকভাবে ব্যাংককে অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু বলেছেন, ‘যদি কোনো অন্যায় করা হয়ে থাকে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ তাঁর মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করবে এবং ফ্লাইট পরিচালনা কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবে।

ঘটনা খতিয়ে দেখতে এয়ার ইন্ডিয়া একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কমিটি ঘটনা যাচাই করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাবে।

এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আর্য ভোহরা নামের এক ভারতীয় শিক্ষার্থী একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করেছিলেন। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনস তাঁকে নিষিদ্ধ করে। আর্য ভোহরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন শংকর মিশ্র নামের এয়ার ইন্ডিয়ার এক যাত্রী মাতাল অবস্থায় এক বয়স্ক নারী সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় বেশ সমালোচনা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ