সংসারের অভাব ঘুচাতে ধারকর্য করে এক নির্মাণ শ্রমিক তাঁর ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরবে। দেড় বছরের মাথায় সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। সচ্ছলতা দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ করার আগেই গত ৩ মার্চ দাম্মাম শহরের একটি এলাকায় গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় মারা যান কাউছার। ৬ দিন আগে মৃত্যুর খবর পেলেও এখনও স্বজন জানেন না কবে দেশে ফিরবে তাঁর লাশ। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের জয়দা গ্রামে।

জানা গেছে, মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী জয়দা গ্রামের বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক মোতাহার আলী। ৮ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে কাউছারও নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সংসারে একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে বছর দেড়েক আগে ছেলে কাউছারকে সৌদি আরবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বাবা মোতাহার। নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, তাঁকে জোগাড় করতে হয় ৬ লাখ টাকা। ঋণ নিয়ে ছেলেকে পাঠান সৌদি আরবে। দাম্মাম শহরের সাক্কো নামে একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন কাউছার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গত ৩ মার্চ স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে দাম্মাম শহরের আল হাসা জাফরা এলাকার গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান কাউছার।

তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হন প্রতিবেশী এক প্রবাসীর কাছ থেকে। কিন্তু ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও ছেলের লাশ বাংলাদেশি কোন সংস্থার মাধ্যমে দেশে ফিরবে, কবে ফিরবে– এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না স্বজন। পরিবারের দাবি, সরকার যেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত লাশ দেশে আনতে পদক্ষেপ নেয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাউছারের স্ত্রী জেসমিন তাঁর ১৫ মাসের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। মেঝেতে বসে আছেন বাকরুদ্ধ বাবা। ছেলের খোঁজখবর জানতে চাইতেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন মোতাহার। তিনি বলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন শেষ। এত কষ্ট, ঋণ-কর্য যার জন্য করলাম, তাকেই আল্লাহ নিয়ে গেল। আমি এখন কী করব? একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে ছেলের বউ, নাতনি ও আমার পরিবারের খরচ কীভাবে চালাব সেই চিন্তা।’

কাউছারের স্ত্রী জেসমিন বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ওরে বলছিলাম, ঋণ কইরা বিদেশ যাওয়ার দরকার নাই। কোনো আপদ-বিপদ হইলে মানুষ টেহা ছাড় দিত না। ওর বিদেশ যাওয়ার আট দিন পর জন্ম হইছে মেয়েটার। এখন মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখব কে?’

এ বিষয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ওয়েল ফেয়ার সেন্টার ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল হাসান তাহেরি জানান, পরিবার আবেদন করলে তা পাঠিয়ে দেবেন ওয়েজ অর্নার কল্যাণ বোর্ডে। এর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স মরদ হ র ক জ করত পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৪

জামালপুরের শহরের পাশে একই স্থানে পৃথক ঘটনায় একজন ট্রাকচালক ও একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এসময় চারজন গুরুতর আহত হন।

নিহতরা হলেন-জামালপুর পৌরসভার ছনকান্দা এলাকার মনসুর আকন্দের ছেলে ট্রাকচালক জুয়েল আকন্দ কালু ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমারপাড় এলাকার শাওন ইসলাম। 

শনিবার (৮ মার্চ) ভোর ৬ টার দিকে জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের ছনকান্দা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে৷ 

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, পৌরসভার ছনকান্দা এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নিজের ট্রাক পরিস্কার করছিলেন চালক জুয়েল আকন্দ কালু। এসময় জামালপুর থেকে নান্দিনাগামী দশ চাকার (লং ভেহিকেল) একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকটিতে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জুয়েল আকন্দ কালু নিহত হন। আহত হন আরও ৩ জন । দুর্ঘটনার পর সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে আটকে পড়ে বেশকিছু যানবাহন। 

পরে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরবাহী একটি ট্রাকে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহগামী একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের চালক শাওন নিহত হন। অপর আরোহী গুরুতর আহত হন। আহতদের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

জামালপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু মোহাম্মদ ফয়সল আতিক বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকগুলো আটক করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”

ঢাকা/শোভন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা
  • শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় অদম্য হোসনার
  • পাতা খুঁটে মজুরি পান পুরুষের অর্ধেক
  • ময়মনসিংহে প্রসূতিদের গর্ভফুল পাচার চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
  • জামালপুরে দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৪
  • এক ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল সচল
  • জামালপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের
  • ইঞ্জিনে আগুন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ
  • ইঞ্জিনে আগুন: ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ