লালমনিরহাটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গৃহবধূ হত্যা মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার
Published: 9th, March 2025 GMT
ছবি: সংগৃহীত
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তাপে পুড়ছে ১৮ চা বাগান
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি হয়। কখনও ফেব্রুয়ারিতে না হলে মার্চে বৃষ্টির দেখা মেলে। বছরের প্রথম বৃষ্টির পানি গায়ে পড়ার পর চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসে, সবুজ পাতা বের হয়। মার্চ থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু করে বাগান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ চলে গেলেও বাগানে পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়নি। এখন বাগান এলাকায় প্রচণ্ড রোদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাশিল্পের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। গত নভেম্বরের পর টানা ৪ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮ চা বাগান খরায় পুড়ছে। অতি গরমে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মরছে চা গাছ। গত নভেম্বর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড তাপ থেকে চা গাছ রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো বাগানে কনটেইনার ও কলসি দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাইপ দিয়ে কৃত্রিম সেচ দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিশাল বাগানের জন্য এই পানি সেচ সামান্য। কারণ এবার বাগানের পানি সংরক্ষণের প্রধান মাধ্যম হ্রদও শুকিয়ে গেছে। এসব কারণে গত বছরের তুলনায় এবার এক লাখ কেজি চা উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কর্ণফুলী চা বাগানের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক শাফি আহমদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের বাগান সবচেয়ে বড় বাগান। এবার দীর্ঘ মেয়াদে খরা দেখা দিয়েছে, চার মাস বৃষ্টি নেই, বাগানের গাছ মরে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে পোকার উপদ্রব বেড়ে গেছে, চা পাতার বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, এতে উৎপাদনে ধস নামবে। সেচ সুবিধা দিয়ে চা গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি নাহলে বাগানের ভয়াবহ ক্ষতি হবে।’
চা বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, চাশিল্প পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর। বৃষ্টি না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এখন তারা বিকল্প সেচের মাধ্যমে গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এতে ব্যয় বাড়ছে। সেচ সুবিধার অভাবে প্রায় প্রতিটি বাগানের ১০-২০ শতাংশ চা গাছ মারা যাচ্ছে। খরায় সবুজ বাগানের চেহারা বদলে গেছে। খরা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় চা গাছে কুঁড়ি আসা দূরে থাক, উল্টো গাছ বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে।
খৈয়াছড়া চা বাগানের উপব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এবার দীর্ঘ মেয়াদে খরা হচ্ছে। অতি তাপের কারণে চা গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, পোকা ধরায় চা গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে আমরা বাগান রক্ষার চেষ্টা করছি।’
চৌধুরী চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চাশিল্প শতভাগ বৃষ্টিনির্ভর। বৃষ্টি হলেই চা পাতা উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টি পাচ্ছি না। ফলে এর প্রভাব উৎপানে পড়বে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে চা গাছ মরে যাচ্ছে। এত বাগান মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
রাঙাপানি চা বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘গত নভেম্বরে বৃষ্টি হয়েছিল, এখনও বৃষ্টির দেখা নেই সে কারণে চা গাছ মরে যাচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ক্ষতির শিকআর হচ্ছেন।’
হালদা ভ্যালি চা বাগানের নির্বাহী পরিচালক আজম তালুকদার জানান, প্রখর রোদে চা গাছ জ্বলে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা কনটেইনার করে কৃত্রিম সেচ দিচ্ছেন, এতে উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এমন আবহাওয়ায় বার্ষিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। বাগানের হাজার হাজার চা-গাছ মরে গেছে। উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার এক লাখ কেজি চা উৎপাদন কম হবে।
ফটিকছড়িতে রামগড় চা বাগান, আঁধার মানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, নিউ দাঁতমারা, মা-জান, নেপচুন, পঞ্চবটি, মুহাম্মদনগর, হালদা ভ্যালি, এলাহী নূর, রাঙাপানি, বারমাসিয়া, কর্ণফুলী, উদালীয়া, খৈয়াছড়া, আছিয়া, চৌধুরীসহ মোট ১৮টি বাগান রয়েছে।
টিকে গ্রুপ পরিচালিত বাগানের মহাব্যবস্থাপক কাজী এরফানুল হক বলেন, ‘চা বাগানে থাকা বিশাল হ্রদে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হয়। এবার হ্রদও শুকিয়ে গেছে। সাধারণত এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু চা বাগানে এবার বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উৎপাদনেও ধস নামতে পারে।’
চট্টগ্রামের হালদা ভ্যালি ও রামগড় চা বাগানের মালিক, শিল্পপতি নাদের খান বলেন, ‘বাগান জ্বলে যাচ্ছে। চাশিল্পকে রক্ষায় শতভাগ সেচের বিকল্প নেই। শতভাগ সেচে উৎপাদন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। অন্যথায় চা বাগান রক্ষা করা যাবে না। যদিও শতভাগ সেচ অনেক ব্যয়বহুল। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির বৈরি প্রভাবটা প্রথমে চা বাগানের ওপর পড়েছে।’