৪০ দিনেও কেউ গ্রেপ্তার হননি, পুলিশের তৎপরতা না থাকার অভিযোগ পরিবারের
Published: 9th, March 2025 GMT
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহার। মামলায় বেসামরিক ছয়জনকে আসামি করা হয়েছিল, যাঁদের সঙ্গে যুবদল নেতার পরিবারের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল।
কোতোয়ালি মডেল থানায় করা মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছিল। যাঁরা সিভিল পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল। এদিকে ঘটনার ৪০ দিন পেরোলেও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনেরা। তাঁদের ভাষ্য, থানায় মামলা হলেও আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। তবে পুলিশের দাবি, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
রোববার দুপুরে তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর যৌথ বাহিনীর নির্যাতনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। থানায় মামলা হয়েছে প্রায় ৩৫ দিন হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, পুলিশ ঘটনাস্থলেই যায়নি। আমরা শুরুতে বিচার পাওয়ার যে সম্ভাবনা দেখেছিলাম, এখন তা পুরোপুরি অন্ধকারে। সেনাবাহিনী বলেছিল, আমাদের পরিবারের পাশে থাকবে। তাদের কথা অনুযায়ী আমাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে বিচার পাওয়া নিয়ে কোনো কথাই বলছে না। আমরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’
নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি তৌহিদুলের বাবা মোখলেছুর রহমানের কুলখানি অনুষ্ঠান ছিল। আয়োজন চলাকালে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তৌহিদুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান সেনাসদস্যরা। পরদিন দুপুরে পরিবারের সদস্যরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, তৌহিদুলের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
তৌহিদুলের স্ত্রী ও মামলার বাদী ইয়াছমিন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর সেনাবাহিনীর আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছিলেন। তাঁরাই ঘটনার মূল হোতা। তাঁরাই সেনাবাহিনীকে দিয়ে তাঁর স্বামীকে হত্যা করিয়েছেন। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, থানায় মামলা হওয়ার এত দিন পরও একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলায় পুলিশের কোনো তৎপরতা তাঁরা দেখতে পাননি। পুলিশ চাইলে আরও আগেই আসামিরা গ্রেপ্তার হতেন। তাঁরা মামলায় সেনাবাহিনীর কাউকে সরাসরি আসামি করেননি, তবে তাঁরা দেখতে চাই, জড়িত সেনাদের কতটা কঠোর বিচার করে সেনাবাহিনী।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন আদর্শ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম, ইটাল্লা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে তানজিল উদ্দিন, মোক্তল হোসেনের ছেলে নাজমুল হাসান, খায়রুল হাসান ও সাইদুল হাসান এবং বামইল গ্রামের পেয়ার আহমেদের ছেলে সোহেল। তাঁদের মধ্যে ফজলুর রহমান ও মোক্তল হোসেন মামলার কয়েক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের সন্তানদের নির্দোষ দাবি করেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক রাকিবুল ইসলামকে। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন আরেকজন উপপরিদর্শক। পুলিশ মামলাটি ভালোভাবে তদন্ত করছে।
পুলিশের তৎপরতা না থাকার কথা সঠিক নয় বলে দাবি করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর পর ব র র র রহম ন ল ইসল ম তদন ত ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।