লিস্ট ‘এ’ ইতিহাসে কোথায় আছে প্রাইম ব্যাংকের ৪২২
Published: 9th, March 2025 GMT
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ ইতিহাস গড়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। বাংলাদেশের ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম দল হিসেবে ৪০০ করেছে ব্যাংক দলটি। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৪২২ রান করেছে প্রাইম ব্যাংক।
বাংলাদেশে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০০ করা প্রথম দলটির নাম অবশ্য প্রাইম ব্যাংক নয়। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪০৯ রান করেছিল ভারত।
৬২ বছরের লিস্ট ‘এ’ ইতিহাসে ৪০০ করার ৯৮তম উদাহরণ গড়েছে প্রাইম ব্যাংক। সর্বোচ্চ ইনিংসের তালিকায় দলটি ভারতের পাঞ্জাবের সঙ্গে যৌথভাবে ৩৮ নম্বরে আছে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ইনিংসটা ৫০৬ রানের! ২০২২ সালে ভারতের বিজয় হাজারে ট্রফিতে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৫০৬ রান করেছিল তামিলনাড়ু। জবাবে ৭১ রানে অলআউট হয়ে যায় অরুণাচল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৫০০ রানের ইনিংস ওই একটিই।
কোন ম্যাচগুলো লিস্ট ‘এ’টেস্ট ম্যাচ মাত্রই যেমন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, তেমনি ওয়ানডে বা এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে টেস্ট খেলুড়ে ১২টি দেশের সর্বোচ্চ ঘরোয়া এক দিনের টুর্নামেন্টেরও লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি আছে। কোন টুর্নামেন্টটি লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি পাবে, সেটি নির্ধারণ করে সেই দেশের বোর্ড। বাংলাদেশে যে মর্যাদা পেয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এ ছাড়া টেস্ট দলগুলো সফরে সেই দেশের কোনো প্রথম শ্রেণির দলের বিপক্ষে খেললে সেই ম্যাচগুলোও লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পায়। যা পায় ‘এ’ দলের খেলা ম্যাচ ও আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালেঞ্জ লিগের ম্যাচগুলোও।আরও পড়ুনসেদিন খুলেছিল স্বপ্নের দরজা১ ঘণ্টা আগেইতিহাসের সাক্ষী স্কোরকার্ড.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্যোগ প্রস্তুতিতে চাই সর্বমহলের অংশগ্রহণ
এ বছর ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত জার্মান ওয়াচের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-২০২৫’ অনুসারে প্রতিবছর দুর্যোগে বাংলাদেশে গড়ে ৬৩ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় (সমকাল, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। সৌভাগ্যবশত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু অগ্নিকাণ্ড ছাড়া এ বছর উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি।
অবশ্য এপ্রিল-মে মাসে আসছে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। জুন থেকে শুরু হবে বন্যা মৌসুম। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে ২০২৫ সালও ২০২৪ সালের মতো উষ্ণতম বছর হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি ঘটে। নীরব দুর্যোগ নদীভাঙনে প্রতিবছর অনেক মানুষের সম্পদহানি ও বাস্তচ্যুতি কঠিন বাস্তবতা। এমন প্রেক্ষাপটেই আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব ও তা প্রশমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সাল থেকে পালিত দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রস্তুতি, বাঁচায় প্রাণ ক্ষয়ক্ষতি’।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আটটি আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন’-এ বলা হয়, দুর্যোগ-ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ, তাপদাহ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও প্রতি মাসে গড়ে দুই হাজার অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে পাঁচ দফা বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের কারণে দুর্যোগের সংখ্যা, ধরন, মৌসুম ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা কীভাবে বাড়ছে, আমি নিজেও পেশাগত কাজে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চল ঘুরে জেনেছি।
ওদিকে, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও বাংলাদেশ ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগের জন্যও বিপদাপন্ন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংঘটিত ঘন ঘন ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প এ আশঙ্কাকে ঘনীভূত করছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৫৪টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে বিল্ডিং কোডসহ নিয়ম না মানায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভবন ধ্বংস ছাড়াও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হবে, তা নিশ্চিত। সচেতনতা বৃদ্ধি, ভবন-স্থাপনা নির্মাণে আইন ও নিয়ম প্রতিপালন এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের মাধ্যমেই ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
দুর্যোগে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের বিবেচনায় না থাকলেও ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২৪ সালে জলবায়ু প্রতিঘাতজনিত কারণে বাংলাদেশের ৩ কোটির বেশি শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ছাড়াও শিশুর মনোযোগ ও মানসিক সমস্যা হয়। দুর্যোগে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৬ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে।
দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও সক্ষমতা স্বীকার্য হলেও সরকারের দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি বা এসওডি অনুসারে জাতীয় থেকে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কাঠামো বা কমিটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সক্রিয় নয়। তবে সরকার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ১৯৭২ সাল থেকে যৌথভাবে পরিচালিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপকূলজুড়ে ৮১ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত প্রচারসহ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সফল। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউটসহ অনেক সংস্থারই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন, যারা দুর্যোগ মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং বিপদাপন্ন মানুষ ও তাদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণ করে দুর্যোগের আগেই তাদের কাছে সহযোগিতা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এত উদ্যোগ ও সফলতা সত্ত্বেও দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে সতর্ক সংকেত ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন ও নির্ভুল এবং বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সহজবোধ্য ও সহজপ্রাপ্য করতে হবে। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বে এখনও অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে দুর্যোগের পূর্ব সংকেত পৌঁছে না। তাই ২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ ‘সবার জন্য পূর্ব সংকেত’ ক্যাম্পেইনের সূচনা করেছে, যা বাস্তবায়নে বাংলাদেশেও সমন্বিতভাবে কাজ করছে। প্রসঙ্গত, আকস্মিক বন্যা পূর্বাভাস প্রদানে সতর্ক সংকেত উদ্ভাবন ও তা প্রচারে কার্যকর পদক্ষেপ দরকার, যাতে ২০২২ সালের হাওর অথবা ২০২৪ সালে ফেনী ফ্ল্যাশ-ফ্লাডের মতো দুর্যোগ ও জনদুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
২০২৪ সালের বন্যায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা এবং বন্যা মৌসুম শুরুর আগেই মেরামত প্রয়োজন। এ ছাড়া অনেক দেশের অনুকরণে দুর্যোগের ক্ষতি পুনরুদ্ধারে কৃষি বীমার কথা ভাবতে হবে।
আজকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্যোগবিষয়ক ডিগ্রি বা কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হলেও স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে দুর্যোগ বিষয়ে অধিক বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা শিক্ষার্থীদের দুর্যোগ-সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়তে ভূমিকা রাখবে।
আমাদের জাতীয় বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ নগণ্য। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিকে অনেক ক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘সরকারের অবদান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি খাতে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখে। জাতিসংঘ বলছে, দুর্যোগের আগে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে দুর্যোগের পরে ১০ ডলার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভব। আসন্ন জাতীয় বাজেটে দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণসহ দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রইল।
পাশাপাশি অনেক দেশের অনুকরণে দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সর্বমহল তথা সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্যোগ কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচরণবিধি (কোড অব কন্ডাক্ট) ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যক্তির প্রতি সম্মান’ এবং ‘দয়া নয়, সাহায্যপ্রাপ্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার’ প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিধি ও অঙ্গীকার প্রতিপালনে চাই সবার আন্তরিকতা।
এম. এ. হালিম: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি; দুর্যোগ, জলবায়ু ও মানবিক-বিষয়ক বিশ্লেষক
halim_64@hotmail.com