রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয়— রুল জারি
Published: 9th, March 2025 GMT
রাঙামাটি জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে সদস্য না নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন দেশের সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক নয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তী পরিষদ পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না— এই মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রণতি রঞ্জন খীসা ও রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যাকে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। আজ রবিবার (৯ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, জসিম উদ্দিন, পুলিন বিহারী চাকমা ও উথান মারমা হাইকোর্টে একটি রিট করলে রবিবার হাইকোর্ট থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। রিটকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মো.
রিটকারীদের আইনজীবী সুলতান উদ্দীন জানিয়েছেন, আদালত রিট আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি উপজেলা থেকে সদস্য নিয়োগ না করে জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় তা জানতে এবং প্রজ্ঞাপনটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন। পরিষদের দুই সদস্য রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রণতি রঞ্জন খীসাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।
কেন দুই সদস্যকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে এই আইনজীবী জানান, তাদের মধ্যে রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা বৈবাহিকসূত্রে নিজের পরিচয় পরিবর্তন করায় নিজ জনগোষ্ঠীর কোটায় বিবেচিত হতে পারেন না এবং প্রণতি রঞ্জন খীসার বিরদ্ধে হত্যা মামলা আছে, যা থেকে তিনি দায়মুক্ত নন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার জানিয়েছেন, আদালতের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিস্তারিত এখনো জানেন না। কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর সবার সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত হয় তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু জেলার ১০ উপজেলা থেকে প্রতিনিধি না নেওয়া, এক সম্প্রদায় থেকে নিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের পরিচয় দেওয়া, হত্যা মামলার আসামিকে সদস্য করা এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠিত হওয়ায় অভিযোগ উঠলে ব্যাপকভাবে সমালোচনা শুরু হয়। এরই প্রতিবাদে রাঙামাটির জুরাছড়ি, বরকল, কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলার জনসাধারণ মিছিল, মিটিং, স্মারকলিপি পেশ করে। পরবর্তীতে বঞ্ছিত চার উপজেলাবাসির পক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করেন রাজীব চাকমা, জসিম উদ্দিন, পুলিন বিহারী চাকমা ও উথান মারমা।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুন অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি পৃথক স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয়, যা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর পার্বত্য জেলা পরিষদ নামে তিন জেলাতে পুনর্গঠিত হয়। কিন্তু ভোটার তালিকা নিয়ে বিরোধের জেরে শুরুর প্রথমবারের পর আজ অবধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি পরিষদগুলোর। ফলে রাজনৈতিক সরকার প্রথমে চারজন সদস্য ও একজন চেয়ারম্যানের অন্তর্বর্তী পরিষদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালাত। আওয়ামী লীগের আমলে দুইবার ১৪ জন সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নিয়ে একইভাবে পুনর্গঠিত হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও একইভাবে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করে ১৫ সদস্যের পৃথক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ।
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র প উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, নতুন মুসিবত আনতে নয়: হাসনাত আবদুল্লাহ
আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তাড়ানো হয়েছে, নতুন কোনো মুসিবত আনার জন্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার সন্ধ্যায় নিজ উপজেলা কুমিল্লার দেবীদ্বারে দোয়া ও ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আবার দেশের মানুষের জন্য মুসিবত হয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, নতুন কোনো মুসিবত আনার জন্য নয়।
আমরা যেভাবে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যেমন অবস্থান ছিল, তেমনই যারা নতুন করে ফ্যাসিবাদ হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের একই অবস্থান থাকবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কোটা আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে এক দফা আন্দোলন এবং আজকে ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, নিরলস পেশাদারির মধ্য দিয়ে সমাজের বাস্তব চিত্রগুলো উঠে আসছে। আমি প্রত্যাশা করব, গণমাধ্যমে এই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের আমলে নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতা দেখেছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা পেয়েছে গণমাধ্যম, তা এই সময়ে এসে ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘দেশ সংস্কারের কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমরা যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে যাচ্ছি, সে ক্ষেত্রে আপনারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ভূমিকা রাখবেন। কোনো ধরনের পেশিশক্তি, কোনো ধরনের রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথানত করবেন না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মতামত গড়ে ওঠে। জাতীয় নাগরিক পার্টি যে বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায়, আপনারা অখণ্ডিত ও বস্তুনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে তা সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন, এটি গণমাধ্যমের কাছে আশা করছি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপির ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। এরপর আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে দলের নিবন্ধন করা, এরপর দলের সাংগঠনিক বিস্তারের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা প্রথমত মনোযোগ দিচ্ছি সাংগঠনিক বিস্তারের দিকে। যেটির মধ্য দিয়ে আমরা নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। আমরা অবশ্যই সামনে নির্বাচন নিয়ে পর্যালোচনা করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে তাঁদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাঁরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এই ভূখণ্ড বা রাষ্ট্র থেকে কেউ বিশেষ সুবিধা নেবে, তা হতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কোনো অন্যায় করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ পুলিশ বাহিনীকে লাঠিয়াল বাহিনী ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহার করেছে। পুলিশসহ অন্যান্য যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তিনি তাদের বলতে চান, যদি তারা মনে করে, আবার কোনোভাবে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে, তারা তাদের মডেলের পুলিশিং করবে, সেটি বাংলাদেশে আর কখনোই হবে না। জনগণ যে ধরনের পুলিশিং চায়, সেই পুলিশিংয়ে তাদের তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।