ময়লার ভাগাড়ে পড়ে ছিল হাত-পা বাঁধা পোড়া মরদেহ
Published: 9th, March 2025 GMT
রশিতে বাঁধা হাত-পা। দেহের একটা অংশ পোড়া। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, ময়লার ভাগাড়ে পড়ে থাকা মরদেহটি পুরুষ নাকি নারীর। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে গলিত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যায় শ্রীপুর থানা পুলিশ পরিচয়হীন মরদেহটি উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এক পথচারী ময়লার ভাগাড়ে কলা গাছের গোঁড়ায় কিছু একটা পড়ে আছে দেখতে পান। এগিয়ে গিয়ে দেখেন পচে যাওয়া ও আংশিক পোড়া মরদেহ পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তিনি বিষয়টি স্থানীয়দের জানান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
তারা আরও জানান, বেশ কয়েকটি কলাগাছের গোঁড়ায় পড়ে ছিল পোড়া মরদেহটি। হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা। বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকা লাশটি পচেও গেছে।
শ্রীপুর থানার এসআই সুজন কুমার পণ্ডিত বলেন, লাশটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশটি কোনো নারী নাকি পুরুষের তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে মাথার চুল দেখে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি পুরুষের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়ল র ভ গ ড় মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার হাতে লাঠি। ‘খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন/রুখে দাঁড়াও জনগণ’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের/বিচার করো, করতে হবে’, ‘ধর্ষকেরা ধর্ষণ করে/প্রশাসন কী করে?’ সমস্বরে এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনসহ নারীর ওপর একের পর এক সহিংসতার প্রতিবাদে গতকাল রোববার এভাবেই লাঠি নিয়ে মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকাসহ দেশের
বিভিন্ন স্থানে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচিতে হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সমাবেশ থেকে ধর্ষণের প্রতিটি ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণ, নিপীড়নসহ নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে; কিন্তু সরকার কার্যত নির্বিকার। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যান। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠন করতে হবে।
মাগুরায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীর ওপর একের পর সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ধর্ষণসহ নারীর ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, মশালমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে অন্তত ৩৫টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে অংশ নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষও এসব কর্মসূচিতে ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বিভাগ ও সংগঠনের ব্যানারে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা। তাঁরা স্লোগান তোলেন ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’।
প্রতিবাদ না করা পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না—সে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা কেন করতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার?
বিভিন্ন সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণ ও সহিংসতার শিকার সবার পাশে তাঁরা আছেন। ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে।
বেলা তিনটার দিকে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে লাঠিমিছিল শুরু হয়। এই মিছিল ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে। মিছিলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন। পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তাঁরা। এই সমাবেশ থেকে ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণের ঘটনার বিচারসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লেখক নিগার সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে লাঠি নিয়ে এসেছেন। শিশু, নারীসহ প্রত্যেকের নিরাপত্তা চান তাঁরা।
দিনভর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশের পর রাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এই মিছিল ভিসি চত্বর ও শাহবাগ মোড় হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে একটা তিন বছরের বাচ্চাও সেইফ (নিরাপদ) না, নব্বই বছরের বৃদ্ধাও সেইফ না, আমার মা–বোনেরা আজ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে (গণপরিবহন) সেইফ না, তারা কোথাও সেইফ না। একজন মুনিয়া, একজন আছিয়া—এরা প্রতীকী, এদের বিচার করার পর বাকিদের বিচার করতে হবে।’
রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন। পাঁচ দফার মধ্যে মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনার বিচার এক মাসের মধ্যে শেষ করার দাবি জানানো হয়।
ধর্ষণের বিচারে পৃথক ট্রাইব্যুনালের দাবি
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে; এসব বন্ধ করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার অধিকার রাখে না।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা। সমাবেশে শিক্ষকেরা বলেন, বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে এমন বিচারহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতা কখনোই কাম্য নয়। সবাইকে নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সুমন দাস নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন যদি থেকেও না থাকার মতো করে থাকে, তাহলে এ প্রশাসনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
এই সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণ, খুন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রুত এর প্রতিকার করেন। যদি না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।
দুপুরের এই কর্মসূচির পর গত রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করেন তাঁরা। অবরোধ চলাকালে এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের এত মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। ধর্ষকদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পরে রাতে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল বের করা হয়। এর আগে দুপুরের বিক্ষোভ সমাবেশে বলা হয়, দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন রয়েছে; কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই। নারী-পুরুষ সবাইকে ন্যায়বিচার ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চসংলগ্ন আমতলায় গতকাল দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, নারীরা প্রতিনিয়ত অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এ দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত ও অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত ও নারীদের যথাযথ নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল সন্ধ্যার পর মশালমিছিল বের করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক, মহানগর দায়রা জজ আদালত, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
মাগুরায় শিশুসহ দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে যান তাঁরা। পরে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বলা হয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বিভিন্ন সময় ধর্ষণকারীরা পার পেয়ে যায়। ফলে বারবার এমন ঘটনা ঘটে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল সকালে ঢাকায় নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গতকাল দুপুরে মাগুরায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেলা ১১টায় মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার বিচার চান, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চান। বিচার নিশ্চিত না হলে ঘরে ফিরবেন না তাঁরা।
সরকারের দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সমাবেশে শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ঘর থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। এটা হঠাৎ করে হচ্ছে না। সমাজ এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করছে। ধর্ষণের শাস্তি পাওয়া অপরাধীও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। নির্যাতন যাদের থামানোর কথা, তারা চোখ বন্ধ করে রাখছে। তিনি বলেন, নির্যাতক যখন যেটা সুবিধা মনে করে, সেটাই ব্যবহার করে।
নারী নির্যাতনের অতীতের ঘটনাগুলোতে প্রতিকার পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, নির্যাতনের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা চলছে। এই সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভিন্ন কিছু করবে, সেটাই প্রত্যাশা; কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কাম্য নয়।
গণ-অভ্যুত্থানের পরের সরকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দুর্বলতা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে।
অধ্যাপক স্বপন আদনান বলেন, মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার পরিবারের ভেতরেই। নারী নির্যাতনের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করা হচ্ছে, সাফাই গাওয়া হচ্ছে। উত্ত্যক্তকারী বীরের সংবর্ধনা পাচ্ছে। সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। সরকারকে কঠোর হতে হবে।
পোশাক নিয়ে নসিহতের ছুতায় নৈতিক পুলিশগিরি
সমাবেশে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীর পোশাক নিয়ে নসিহতের ছুতায় নৈতিক পুলিশগিরি ও যৌন নিপীড়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ভুক্তভোগী নারী মামলা করলে লাঞ্ছনাকারী ব্যক্তিকে শাহবাগ থানায় গ্রেপ্তার করে আনা হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে একটি উগ্র সংগঠন ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) তৈরি করে মধ্যরাত থেকে থানায় অবস্থান নেয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল চিহ্নিত অপরাধীকে ছাড়িয়ে আনা। এ সময় তারা সন্ত্রাসী অবস্থা তৈরি করে। থানা যেন তাদের কবজায় চলে যায়। তারা থানায় ভেতরে আটক ব্যক্তির লাইভ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে। তারা সুস্পষ্ট বার্তা দেয় যে অপরাধীর কৃতকর্মের জন্য বিন্দু পরিমাণে অনুশোচনা নেই।
এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর দায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট মহলের বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ঘটনাটিকে সুস্পষ্ট যৌন নিপীড়ন হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ভুক্তভোগী নারীর এনআইডি, ফোন নম্বরসহ সব তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে তাঁর নিরাপত্তা ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়ে। তাঁকে ফোনে ও মেসেঞ্জারে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। এই প্রবল মানসিক চাপ উপেক্ষা করতে না পেরে অবশেষে ভুক্তভোগী (বাদী) তাঁর মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কয়েক ঘণ্টার কম সময়ে ওই দোষী ব্যক্তি জামিন পেয়ে যান। শুধু তা–ই নয়, বিজয়ীর বেশে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়৷
শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই ঘটনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন দমন সেলে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যেত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী শাস্তির প্রক্রিয়ায় যাওয়া যেত। যে প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হচ্ছে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা। সে পথে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে এ ধরনের মামলা, গ্রেপ্তার, চাকরি থেকে ছাঁটাই—এগুলো অনেকের কাছেই অতিপ্রতিক্রিয়া মনে হয়েছে; যা এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে উসকে দিতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এই পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রথমত, থানা থেকে ভুক্তভোগীর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং থানা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির অশালীন বক্তব্যে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিচার করা। দ্বিতীয়ত, লাঞ্ছনার শিকার ওই শিক্ষার্থীকে যাঁরা সাইবার আক্রমণ করেছেন ও হত্যা–ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। তৃতীয়ত, মব তৈরির মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করাকে বীরত্ব বলে প্রচার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা। চতুর্থত, যৌন নির্যাতন এবং নৈতিক পুলিশির দায়ে অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তাঁকে বরখাস্ত করা।