দালালির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধীদের সংগঠকসহ দুজন আটক, ইয়াবা উদ্ধার
Published: 9th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সংগঠকসহ দুজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চারটি ইয়াবা বড়ি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার দুপুরে এ অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী।
আটক দুজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সংগঠক মো.
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে মো. জিদান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক পরিচয়ে হুমকি দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি তিনি হাসপাতালের অভ্যন্তরে ইয়াবা বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর রোববার দুপুরে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযানে হাসপাতালের ভেতর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সংগঠক মো. জিদান ও দালাল ইকবালকে আটক করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে চারটি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, জিদান নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক পরিচয় দেন। তিনি হাসপাতালে বিভিন্ন রোগী নিয়ে এসে নানাভাবে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতেন। দালালদের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার হন। প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় দালালের উৎপাত কিছুটা কমবে বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার পর বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ জাবেদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটির জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় সদর থানা কমিটির সংগঠক মো. জিদানকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো। বহিষ্কৃত ব্যক্তির কোনো ধরনের অপকর্মের দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না। জেলায় দায়িত্বরত সব পর্যায়ের ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে সাংগঠনিক সর্ম্পক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিরব রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, জিদান নারায়ণগঞ্জ সদর থানা প্রতিনিধি হিসেবে জেলা কমিটিতে ছিলেন। আটকের বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছির আহমেদ প্রথম আলোকে বলে, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে দালালি ও স্টাফদের হুমকি দিয়ে সুবিধা আদায় করতেন জিদান। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী জিদান ও ইকবালকে আটক করেছে। তাঁদের কাছ থেকে ছুরি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র স গঠক কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনার বন্ধ করে রাখা ত্বকী হত্যার বিচারসহ সব হত্যার বিচার দাবি
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১২ বছর উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ সব হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ দাবি করেন। সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। গুম, খুন, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করে বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ভয়াবহ এক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতার মোহ তাঁকে উন্মাদ করে ফেলেছিল। হাজারো ছাত্র-তরুণদের হত্যা করেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি পুরোপুরি নির্ভর করেছিলেন পুলিশ ও মাফিয়া গোষ্ঠীর ওপর। জনগণ ছিল উপেক্ষিত। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারকে দিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছিলেন। সেই পরিবার আজকে তাঁর মতোই পালিয়ে গেছে।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘ওসমান পরিবারের সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জের মানুষের রক্তে গড়া সম্পত্তি। আমাদের দাবি, ওসমান পরিবারের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে মন্ত্রী, এমপি, আমলা—সব পর্যায়ে তারা লুটের টাকা বণ্টন করেছে।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘তাদের নিজ দলীয় নেতারা বলেছেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে “নাসিম ওসমান সেতু”, “শামসুজ্জোহা সড়ক” ও “নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে। তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জে এই মানুষগুলোর অবদান কী? কেন একসঙ্গে তিনটি রাস্তা ও সেতুর নাম একই পরিবারের নামে করা হলো। তারা তখন আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছিল। আমরা আজকে সরকারের কাছে এই খুনি পরিবারের নামে থাকা সেতু ও সড়কের নাম পরিবর্তন দাবি করছি।’
অনুষ্ঠানে সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, বাসদের জেলার সদস্যসচিব আবু নাইম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু আজও অভিযোগপত্র পেশ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়জন ঘাতককে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে কাজল হালদার নামের একজন জবানবন্দি দেন। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।