সিরিয়ার নতুন শাসক আল–শারার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের আলাউই সম্প্রদায়ের যোদ্ধাদের সংঘর্ষে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। কারা এই আলাউই সম্প্রদায়, তাদের ওপর নতুন সরকারের এতো ক্ষোভই বা কেন?
সিরিয়ার আলাউইরা একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ তারা। শিয়া ইসলাম থেকে উদ্ভূত, তাদের স্বতন্ত্র বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, আলাউইরা সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে লাতাকিয়া এবং তারতুস প্রদেশে কেন্দ্রীভূত।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসনকারী আসাদ পরিবার আলাউই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তাদের শাসনামলে আলাউইরা সামরিক বাহিনী এবং সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিল।
আসাদ পরিবারের অনুগত সশস্ত্র যোদ্ধারা সম্প্রতি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার আসাদের অনুগত সশস্ত্র ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। একইসময় সশস্ত্র সুন্নি গোষ্ঠীগুলো আলাউইদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এ ঘটনা সিরিয়ার সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে আরো গভীর করে তোলে। এই উত্তেজনা বৃদ্ধি আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনকারী হায়াত তাহরির আল-শামের কর্তৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আলাউই গ্রামগুলোতে ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে বন্দুকধারীরা রাস্তায় অথবা তাদের দরজায় বেসামরিক নাগরিকদের, যাদের বেশিরভাগই পুরুষ, হত্যা করেছে। ঘরবাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী পাহাড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলির মধ্যে একটি, বানিয়াস, বেশ কয়েকটি নৃশংস হামলার সাক্ষী হয়েছে।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ এবং ছাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে, বন্দুকধারীরা স্থানীয়দের তাদের প্রতিবেশীদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাধা দিয়েছিল।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার লুট
সাভারের আশুলিয়ায় দোকান বন্ধের সময় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাতরা ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।
রোববার রাতে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম দিলীপ কুমার দাস (৪৮)। সে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের দুলাল দাসের ছেলে এবং নয়ারহাট বাজারের দিলীপ স্বর্ণালয়ের মালিক।
জানা যায়, ডাকাতদের হামলায় আহত ওই ব্যবসায়ীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার দাস রাতে দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় একদল ডাকাত দোকানে এসে দিলীপের হাতে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ ধরে টান দেয় । এতে তিনি বাধা দিলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে টাকার ব্যাগ ও সেখানে থাকা প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা কয়েকটি ককটেল বোমা ফাটিয়ে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পর বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সেখানে ছুটে এসে দিলীপ দাসকে দোকানের সামনে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের ফুপাতো ভাই খোকন সরকার বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে শাটার নামানোর সময় কয়েকজন ডাকাত তার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দেয়। কিন্তু দিলীপ ব্যাগ না ছাড়ায় চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে স্বর্ণ এবং টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নিহতের স্ত্রী সরস্বতী দাশ বলেন, আমার স্বামী প্রতিদিন ৯টার মধ্যে বাসায় আসতো। কিন্তু ওরা আর আমার স্বামীকে বাসায় আসতে দিল না। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেরাজুর রেহান পাভেল জানান, আহত অবস্থায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বুকে বড় ক্ষত ছিল, গালের ডানে ক্ষত ছিল এবং পিঠেও ক্ষত ছিল। আমরা চিকিৎসা শুরু করেছিলাম, স্যালাইন এবং ওষুধ চলছিল, পরে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যেই তিনি মারা যান। আমরা ধারনা করছি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেছেন।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধারে আমাদের কার্যক্রম চলছে।