সশস্ত্র বাহিনীর ৮ স্থাপনার নাম পরিবর্তন, আরও ১৬ স্থাপনার নাম বদল হচ্ছে
Published: 9th, March 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর আটটি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি, বিমানবাহিনীর তিনটি, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের একটি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্থাপনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপনে আটটি স্থাপনার আগের নাম বাতিল করে নতুন নামকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আওতাধীন আরও ১৬টি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনার নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। নতুন নামকরণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আটটি স্থাপনার নাম বদলের বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চট্টগ্রামের নিউমুরিং এলাকায় অবস্থিত বানৌজা বঙ্গবন্ধুর নাম পরিবর্তন করে বানৌজা খালিদ বিন ওয়ালিদ, ঢাকার নামাপাড়া খিলক্ষেতে অবস্থিত বানৌজা শেখ মুজিব নাম বদল করে বানৌজা ঢাকা, কক্সবাজারের পেকুয়ায় অবস্থিত বানৌজা শেখ হাসিনার নাম পরিবর্তন করে বানৌজা পেকুয়া, ঢাকার সেনানিবাসে কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকারের নামে করা হয়েছে।
এ ছাড়া কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার বিমানবাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার, যশোরে বিএএফ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের পরিবর্তে বিএএফএ কমপ্লেক্স করা হয়। ঢাকায় সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের নাম বদল করে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্স এবং শেরেবাংলা নগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণভবন কমপ্লেক্সে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে প্রতিরক্ষা জাদুঘর করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামে রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬টি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের পরিবর্তে যমুনা সেনানিবাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাসের নতুন নাম হবে মিঠামইন সেনানিবাস, বরিশালের লেবুখালিতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের বদলে বরিশাল সেনানিবাস, শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাসের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা সেনানিবাস করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের নাম পরিবর্তন করে বিএমএ একাডেমিক কমপ্লেক্স, হালিশহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সের নাম বদল করে আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, কক্সবাজারে রামু সেনানিবাসে অবস্থিত মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারির নাম পরিবর্তন করে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ঢাকার বিজয় সরণিতে অ্যাডহক বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের নাম বদল করে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম চরজানাজাতের নাম পরিবর্তন করে কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম জাজিরা, ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পরিবর্তে স্বাধীনতা জাদুঘর, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিবর্তে যমুনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জের জলসিঁড়িতে অবস্থিত শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জলসিঁড়ি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শরীয়তপুরের জাজিরায় অবস্থিত শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ জাজিরার বর্তমান নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশালের লেবুখালিতে অবস্থিত শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম বদল করে বরিশাল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার (ইবিআরসি) হলে অবস্থিত শেখ কামাল কমপ্লেক্সের নাম পরিবর্তন করে ইবিআরসি একাডেমিক কমপ্লেক্স এবং হালিশহরে এসিএন্ডএসে অবস্থিত মুজিব ব্যাটারি সড়কের নাম বদলে গোলন্দাজ সড়ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ১৬টি নতুন নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স র ন ম অবস থ ত শ খ অবস থ ত ব য় অবস থ ত ন মকরণ কল জ র জ দ ঘর বর শ ল র পর ব
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের কথা রাখল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রধান ফটকের নাম হচ্ছে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। গত বছরের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আন্দোলনরত ক্লান্ত–শ্রান্ত শিক্ষার্থী ও জনতাকে পানি পান করাচ্ছিলেন। ‘ভাই, পানি লাগবে পানি’ বলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেশবাসীর হৃদয় নাড়িয়ে দেয়। সেই মুগ্ধর স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’।
আগামীকাল রোববার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এর আগে গত ৫ আগস্টের পরপরই নির্মাণাধীন ওই ফটকের সামনে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ লিখে দেন শিক্ষার্থীরা। সেটিই ফটকের নামকরণ করার জন্য দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। ‘বিজয় তোরণ’ হিসেবে ফটকটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল।
আগামীকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নাজমুল আহসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হারুনর রশীদ খান, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. নূরুন্নবী এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও মুগ্ধের জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। সভাপতিত্ব করবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মীর মুগ্ধর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও বর্তমান উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। ওই সভায় উপস্থিত থেকে মীর মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান (দীপ্ত) ও জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন।
সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। ওই দাবিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দাবি ছিল প্রধান ফটকের নাম শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া। অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল ১৮ জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় তা পালন করা, টিএসসির সামনে শহীদ মীর মুগ্ধর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন এবং এই আন্দোলনে সব শহীদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা।
পরবর্তী সময়ে মো. রেজাউল করিম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণের উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৩০তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নাম শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ করা হয়।