সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঠিমিছিল হয়েছে। রোববার বিকেল তিনটার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিলে বাঁশের ছোট ছোট লাঠি হাতে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে মিছিলটি আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

এসময় ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণের বিচার দাবি করেন তারা।

লাঠি মিছিলের ব্যানারে লেখা ৯ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে- ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের উদ্যোগে, যৌন হয়রানির প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ, ধর্ষণের মামলা গ্রহণে থানার জটিলতা দূর করা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীকে সকল প্রকার সুরক্ষা দিতে সাক্ষী সুরক্ষা আইনের পুনঃপর্যালোচনা ও প্রয়োগ করা।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও বহিষ্কারের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা; দায়িত্বশীল কেউ ‘স্লাটশেমিং’ করলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া; এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে ‘স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল’ কার্যকর করা।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন লেখক নিগার সুলতানা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে লাঠি নিয়ে এসেছেন। তারা শিশু, নারীসহ প্রত্যেকের নিরাপত্তা চান। 

ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার দ্রুত করার আহ্বান জানিয়ে নিগার সুলতানা বলেন, দ্রুত বিচার মানে এই নয় যে কারও সঙ্গে আবার অন্যায় হোক। অপরাধীরা শাস্তি পেলে অপরাধ করার প্রবণতা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চব্বিশের বন্যা স্বাভাবিক ছিল না: প্রধান উপদেষ্টা

২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। চব্বিশের ওই বন্যা স্বাভাবিক ছিল না বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই বন্যা শুরু হয়। অন্য বছরগুলোতে যে বন্যা হয়, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। তাই এই ক্ষতি বা স্থায়িত্ব নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না আমাদের। তবে দিন যত যাচ্ছিল পরিস্থিতি তত কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এটা স্বাভাবিক বন্যা ছিল না।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘরের চাবি তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। তেজগাঁওয়ের কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। 

এ সময় চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা থেকে উপকারভোগীদের হাতে চাবি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে উপকারভোগী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ধন্যবাদ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বন্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সবাই সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল তা বুঝতে পেরেছি বন্যা চলে যাওয়ার অনেক পরে।”

“বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছিল, তাদের কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল, বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে।”

টাকা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, “টাকা দিতে গেলে এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা অনেক রকম হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌঁছাবে না। তখন প্রস্তাব এসেছিল যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করার, সেই প্রকল্পের বিষয়ে জানা ছিল না, তবে নামটা জানা ছিল। তখন ভাবলাম যে এটা কী করা যায়, পরে জানলাম এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন স্বস্তি পেলাম, আসলে টাকাটা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।”

টাকার সঠিক ব্যবহার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক সময় টাকা ব্যবহার করা হলেও গুণগতমান ঠিক হয় না। আজকে গুণগতমানের ব্যাপারেও আশ্বস্ত হলাম। আমরা যে টাকা দিয়েছিলাম তার অর্ধেক টাকাতে কাজটা হয়েছে। একটা আনন্দের খবর।”

২০২৪ সালের ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। যে সকল পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নাই এ রকম ৩০০টি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক থেকে মনোনীত অন্যান্য এক বা একাধিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।

৩০০টি ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঘর বরাদ্দ করা হয়। ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়।

প্রতিটি ডিজাইনে ২টি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। উপকারভোগীদের নিজ বসতভিটার স্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো একজন উপকারভোগীর জন্য যেখানে যে ডিজাইন প্রযোজ্য হবে সেভাবেই গৃহগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

ঘরগুলো নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল হতে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০০ টি ঘর নির্মাণে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।” 

এই‍ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডি’র প্রকৌশলীগণ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।”

প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।” 

তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর এরইমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।

গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।

উজানের তীব্র ঢল আর অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত বছরের ২০ অগাস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরে দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।

ওই সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যায় ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০ লাখ ২৪,২০২ জন। এসব জেলায় মারা যান ৭১ জন। এর মধ্যে ২৮ জনই ছিলেন ফেনীতে।

মৃতদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৪৫ জন। এছাড়া, ১৯ শিশু এবং ৭ জন নারী মারা যান।

জেলাভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ফেনীতে মারা যান সবচেয়ে বেশি ২৮ জন। এরপর কুমিল্লায় ১৯, চট্টগ্রামে ৬, নোয়াখালীতে ১১ জন, কক্সবাজারে ৩ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, লক্ষ্মীপুর এবং ও মৌলভীবাজারে ১ জন করে মারা যান। দুর্গত এলাকায় ৩,৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়।

৩৬ দিনের গণ-আন্দোলন আর সহিংতায় সরকার পতনের ধাক্কা সামলে দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিতে মাত্র কজ শুরু করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ঠিক তখনই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে।
দুই সপ্তাহের মাথায় আসা এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার দ্রুতই তৎপরতা দেখিয়েছিলো।

দেশের ১১ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার কেন্দ্র হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ