জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু কাজ করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ছয় মাসের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জন তুলে ধরতে আজ রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানানো হয়। বিকেলে আব্দুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গত ছয় মাসের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জন নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, এক অস্থির ও অস্বাভাবিক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন। ভঙ্গুর ও স্থবির বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকা আবার সচল করা ছিল নতুন প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

উপাচার্য আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস চালু করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতকরণ এবং আবাসিক হলগুলোকে সংস্কার করার যে চ্যালেঞ্জ তাঁদের সামনে ছিল, সেসব তাঁরা দ্রুততম সময়ে করেছেন।

অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনিক সংস্কার ও পরিবর্তন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে জোরদার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের ৬ মাসে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—আবাসিক হলে গণরুম প্রথা বিলুপ্তিকরণ; জুলাই বিপ্লবসংক্রান্ত পদক্ষেপ যেমন—বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান কর্নার’ এবং জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, আহত ১২ শিক্ষার্থীকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা; নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষকালীন আর্থিক সহায়তা; উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ; গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চায় অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাব প্রতিষ্ঠা; ছাত্ররাজনীতির সংস্কার নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন; ডাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত তিনটি পৃথক কমিটি গঠন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এ ছাড়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও প্রশাসনিক বিভিন্ন উন্নয়ন যেমন—তিনটি মেকআপ প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়নের আশ্বাস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও হলসমূহে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ, চীনের আর্থিক সহায়তায় নারীদের জন্য একটি হল নির্মাণ প্রকল্প, শহীদ মেডিকেল সেন্টারকে অটোমেশনের আওতায় আনা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ, নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচল নিয়ন্ত্রণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিষয়ক এলটির কার্যবিধি বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর বাইরে শিক্ষাগত উৎকর্ষ ও গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ; কাউন্সেলিং, টিকা কার্যক্রম, রক্তদান কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে পদক্ষেপ; ক্যাম্পাসের শাটল বাস সার্ভিস চালুকরণ; প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচি এবং বৃক্ষমেলাসহ পরিবেশ সংরক্ষণসহ শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় করা মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিলাম, বইমেলা ও রমজানের কারণে তা শিথিল থাকলেও রমজানের পর থেকে সেই নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আবারও শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা ও মামুন আহমেদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য পদক ষ প র জন য আহম দ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ

বছর চারেক আগে ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। দুই বছর না যেতেই বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউ, গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারে এই দশা। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চণ্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায়।
মহাসড়কটিতে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংক কর্মকর্তা শামিম হোসেন ও ট্রাকচালক হৃদয় খান বলেন, সড়কের অনেক স্থান দেবে আলপথের মতো হয়ে গেছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবাহন সাইড দেওয়া-নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে দিনাজপুর পর্যন্ত। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। 
কোতোয়ালিসহ ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এই মহাসড়কে ১১৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন ৪৫ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ফুলবাড়ীতে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রশস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে আট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। প্রশস্ত ও সংস্কারের কাজ শেষ করার দুই বছরের মাথায় আবারও রাস্তাটি দেবে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, তারা সেসব জায়গা সংস্কার করেছেন। এখন চুক্তির সময় ২০২৪ সাল পার হয়েছে। তাই তাদের আর কাজ করার সুযোগ নেই। 
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। সড়কের শতকরা ৬০ ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের উপকরণ দ্বারা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্দের অধিকাংশ 
টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 
এ বিষয়ে দিনাজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময় ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে যেসব জায়গা উঁচু-নিচু হয়েছে, তা আমরা কেটে ফেলব। সড়কে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিন দেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ