অধ্যাপক টি এ চৌধুরীর জন্ম ঢাকায়, ১৯৩৭ সালের ১১ অক্টোবর। তাঁর বাবা মজিরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। স্কুলে যাওয়ার বয়সে তাঁর বাবা বদলি হয়ে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়, সে কারণে টি এ চৌধুরীর স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। তাঁর চাচা একদিন সরাসরি ভর্তি করে দিলেন তৃতীয় শ্রেণিতে। তাতে যা হওয়ার তা-ই হলো, স্কুলে মোটেও ভালো করছিলেন না। বেশির ভাগ বিষয়ে টেনেটুনে পাস করেন।

এভাবেই চলছিল। দেশভাগের পর বাবা সপরিবার ঢাকায় ফিরে এলেন। এবার প্রথমে ভর্তি হলেন আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে, তারপর সপ্তম শ্রেণিতে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। স্কুলে কখনোই প্রথম সারির ছাত্র ছিলেন না, খুব ভালো ফল কখনোই করতে পারেননি। কিন্তু এই ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকেই ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় স্টার নম্বর পেয়ে পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন। ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজে।

১৯৫৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন। টি এ চৌধুরীর মনের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল গণিত বা পদার্থবিদ্যা পড়বেন। কিন্তু একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষায় হার্টে একটি জন্মগত ত্রুটির জন্য তাঁকে আনফিট ঘোষণা করে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এই বোর্ডে কোনো বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। জেদ চেপে গেল টি এ চৌধুরীর। তিনি আপিল করলেন কলেজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। তাঁর আপিলের কারণে একজন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হলো। যিনি রায় দিলেন টি এ চৌধুরীর পক্ষে। ভর্তি হলেন তিনি। ১৯৬০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাস করলেন অসামান্য রেজাল্ট করে। পেলেন স্বর্ণপদক।

আরও পড়ুনআলী যাকেরের সারা জীবন২৭ নভেম্বর ২০২০সমাবর্তনের গাউন পরা টি এ চৌধুরী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প স কর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৪১, গ্রেপ্তার ৫৪

পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’–বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টি। চলমান তদন্ত কার্যক্রম ৩৯টি। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে ২২টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন ৮৭ জন।

১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত করা সামরিক কর্মকর্তা ৯ জন।

শেখ হাসিনাসহ চারটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উপস্থাপন করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে—এমন মামলা চারটি। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ (এক হাজারের বেশি ভিডিও), পর্যালোচনা, যাচাই–বাছাই ও জিও লোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান।

গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ