নিরাপত্তা শঙ্কায় আদালতে নেওয়া যায়নি আসামিদের, রিমান্ড শুনানিও হয়নি
Published: 9th, March 2025 GMT
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে রিমান্ড শুনানিও হয়নি।
পুলিশ বলছে, আদালতের মূল ফটকে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ করে রাখায় আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভেতর থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে তাঁরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের মূল ফটক ছেড়ে তাঁরা ভায়নার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় চার আসামির রিমান্ডের আবেদন, আদালতের ফটকে বিক্ষোভ৪ ঘণ্টা আগেমামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার মূল অভিযুক্ত শিশুটির বোনের শ্বশুরকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। এ ঘটনায় তখনো মামলা না হওয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পরদিন শুক্রবার তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। শিশুটির মা শনিবার মামলা করেন। এখন ধর্ষণের মামলায় প্রথম ওই আসামিকে (বোনের শ্বশুর) গ্রেপ্তার দেখাতে হবে। এ জন্য আসামিকে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা আছে। এ ছাড়া তিনিসহ অন্য আসামিদের রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা আছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
এ বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল রাত থেকেই রিমান্ড আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলাম। কিন্তু আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেওয়া যায়নি। দিনভর আন্দোলনকারীরা আদালতের ফটক ঘিরে রেখেছিল। আসামিদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছিল। আদালতে আনতে গিয়ে আসামিদের ওপর হামলা বা তার চেয়েও খারাপ কিছু হলে দায় কে নেবে? যাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন করছেন, তাঁদের তো এটুকু ধৈর্য ধরতে হবে। তাঁদের কারণেই যদি তদন্ত বিলম্বিত হয়, সেই দায় কে নেবে?’
আজ আদালতের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। অন্যথায় আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ‘মার্চ টু মাগুরা’ কর্মসূচি দেওয়া হবে। বেলা একটার পর ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি দল আসে। পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আদালতের ফটক থেকে সরে শহরের ভায়না মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানেও ধর্ষণে জড়িতদের জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’২ ঘণ্টা আগেমাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার দিবাগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। বৃহস্পতিবার অচেতন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে শিশুটি উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গতকাল শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র কর র কর মকর ত র জন য অবর ধ তদন ত ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে ব্যস্ত থাকায় শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা, কার্টনবন্দি করে লাশ মানিকগঞ্জে ফেলেন স্বামী
মানিকগঞ্জে বিউটি গোস্বামী (৩৯) নামের এক নারী তার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী বিউটি গোস্বামীকে নিজেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে এসির কার্টনে ভরে ভাড়া করা প্রাইভেট কারে ঢাকার উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকায় ফেলে দেন তিনি।’
ঘটনার চারদিন পর ফরিদপুর থেকে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি টিম স্ত্রী হত্যার অভিযোগে অলোক গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, গত শুক্রবার মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকা থেকে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কার্টন থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেন, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি বিউটি গোস্বামীর। দুই সন্তানের জননী বিউটি গোস্বামী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নিহারঞ্জন গোস্বামীর মেয়ে। স্বামী অলোক রঞ্জনের সঙ্গে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন তিনি। অলোক রঞ্জন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের মৃত প্রদীপ কুমার গোস্বামীর ছেলে। বিউটির লাশ উদ্ধারের পর দিন নিহতের বাবা নিহারঞ্জন গোস্বামী বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা হওয়ার পর ডিবিপুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। ৭ এপ্রিল রাতে ফরিদপুর থেকে বিউটির স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অলোক রঞ্জন জানিয়েছেন, স্ত্রী বিউটির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। অলোকের দাবি, বেশির ভাগ সময় ফেসবুক, অনলাইন বিজনেস ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন তার স্ত্রী বিউটি। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতে পারতেন না। কিছু বললেই মা-বাবা তুলে গালাগালি করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বিউটি গোস্বামী রান্না করতে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। পরে ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান ও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। পরে এসির কার্টনে ভরে রশি দিয়ে তা বাধা হয়। গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করা হয়। প্রাইভেট কারটির পেছনের সিটে কার্টনটি বসিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা এলাকায় আসেন তারা। সহযোগীর মাধ্যমে কৌশলে প্রাইভেট কারচালককে সামনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কের এগারোশ্রী এলাকায় স্ত্রীর মরদেহটি ফেলে দেন অলোক। শেষে ওই প্রাইভেট কারেই পালিয়ে যান তিনি ও সহযোগী।
গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় হয়। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।