দেশে নারীদের উন্নয়নে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ হলেও বাল্যবিবাহের হার কমেনি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে।

গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের একটি যৌথ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘গার্লস গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডলসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার ৩০ ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে।

‘১৯৯৯ বেইজিং ঘোষণা’য় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারীদের সার্বিক উন্নয়নে যেসব অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি কোনো দেশ। এদিকে ২০৩০ জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি থাকায় এ ক্ষেত্রে নতুন করে গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয় বিশ্বের অনেক দেশ তাদের কিশোরী মেয়েদের বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করে শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়েই নয় দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক সুফল লাভ করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। কেননা এখানে প্রতিনিয়তই নানা বৈষম্য, সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি এবং সুযোগ স্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে কিশোরীদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দিচ্ছেন ২৪ শতাংশ নারী। তা ছাড়া বিগত ১২ মাসে সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ২৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে মাত্র ৪৭ শতাংশ নিজেদের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তবে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিকভাবে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেড়ে ৭৯ দশমিক ১ বছর হয়েছে (গত ২৫ বছরে সাড়ে ৪ বছর বেড়েছে)।

নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রগতি হলেও ডিজিটাল দক্ষতার দিক দিয়ে উদ্বেগজনকভাবে পিছিয়ে আছে দেশের কিশোরী ও তরুণীরা। বিশ্বে যে সাতটি দেশে নারীদের ডিজিটাল দক্ষতার হার ২ শতাংশ বা তার চেয়ে কম, সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া সম্পন্ন করতে পারে ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ কন্যাশিশু। তাই প্রতিবেদনে কিশোরী মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ২০৩০ এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও অংশীজনদের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘জীবন দক্ষতা ও ডিজিটাল শিক্ষা অর্জনের সুযোগ নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি উচ্চ হারে বিদ্যমান শিশু বিয়ে এবং কন্যাশিশু ও নারীদের ওপর সহিংসতা মোকাবিলা করা; কেননা এর ফলে অল্প বয়সে ও বিপজ্জনকভাবে সন্তান ধারণের ঘটনা ঘটে এবং প্রায়ই প্রাণ হারায় ছোট্ট-বয়সী মা ও তার সন্তান।’

বাংলাদেশে ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো অনেক কন্যাশিশু স্কুলে যায় না। তারা বাল্যবিবাহের মতো ক্ষতিকর চর্চা ও সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সম্ভাবনার বিকাশের জন্য ‘অল-হ্যান্ডস-অন-ডেক’ অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ এখন থেকে সবাই মিলে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা আবশ্যক।’

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, ‘শিশুবিয়ে, অল্প বয়সে ও জোরপূর্বক বিয়ের হার কমানো, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি এবং কিশোরীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও জনপরিসরে মেয়েদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনো আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স বছর ব

এছাড়াও পড়ুন:

রেফারিকে বরফ ছুঁড়ে মেরে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ রুডিগার

রিয়াল মাদ্রিদের জন্য সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না। মাঠ ও মাঠের বাইরে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন লস ব্ল্যাঙ্কসরা। তারা চ্যাম্পিয়নস লিগেরে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে বাদ পড়ে। এরপর শনিবার (২৬ এপ্রিল) কোপা দেল রে’র ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হেরে বসে।

এই ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তে একটা সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে রেফারির দিকে তেড়ে যেতে চান রিয়ালের ডিফেন্ডার অ্যান্তোনিও রুডিগার। বেঞ্চের বাকিরা মিলে তাঁকে থামায়। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইফ) এমন আচরণের জন্য জার্মান ডিফেন্ডারকে ৬ ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে। আরএফইফের আচরণবিধির ১০১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রেফারিকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়গও আসতে পারত রুডিগারের উপর।

একই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখানো লুকাস ভাসকেসকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে রিয়ালের ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড ব্যালিংহ্যামের লাল কার্ড প্রত্যাহার করে নিয়েছে আরএফইফ।

আরো পড়ুন:

পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ হাসি বার্সার

বার্সার বিপক্ষে ফাইনালের আগে রিয়ালের শঙ্কা সাম্প্রতিক ফর্ম

রেফারি রিকার্দো দে বুরহোসের তার রিপোর্টে লিখেন, “বদলি খেলোয়াড় রুডিগার ১২০তম মিনিটে টেকনিক্যাল এরিয়া থেকে একটি বস্তু ছুড়ে মারার কারণে লাল কার্ড দেখেন। তাকে শান্ত করতে দলের কোচিং স্টাফের অনেক সদস্যকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, কারণ তিনি আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছিলেন।”

ঢাকা/নাভিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ