‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ফেজ-৩’ ও ‘মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা’ প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে রবিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্প দুটির কাজ ১০ বছর ধরে আটকে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘‘এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে! অথচ ঢাকা শহরের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। ভূ–গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে দিন দিন আমরা পরিবেশকে বিরাট হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। সংকট থেকে উত্তরণের রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সে কাজটা এত বছর ধরে করা হয়নি।’’

রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কাছে এই প্রকল্প দুটি শুরু করতে কোথায় বাধা রয়েছে তা জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর পাশাপাশি খরচ কমানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরে মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতি বছর ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে; যা টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ভবিষ্যতে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে।

এ সংকট মোকাবিলায় মেঘনা নদী থেকে সরবরাহকৃত পানি ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩) ’–এ পরিশোধন করে ঢাকা শহরে বসবাসকারীদের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘মেঘনা নদী রক্ষা মহাপরিকল্পনা’ নেওয়া হয়।

জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রকল্পে সহায়তা করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বিদেশি সংস্থা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যহত রাখবে এবং প্রয়োজনে সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১০ বছর আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। পরিকল্পনার কাজটি সম্পন্ন হলেও বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, বাংলাদেশের অন্য নদীগুলোও বিভিন্ন রকমের সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় মেঘনা নদীকে রক্ষা করা সরকারের অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘‘মেঘনা নদী নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা। এটাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তা না হলে এ এলাকার জনজীবন বাঁচানো যাবে না।’’

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতি দ্রুত দাপ্তরিক কাজ শেষ করে চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর পাশাপাশি, নদী রক্ষা কমিশনকে কীভাবে আরো সক্রিয় করা যেতে পারে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও নদী রক্ষা কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ১০ বছর র জন য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

হুঁশিয়ারির পরও নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন তেল

চট্টগ্রাম নগরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ গত কয়েক দিনে কিছুটা বেড়েছে। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। যদিও দুই দিন আগেও দাম ছিল আরও পাঁচ টাকা বেশি।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিকারকেরা ১৫৩ টাকা দরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল সরবরাহ করবেন। পাইকারি পর্যায়ে তা ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা বিক্রি করা যাবে। যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বাজারে খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা রয়েছে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা।

মঙ্গলবার সার্কিট হাউসের সভার এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আমি দেখতে চাই, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি না ব্যবসায়ীদের শক্তি। তেলের সাপ্লাই যদি পর্যাপ্ত না হয়, তবে গুদাম পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে। কীভাবে ভোক্তা তেল পাবে, সেই ব্যবস্থা করুন। না হয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

হুঁশিয়ারি মানা হচ্ছে না খুচরায়

জেলা প্রশাসকের ঘোষণার দুই দিন পরও খুচরা বাজারে তেলের দাম কমেনি। তবে আজ শুক্রবার নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, চন্দনপুরাসহ আশপাশের বাজার ও খুচরা দোকানে নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা দরে। তবে পাইকারি বাজারে কমেছে খোলা তেলের দাম। পাইকারি বিক্রেতারা ১৫৫ থেকে ১৫৬ টাকার মধ্যেই তেল বিক্রি করছেন।

খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন ২০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। তবে গুটিকয়েক দোকানে ১৮৫ টাকা দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও সেখানে চাহিদার তুলনায় তেল কম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা আগে বাড়তি দামে তেল কিনেছেন, তাই এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। নতুন তেল এলে নির্ধারিত দামেই বিক্রি করবেন।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে কমে গেছে। খুচরায় হয়তো এখনো কিছুটা বাড়তি। সরকারের উচিত খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে পলিব্যাগ ও বোতলজাত করার নির্দেশ দেওয়া। তখন যেহেতু মেয়াদের বিষয় থাকবে, মজুত করা যাবে না।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অভিযানে আমরা অধিকাংশ বাজারে দাম কম পেয়েছি। কয়েকটি বাজারে দাম বেশির খবর যেহেতু পাওয়া গেছে, আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাব।’

বোতলজাত তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে

গত কয়েক দিনে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বেড়েছে। গত বুধবার বাজার পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম মেয়র শাহাদাত হোসেনও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখতে পেয়েছি। আমি আশাবাদী, আরও বেশি সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাবে।’

ড্রাম থেকে ছোট কন্টেইনারে ভরা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোজার বাজারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবার
  • যমুনা সার কারখানার উৎপাদন শুরু, গ্যাসের চাপ কম
  • মানিকগঞ্জে রমজানে তৃষ্ণা মেটায় ‘সাহিদুলের মাঠা’
  • এবার রোজায় বড় ব্যবসা করল ইউরোপের কোম্পানি
  • খুঁটির জোরবিহীন ইউক্রেন
  • ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ২৫ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি
  • ১ ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধের বাণিজ্য
  • নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় স্বস্তি
  • হুঁশিয়ারির পরও নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন তেল