দুই পানি শোধনাগার প্রকল্প ১০ বছর ধরে আটকা, প্রধান উপদেষ্টার বিস্ময়
Published: 9th, March 2025 GMT
‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ফেজ-৩’ ও ‘মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা’ প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে রবিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্প দুটির কাজ ১০ বছর ধরে আটকে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘‘এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে! অথচ ঢাকা শহরের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। ভূ–গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে দিন দিন আমরা পরিবেশকে বিরাট হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। সংকট থেকে উত্তরণের রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সে কাজটা এত বছর ধরে করা হয়নি।’’
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কাছে এই প্রকল্প দুটি শুরু করতে কোথায় বাধা রয়েছে তা জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর পাশাপাশি খরচ কমানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরে মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতি বছর ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে; যা টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ভবিষ্যতে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে।
এ সংকট মোকাবিলায় মেঘনা নদী থেকে সরবরাহকৃত পানি ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩) ’–এ পরিশোধন করে ঢাকা শহরে বসবাসকারীদের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘মেঘনা নদী রক্ষা মহাপরিকল্পনা’ নেওয়া হয়।
জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রকল্পে সহায়তা করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বিদেশি সংস্থা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যহত রাখবে এবং প্রয়োজনে সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১০ বছর আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। পরিকল্পনার কাজটি সম্পন্ন হলেও বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, বাংলাদেশের অন্য নদীগুলোও বিভিন্ন রকমের সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় মেঘনা নদীকে রক্ষা করা সরকারের অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘‘মেঘনা নদী নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা। এটাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তা না হলে এ এলাকার জনজীবন বাঁচানো যাবে না।’’
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতি দ্রুত দাপ্তরিক কাজ শেষ করে চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর পাশাপাশি, নদী রক্ষা কমিশনকে কীভাবে আরো সক্রিয় করা যেতে পারে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও নদী রক্ষা কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ১০ বছর র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
সৌরবিদ্যুতের ব্যবসায় আসছে প্রাণ-আরএফএল
এবার সৌরবিদ্যুতের ব্যবসায় আসছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ–আরএফএল। তারা সৌর থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করতে চায়। তাদের বিদ্যুৎ কিনবে বিশ্বের খ্যাতনামা পোশাক বিপণনকারী সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমকে (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) পোশাক সরবরাহকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত মাছের খামারে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
এই জ্বালানি উৎপাদনে তাদের অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। প্রাথমিকভাবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে আজ সোমবার শুরু হওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আগামী বুধবার এ বিষয়ে এইচঅ্যান্ডএম, প্রাণ–আরএফএল ও আইএফসির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সমন্বিত কৃষি খামার রয়েছে। সেখানে তাদের ৩৫০ একর জমি রয়েছে। এই জমিতে সৌর প্যানেল স্থাপন করতে চায় গ্রুপটি। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে এইচঅ্যান্ডএমকে পোশাক সরবরাহকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও তা ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে দ্রুত নীতিমালা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্বের বড় ক্রেতারা কার্বন নিঃসরণ টেকসই উৎপাদনব্যবস্থার দিকে নজর দিচ্ছেন। এর মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম পরিবেশের ওপর প্রভাব কমাতে এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশের পোশাক সরবরাহকারীদের কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিক্রি করতে চায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এ ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য সরকারকে নীতি সহায়তা দিতে হবে। যত দ্রুত নীতি সহায়তা দেওয়া হবে, তত দ্রুত আমরা কাজ শুরু করতে পারব। প্রাথমিকভাবে আইএফসি থেকে অর্থায়ন নেওয়া হবে। পরে যেখান থেকে কম সুদে অর্থ মিলবে, সেখান থেকে নেওয়া হবে।’
প্রয়াত শিল্পপতি আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে ৪২ বছর বয়সে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে শুরু করেছিলেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসনের ব্যবসা। সম্বল ছিল পেনশনের টাকা। তবে আবাসন ব্যবসা তিনি বেশি দিন করেননি। আবাসন ব্যবসা বাদ দিয়ে ফাউন্ড্রি ব্যবসায় বেশি নজর দেন তিনি। আমজাদ খান চৌধুরী রংপুরে ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)। এরপর তিনি প্রবেশ করেন খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে। ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ৩১টির বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। প্রাণের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে।