বারান্দার শয্যা থেকে পড়ে রোগীর মৃত্যু: কুমিল্লা মেডিকেলে এক বেলা
Published: 9th, March 2025 GMT
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচতলার বারান্দার শয্যা থেকে গত শুক্রবার রাতে পড়ে রোগীর মৃত্যুর পর সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে মেঝেতে, করিডরে রোগীদের ঠাঁই দিতে হয়। এ ছাড়া নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে দমবন্ধ পরিস্থিতি হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য মোট শয্যা ৫০০টি। তবে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিনই এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ফলে শয্যাসংকটে রোগীদের কখনো হাসপাতালের মেঝেতে আবার কখনো ঠাঁই হচ্ছে বারান্দা বা করিডরে। শনিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৪ জন। এর আগের দিন শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৯ জন। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, গরমের সময় রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ হয়ে যায়।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ওসমান গনি (৪৭) শুক্রবার মারা যান। তাঁকে ৩ মার্চ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ভর্তির দিন থেকে তিনি ওয়ার্ডের সামনের করিডরে অরক্ষিত একটি শয্যায় ছিলেন। সেখান থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান গনির স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, ঘুম না আসায় শয্যার সঙ্গে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন তাঁর স্বামী। মাথা ঝোঁকালে তিনি হঠাৎ নিচে পড়ে মারা যান।
ওসমান গনি যেখান থেকে পড়ে যান, শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শয্যা নেই। সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স বলেছেন। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ৮১টি শয্যার বিপরীতে ৯১ জন রোগী ভর্তি আছেন। ওয়ার্ডের সামনে সিঁড়ি লাগোয়া করিডরে কয়েকজন রোগীকে ভর্তি অবস্থায় দেখা গেছে।
আরও পড়ুনকুমিল্লা মেডিকেলের বারান্দার বেড থেকে পড়ে রোগীর মৃত্যু০৮ মার্চ ২০২৫শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করে ভর্তি রোগীদের কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এই হাসপাতালে একটি শয্যা পেতে যুদ্ধ করতে হয় রোগীদের। একটি সিট খালি হলেই অন্য রোগীর স্বজনেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন শয্যা নেওয়ার জন্য। অনেকে দালাল বা হাসপাতালের কর্মচারীদের টাকা দিয়ে শয্যার ব্যবস্থা করেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। দুর্গন্ধ তো আছেই। এমন পরিবেশে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক রোগী। শয্যা না পাওয়ায় মেডিসিন বিভাগের ভেতরের মেঝে ছাড়িয়ে রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন সিঁড়ির সামনের খালি জায়গাতেও। ওই বিভাগে পুরুষ ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৬৪টি; শনিবার সেখানে ১৬৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দার এই জায়গায় পাতা শয্যা থেকে পড়ে মারা যান ওসমান গনি নামের এক রোগী। ঘটনার পর শয্যা সরিয়ে নেওয়া হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসে ৭৯ জন নিহত
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী সান্তো দোমিঙ্গোতে নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৯ দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ১৫০ জনের বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হতাহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাদেশিক গভর্নর ও মেজর লিগ বেসবলের সাবেক খেলোয়াড় অক্তাভিও দোতেলও ছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে ৫১ বছর বয়সী দোতেল মারা যান।
নৈশ ক্লাবটির নাম জেট সেট। সোমবার দিবাগত রাতে সেখানে জনপ্রিয় মেরেঙ্গু গায়ক রুবি পেরেজের কনসার্ট চলাকালে ছাদ ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের মধ্যে তিনিও আছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার সময় কয়েক শ মানুষ নৈশ ক্লাবের ভেতরে ছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টায় প্রায় ৪০০ জন উদ্ধারকারী কাজ করছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের (সিওই) পরিচালক হুয়ান ম্যানুয়েল মেন্ডিজ বলেছেন, ধসে পড়া ছাদের নিচে চাপা পড়া অনেকেই এখনো বেঁচে আছেন বলে আশা তাঁর।
জেট সেট হলো সান্তো দোমিঙ্গো এলাকার একটি জনপ্রিয় নৈশ ক্লাব। সেখানে নিয়মিতই সোমবার সন্ধ্যায় ডান্স মিউজিক কনসার্টের আয়োজন করা হয়। ছাদ ধসে পড়ার সময় রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদের বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মন্টে ক্রিস্টি প্রদেশের গভর্নর নেলসি ক্রুজও আছেন। তিনি সাবেক বেসবল খেলোয়াড় নেলসন ক্রুজের বোন।
ক্লাবের ভেতর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রুবি পেরেজ গান গাওয়ার সময় মঞ্চের সামনে লোকজন বসে আছেন। কেউ কেউ আবার পেছনে সংগীতের তালে নাচছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি আলাদা ভিডিও ছড়িয়েছে। ভিডিওটি মোবাইলে ধারণ করা। এতে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে ছাদের দিকে দেখিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘সিলিং থেকে কিছু পড়ে গেছে।’ ওই ব্যক্তি যে দিকটায় দেখাচ্ছিলেন, সেখানে রুবি পেরেজও তাকাচ্ছিলেন বলে মনে হচ্ছে। ৩০ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে হট্টগোল শোনা গেল। ওই ভিডিওটি অন্ধকার হয়ে গেল। এক নারীকে চিৎকার করে বলতে শোনা গেল, ‘বাবা, তোমার কী হলো?’
রুবি পেরেজের ব্যান্ডের এক সদস্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, রাত একটার দিকে ছাদ ধসে পড়ার সময় ক্লাবটি মানুষে ভর্তি ছিল।
এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে।’
রুবি পেরেজের মেয়ে বলেছেন, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের মধ্যে তাঁর বাবাও আছেন।
প্রেসিডেন্ট আবিনাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।