মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর পদক্ষেপ অগণিত মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার ও নির্বাসিত করা হয়েছে। আরও বহু মানুষের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে আশ্রয়ের পথ।

ট্রাম্পের কাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। এই লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ আইন পরিবর্তন আনতে পারে। সেটি হলো ‘ন্যাশনাল অরিজিন-বেইজড অ্যান্টিডিস্ক্রিমিনেশন ফর নন–ইমিগ্র্যান্টস অ্যাক্ট’। আইনটি পাস করার জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসে উপস্থাপন করেছেন প্রতিনিধি জুডি চু এবং সিনেটর ক্রিস কুনস। এই বিল পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের ধর্ম, জাতীয়তা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যাবে এবং তাঁর জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

আজ এই আইন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে কেন? কারণ, আশঙ্কা বাড়ছে যে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের মুসলিম ও আফ্রিকান নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করার পরিকল্পনা করছেন।

৮ বছর আগে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। আদেশটি ছিল এই যে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশজুড়ে বিমানবন্দরগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রধানত মুসলিম দেশগুলোর অসংখ্য যাত্রীকে আটকে রাখা হয়। কর্মকর্তারা বুঝতে পারছিলেন না, কে ঢুকতে পারবেন আর কে পারবেন না।

শত শত পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বাড়িয়ে তানজানিয়া, সুদান, মিয়ানমার, ইরিত্রিয়া, কিরগিজস্তান ও নাইজেরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে এই আদেশ ‘আফ্রিকান নিষেধাজ্ঞা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর ফলে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আর মানবিক বিপর্যয় থেকে পালিয়ে আসা মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ হারান।

সিয়াটলে বিক্ষোভ, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুজিব ভাস্কর্য নির্মাণ ও অনুষ্ঠা‌নের না‌মে হাজার কো‌টি টাকা গচ্ছা, অনুসন্ধানে দুদক

ক্ষমতায় থাকা‌কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে সারা‌ দে‌শে শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা গচ্ছা দি‌য়ে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। অভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধান শুরু ক‌রে‌ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোম‌ধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধা‌নে সাত সদস্যের ক‌মি‌টি গঠন করা হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হো‌সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তি‌নি ব‌লেন, শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামকে টিমের প্রধান করা হ‌য়ে‌ছে।

টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দুদক জানায়, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়— এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।

অভি‌যোগ আছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া, বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর‌্যাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করে। ফ‌লে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকার ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ