বরিশালের বাকেরগঞ্জে মো. আসাদুল্লাহ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কাটার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নতুন কয়েক নেতা ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার নিয়ামতি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।  

অভিযোগ রয়েছে- ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধার ছত্রছায়ায় ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল ফরাজীর অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনায় সালাম মৃধাসহ দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

আহত মো.

আসাদুল্লাহ নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি। 

স্থানীয়রা জানান, সোহেল ফরাজীর পরিবার ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা সালাম মৃধার হাত ধরে সোহেল ফরাজী বিএনপিতে প্রবেশ করেন। ধনাঢ্য সোহেল ফরাজী সৌদিপ্রবাসী। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিতে পদ পেয়ে যান। সোহেল ফরাজীর নির্দেশে তার বড় ভাই যুবলীগ কর্মী শাহীন ফরাজী ছাত্রদল নেতা আসাদুল্লাহকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেন। আহত আসাদুল্লাহ খানকে প্রথমে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাতেই ঢাকায় নেওয়া হয়। বর্তমানে আসাদুল্লাহ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আসাদুল্লাহর বাবা আলমগীর খা বলেন, ‘হামলায় শাহীন ফরাজীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াদুদ ফরাজী, শামীম ফরাজী, রাজিব ফরাজি, রফিক, মামুন, রুবেল বিজন, ইমনসহ আরও ১৫-২০ জন অংশ নেন।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে শাহীন ফরাজীরা আওয়ামী লীগ করত। কিন্তু এখন তারা নব্য বিএনপি। ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হওয়ার আগে সোহেল ফরাজী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাকিবকে আইফোন উপহার দেন ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। একইভাবে সালাম মৃধাও তাদেরকে দলে আনেন নিজের পাল্লা ভারী করতে। তারা আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টার দিকে আসাদুল্লাহ বাজারে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীর নেতৃত্বে একদল যুবক কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। আত্মরক্ষা করতে গেলে তাকে রাস্তার ওপর ফেলে কোপানো হয়। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা চলে যায়। পুরো ঘটনা বাজারে উপস্থিত অসংখ্য মানুষ দেখলেও ভয়ে তাকে উদ্ধার করতে কেউ সামনে আসেনি।

আহত ছাত্রদল নেতার স্বজনরা জানান, সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে আসাদুল্লাহর হাত এবং পায়ের রগ কেটে গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। হামলার ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে ছাত্রদল নেতাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির জোমাদ্দার বলেন, ‘ঘটনা শুনছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আমি চিনি না। তারা কিভাবে দলে এসেছে তাও আমার জানা নেই।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল ছ ত রদল ব এনপ ক প য় জখম ছ ত রদল ন ত শ হ ন ফর জ স হ ল ফর জ ফর জ র য বল গ এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত, এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ পাকিস্তানের হাতে আছে। খবর আল জাজিরার।

আজ বুধবার ভোরে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে আতাউল্লাহ তারার অভিযোগ করে বলেছেন, “ভারত গত সপ্তাহের পহেলগামে হামলাকে ‘মিথ্যা অজুহাত হিসেবে’ ব্যবহার করে পাকিস্তানে সম্ভাব্য আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছে।”

মন্ত্রী তার দাবির সমর্থনে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করেননি এবং ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

আরো পড়ুন:

‘আমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি, সে দেখতে চাকরানীর মতো’

পহেলগাম হামলা: প্রতিশোধ নিতে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি

তারার ‘এক্স’ পোস্টে বলেছেন, “যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়া হবে। এই অঞ্চলে যেকোনো গুরুতর পরিণতির জন্য ভারত সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে।”

এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আসিফও রয়টার্সকে বলেছিলেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা ‘আসন্ন’ ইসলামাবাদ অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

আসিফ বলেন, “ইসলামাবাদ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। তবে, আমাদের অস্তিত্বের প্রতি সরাাসরি হুমকি সৃষ্টি হলে আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করব।”

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগ্রামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাকিস্তান পরোক্ষাভাবে জড়িত থাকার কথা ভারত বলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ছায়া সংগঠন হিসেবে ধারণা করা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এক বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

কিন্তু ইসলামাবাদ ঘটনার সঙ্গে কোনো ভূমিকা অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

পহেলগ্রামে হামলার ঘটনার পর, প্রতিবেশী দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ভিসা বাতিল এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তানি আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, তারা নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৭৪০ কিলোমিটার (৪৬০ মাইল) বাস্তব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর গত কয়েকদিন ধরে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটছে। উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই পক্ষকে আন্তর্জাতিকভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশকে একটি ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ এর দিকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি এবং ... তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ না করার জন্য বলছি।”

মুখপাত্র আরো বলেন, “রুবিও মঙ্গলবার বা বুধবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলবেন এবং অন্যান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও একই কথা বলতে উৎসাহিত করবেন।”

জাতিসংঘ বলেছে, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সাথে কথা বলেছেন এবং ‘এমন সংঘর্ষ এড়াতে প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন যার পরিণতি দুঃখজনক হতে পারে’।

 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ