বাকেরগঞ্জে প্রকাশ্য সড়কে নারীকে বিএনপির নেতার মারধর
Published: 9th, March 2025 GMT
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে সড়কে প্রকাশ্যে মারধর করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কের ওপর এক নারীকে অপর এক পুরুষ ব্যক্তি উপর্যুপরি কিল ও ঘুষি দিচ্ছেন। এ সময় পুরুষ ব্যক্তিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন পথচারী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা।
২৭ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরের। বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের সদর রোডের একটি তৈরি পোশাকের দোকানে ওই নারীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধর করা ব্যক্তি দোকানটির মালিক জাকির হোসেন। তিনি বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার দুপুরে তিনি ওই দোকানে পোশাক কিনতে যান। এ সময় দোকানমালিক জাকির হোসেন পোশাক দেখানোর নামে তাঁর (নারী) শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দেন। এর প্রতিবাদ করলে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁকে (নারী) মারধর শুরু করেন দোকানমালিক। কিল-ঘুষি মারতে মারতে দোকানের বাইরে সড়কের ওপর নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি জানান, দোকানের ভেতরে হট্টগোল দেখে তাঁরা গিয়ে উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে এর আগেই হামলার ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত জাকির হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই নারী তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার দোকানে এসে আমার ওপর প্রথম হামলা করেছিল। এরপর আমিও পাল্টা হামলা করেছি।’
বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহবুদ্দিন শাহিন তালুকদার বলেন, জাকির হোসেন বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি। তবে নারীর সঙ্গে তাঁর এমন আচরণের বিষয়টির বিস্তারিত কিছুই তিনি জানেন না। তবে একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নাসির উদ্দিন জমাদ্দার দাবি করেন, নারীকে মারধরের ঘটনাটি সত্য নয়। আজ রোববার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়েছি। আসলে ওই নারীকে মারধর করার ঘটনা ঘটেনি। বাগ্বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে ওই নারীর সঙ্গে থাকা ছেলে দোকানমালিক জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছেলেকে মারধর করেছেন। ওই নারী ছেলেকে রক্ষা করতে গেছে। আসলে জাকির হোসেন ওই নারীকে মারধর করেননি।’
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামও একই কথা জানিয়ে বলেন, জাকির ওই নারীর ছেলের ওপর হামলা করেছেন। এ সময় ওই নারী তাঁর ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। আসলে ওই নারীকে মারধর করা হয়নি। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক রগঞ জ প র ওই ন র ক ব এনপ র কর ছ ন র ওপর র ঘটন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ‘শিশু ধর্ষণে’ মীমাংসার সালিস থেকে অভিযুক্ত বৃদ্ধ গ্রেপ্তার
কুমিল্লা লালমাইয়ে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। পরে গ্রামের কয়েকজন মাতবর ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সালিসে আয়োজন করেন। সেখানে ধর্ষণের ঘটনায় ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে সালিসের এক পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে।
জানা যায়, শনিবার রাত ১০টায় লালমাইয়ে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে সালিস বসে। সেখানে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু গভীর রাতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছে শিশুটির মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে আটক করে। পরে রোববার বিকেলে শিশুটির মা বাদী হয়ে ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।
শিশুটির চাচা বলেন, নির্যাতিত শিশুটির ধর্ষণের অভিযোগের বর্ণনা শুনে গ্রামের মাতবরেরা অভিযুক্ত বৃদ্ধকে সালিস বৈঠকে নিয়ে আসতে বললে গতকাল রাত ১০টার দিকে গ্রামের কয়েকজন ছেলে তাকে একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। বৈঠকে দুই পক্ষের লোকজন একমত হয়ে ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় তার পক্ষে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে এলে সালিস বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়, পরে পুলিশও আসে। অভিযোগের বর্ণনা শুনে তারা বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
সালিসে উপস্থিত ফজলুর রহমান মিন্টু বলেন, গ্রামের গণ্যমান্যদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে শনিবার রাতে সালিস বৈঠক হয়েছে। শিশুটির ওষুধ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা রায় করেছিল সালিসের বিচারকরা। বৃদ্ধের পক্ষে মাতবরের কাছে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু রাত ২টায় সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে বৃদ্ধকে আটক করে নিয়ে গেলে সালিস বৈঠক সমাপ্ত হয়।
স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই রেদোয়ান হোসেন বলেন, লালমাই আর্মি ক্যাম্পের একটি টিম যাওয়ার পর খবর পেয়ে আমরা শিশুটির বাড়িতে যাই। ভিকটিম ও তার পরিবারের কথা শুনে আমরা বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শিশুটির মা মামলা করেছেন। এ মামলায় ওই বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিম ওই শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রোববার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।