বরিশালে যুবদল নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার
Published: 9th, March 2025 GMT
বরিশাল নগরের কাউনিয়া হাউজিং এলাকার আলোচিত যুবদল নেতা সুরুজ গাজী (৩৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহিন সরদারকে ওরফে সোনা শাহিনকে (৪২) ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার গভীর রাতে ঢাকার মাদারটেক কাঁচাবাজার এলাকায় যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব–৩ ও ৮–এর সদস্যরা। আজ রোববার দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় র্যাব–৮–এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার শাহিন সরদার বরিশাল নগরের কাউনিয়ার গাউয়াসার এলাকার বাসিন্দা ও নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। আর নিহত সুরুজ গাজী একই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
র্যাব–৮–এর গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা অমিত হাসান বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শাহিন সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আজ দুপুরে তাঁকে নগরের কাউনিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় এর আগে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এবার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি আরও বলেন, হত্যার শিকার সুরুজ ও প্রধান আসামি শাহীন একই রাজনৈতিক দলের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এ ছাড়া আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ মার্চ রাত আটটার দিকে কাউনিয়া শের–ই–বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে শাহিন সরদার ও একই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ গাজীর মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন সুরুজকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে একই ওয়ার্ড যুবদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন গাজীকেও কোপানো হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের দুজনকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২ ও ৪ মার্চ রাতে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন দুই দফায় শাহীনের বাড়িতে আগুন দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। ৩ মার্চ নিহত যুবদল নেতা সুরুজের ভাই শাহিন গাজী বাদী হয়ে নগরের কাউনিয়া থানায় শাহিন সরদারকে প্রধান আসামি করে তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে সাত থেকে আটজনকে।
এদিকে যুবদল নেতা সরুজ গাজী হত্যা মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার শেষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। আজ দুপুরে কাউনিয়া হাউজিং এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজুল হক ও সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম হাওলাদার, ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আতাউর রহমান ও বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উলফাত রানা।
আরও পড়ুনবরিশালে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২০৫ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর শ হ ন সরদ র য বদল ন ত য বদল র দল ন ত বর শ ল ক দল র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে।
জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়।
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন।
খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না।
অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।
জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।
কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।