জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে জানানো হয়, শনিবার (৮ মার্চ) ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে রাতে ৩৪০টি ও দিনে ৩২৭টি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল টিমগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল পেট্রোল টিম ৪৭৯টি, ফুট পেট্রোল টিম ৭৩টি ও হোন্ডা পেট্রোল টিম ১১৫টি। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করে।
আরো পড়ুন:
সুনামগঞ্জে ২ পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ২৫
টেকনাফে যৌথ অভিযানে অপহৃত উদ্ধার, আটক ৩
জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল টিমের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে দুই পালায় সিটিটিসির ১৪টি, তিন পালায় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এর ১২টি এবং ডিএমপির সাথে রাতে র্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও ডিএমপির সাথে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন কর্তৃক ২০টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন ডাকাত, ১৭ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৫ জন চাঁদাবাজ, ১৬ জন চোর, ৭ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৩৬ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী। অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি স্টিলের এন্টিকাটার, একটি মোবাইল, একটি স্কুল ব্যাগ, নগদ ৩৩০ টাকা, দুটি পুরাতন স্টিলের সিট ও একটি মেট্রোরেল লাইনের এক্সিম (লোহার পাত) উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ২৫০ গ্রাম গাঁজা ও ৯৫ পিস ইয়াবা। বিভিন্ন থানায় ৭৩টি মামলা রুজু করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এমপ র টহল ট ম অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শকুনদের দৃষ্টি থেকে বোনদের রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে
দেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ঢামেকের আইসিউতে মাগুরার ছোট্ট আছিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই শকুনদের দৃষ্টি থেকে আমাদের বোনদের রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা ও সাইবার সুরক্ষার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জাতি হিসেবে এবং বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আজকে নারী দিবস, তবে এই পরিস্থিতিতে নারীরা যতটুকু নিরাপদ বোধ করার কথা তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে দেখেছি প্রত্যেক মিছিলে ভাইয়েরা-বোনেরা ছিল। মিছিলের সামনের সারিতে যখন একশ’ জন নারী দাঁড়িয়ে যেত সেটি আমাদের কয়েক হাজার ভাইয়ের চেয়ে বেশি মনোবল এবং সাহস যোগাতো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেখছি, ঢামেকের আইসিউতে মাগুরার ছোট্ট আছিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই শকুনদের দৃষ্টি থেকে আমাদের বোনদের রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনা উল্লেখ করে সারজিস বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে একজন বোনকে কোনো একজন তার মতের ওপর তার বিশ্বাসকে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে, তার পোশাকের ওপর দৃষ্টি করে যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেছে। এর পরের ঘটনা আরও বেশি ক্ষতিকর। রাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যদি একদিনের মধ্যে জামিন নিতে বাধ্য করি, এই সামগ্রিক প্রক্রিয়া রাষ্ট্রের সঠিকভাবে চলার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সারজিস আরও বলেন, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই- রাষ্ট্র এক জিনিস আর ধর্ম আরেক জিনিস। রাষ্ট্রকে সকল ধর্ম, সকল চিন্তাধারাকে ধারণ করতে হয়। এখানে নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ তার বিশ্বাস-রীতিনীতি চাইলেই অন্য ধর্মের মানুষ বা যিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয় তাকে চাপিয়ে দিতে পারে না। আমাদের বুঝতে হবে কোন কথাটি কোথায় বলতে পারব? কোন পরিসরে চাপিয়ে দিতে পারব।
অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরে সারজিস বলেন, রাজপথে বোনেরা যখন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে তখন কেউ ওভাবে কথা বলতে পারেনি, তখন বরং সমর্থন দেখেছি কিন্তু যখনই তারা রাজনীতিতে এসেছে, স্পেসিফিকভাবে আমাদের পার্টিতে এসেছে তাদের নামে মিথ্যা প্রপাগান্ডা, অপপ্রচার করা হচ্ছে। নারীরা এমন নয়, যখন প্রয়োজন তখন ব্যবহার করব যখন মনে করব তখন অপপ্রচার চালাবো।
পলিসি মেকিংয়ে নারীদের অংশগ্রহনের কথা বলে সারজিস বলেন, আমরা বোনেদের অভ্যুত্থানে হাসিনার বিরোধী লড়াইয়ে সামনের সারিতে পেয়েছি আগামীর রাজনীতিতে পলিসি মেকিংয়ে সামনের সারিতে চাই। আমাদের বোনেরা বাংলাদেশের সংসদে যোগ্যতায় অংশগ্রহণ করে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, সরকারকে বোনেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা নারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে। বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ বুঝতে হবে, এগুলোর বাইরে গিয়ে বোনেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে তাহলে বাহিনী ব্যর্থ পরিগণিত হবে। আমরা কাজ দেখতে চাই, নারীদের বোনদের ন্যায্য অধিকার সেফটি সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, মাগুরায় আট বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে দেখি এবং সেটার বিচার পাওয়ার জন্য আমাদেরকে এখনও রাস্তায় খেদিয়ে মরতে হয়। সেটাই বলে দেয় যে ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনও বিলোপ হয়নি।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে নারীরা তাদের যে ভূমিকা দেখিয়েছেন, তারপরও অভ্যুত্থানের পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি এটাকে অস্বীকার করার পাঁয়তারা চলছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো যেন আর প্রতারণামূলক আচরণ করতে না পারে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে স্বপ্ন আমরা দেখতে চাচ্ছি, নারীদেরকে এখানে নেতৃত্বে আসার পুরো উল্টোদিকে রাজনৈতিক কাঠামো চলছে। আগামীতে নারী নেতৃত্ব তৈরির জন্য সংরক্ষিত আসন কোনো ভূমিকা রাখবে না, তবে সংরক্ষিত আসনের ভূমিকা কীভাবে ইলেকটোরাল জায়গায় ধারণ করা যায় সেটা চিন্তা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীদের নিরাপত্তা সুযোগ, নেতৃত্ব তৈরির জন্য উদ্যোগী হতে হবে।
সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, আদৌ কি আমরা সম্মান পাই? আমি জানি না। আন্দোলনে আমাদের হাসবেন্ড নিহত হওয়ার পর প্রতি পদে পদে হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমরা যেখানে যাই, সেখানে অপমান করা হয়। একটা মেয়ে বিধবা হলে তার কি ব্যক্তিত্ব থাকে না?
তিনি বলেন, আমার স্বামী যাওয়ার পরে ছোট বাচ্চাদের কীভাবে মানুষ করছি, তা শুধু আমরাই জানি। সাত মাস আগেও সুখের সংসার ছিল আজ আমরা প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছি। নারীদের ন্যায্য অধিকার দেওয়া হোক। সাতটা মাস কীভাবে চলছি কেউ একটাবারও খোঁজ নেয়নি।
শহীদ অপুর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর সবাই অবহেলা করে, কেন? এর কোনো উত্তর কেউ দিতে পারবেন না। একটা গুলিতে আমার স্বামী শেষ। দুঃখের কথা বলে শেষ করতে পারব না। আমি পায়ের সমস্যার জন্য কাজ করতে পারি না। নারী দিবসে একটা কথা বলি- আপনারা আমাদেরকে সম্মান দিয়েন, আমাদের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দিয়েন।’
সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমীনের সঞ্চালনায় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক নুসরাত তাবাসসুম, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী, মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ বস্তির প্রতিনিধি ময়না, ওয়েস্টিন হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।