‘মব জাস্টিস’ পরিস্থিতি হলে এখন থেকে কঠোর হব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
Published: 9th, March 2025 GMT
এখন থেকে যেকোনো ধরনের ‘মব জাস্টিসের’ বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। যিনিই ‘মব জাস্টিস’ করেন না কেন, তাঁকে আইনের আওতায় আনতে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সচিবালয়ের আইন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ের সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘জনগণকে জানাতে চাই, যেখানেই মব জাস্টিস পরিস্থিতি হবে, সে যে–ই হোন না কেন, যে ধর্মের, লিঙ্গের, বর্ণের, জাতের হোন না কেন, আমরা এখন থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব।’
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, আজ আলোচনা হয়েছে যে আইন অন্ধ, যে–ই অপরাধী হোক না কেন, জাত, ধর্ম, বর্ণ দেখা হবে না, নারী বা পুরুষ দেখা হবে না। যিনিই অপরাধ করেন না কেন, যিনিই মব জাস্টিস করেন না কেন, তিনি ধর্মীয় হোন, নিধার্মিক হোক, ধার্মিক হোন, যে–ই হোন কেন, তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মব জ স ট স উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সংশয়বাদীদের মুখে কুলুপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একজন নিঃসঙ্গ পথিক। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষিত নীতির একজন স্ব-স্বীকৃত অনুশীলনকারী। মোদির এই নীতি হলো– আমাদের এ যুগ যুদ্ধের নয়; এখানে ‘যুদ্ধের অনুকূল পরিস্থিতি’ যতই থাকুক। ট্রাম্প নিজের ব্যাপারে একটি উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। দেশে যুদ্ধবাদীদের আক্রমণের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রাখেন, যদিও তিনি একজন কট্টর জাতীয়তাবাদী; নির্বিচারে মার্কিন স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন।
গত বছরের ১৪ জুন মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে অতিশয় উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন, সেখান থেকে তিনি পিছু হটেছেন। তার পুরো কৃতিত্ব ছিল ট্রাম্পের। ওই সময় পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য কিছু অসম্ভব শর্ত উত্থাপন করেছিলেন, যার মধ্যে আশ্চর্যজনক হলেও তাদের নিজ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া ওব্লাস্টে থাকা অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের তৎক্ষণাৎ প্রত্যাহার করা অন্তর্ভুক্ত ছিল!
অবশ্য পুতিন একজন বাস্তববাদী। কিন্তু যদি তিনি ছাড় দিতে সাহসী বোধ করেন, তা তিনি করেছেন ট্রাম্প যে বুদ্ধিদীপ্ত শক্তি প্রয়োগ করেছেন তা দেখে। ট্রাম্প জেলেনস্কির একগুঁয়ে অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছেন; ক্রিমিয়া রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ– তা স্বীকার করে নিয়ে জেলেনস্কির সামনে বিষের পাত্র ধরে রেখেছেন!
অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনে ‘আগ্রহীদের জোট’ তৈরিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর অবাস্তব পরিকল্পনা ট্রাম্প ভেস্তে দিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প ইউক্রেনে নিজের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইউরোপের প্রতিরোধ এক ধাক্কায় চূর্ণ করে দিয়েছেন এবং সে ক্ষেত্রে মার্কিন নেতৃত্ব জোরদার করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প জেলেনস্কি এবং তাঁর ইউরোপীয় সমর্থকদের আসন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হুমকি নিয়ে শান্তি আলোচনার পথে যুক্ত হওয়া অথবা রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের সংযুক্তিতে আমন্ত্রণ জানানো– এ দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেন। এই পুরো উদ্যোগে পেন্টাগন থেকে একটিও গুলি ছোড়া হয়নি।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনায় যুক্ত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিরোধাত্মক বিষয় হলো, শুল্ক নিয়ে নাটকীয় অচলাবস্থা উভয় পক্ষকে গভীর অতল গহ্বরে উঁকি দিতে এবং উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ তারা যা দেখছেন, তা তাদের পছন্দ নয়। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, উচ্চ শুল্ক উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক নয়। তিনি আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন– ভবিষ্যতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রাম্প ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় ‘নৌ চলাচলের স্বাধীনতা’র পক্ষে কোনো যুদ্ধবাজ মহড়া মার্কিন নৌবাহিনী দেখায়নি।
ইউক্রেন, ইরান ও চীন– এই তিন ক্ষেত্রেই ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির জন্য ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া ও ইরান ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের কাছে তাদের আগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় খুলে বলেছে। তারা জানিয়েছে, যদি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলেই তারা দেশটির সঙ্গে পারস্পরিকভাবে উপকারী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি শান্ত হলে চীনও পিছিয়ে থাকতে পারবে না।
পুতিন যদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার যৌক্তিকতা দেখতে পান, তাহলে মোদি কি অনেক পিছিয়ে থাকতে পারেন? একুশ শতকে একতরফাভাবে সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা অবাস্তব। বিপরীতে যদি ‘একাকী পরাশক্তি’ এবং একটি প্রাচীন ‘সভ্যতা শক্তি’ ওমানের মতো একটি ছোট দেশের মধ্যস্থতা গ্রহণের জন্য নম্রতা দেখাতে পারে, তবে এটি শুধু তাদের আত্মবিশ্বাস ও অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তুলে ধরে।
ইউক্রেন ও ইরানের পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে দরকষাকষি মোদির ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিকতার সাক্ষ্য দেয়– আমাদের এই কাল যুদ্ধের নয়। একইভাবে এর স্বাভাবিক পরিণতি হলো, একুশ শতকে উদীয়মান বিশ্বব্যবস্থায় জাতিরাষ্ট্রগুলো একতরফাভাবে সমাধান বলে কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না।
এম. কে. ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন
থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম