বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সেলিমের কন্যাকে দেখতে গেলেন ডিসি
Published: 9th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ঝালকাঠির সেলিম তালুকদারের নবজাতক কন্যা সন্তানকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। এ সময় তিনি সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমির হাতে উপহার তুলে দেন।
শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝালকাঠির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সুমি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
নবজাতকের নম রাখা হয়েছে রোজা। সেলিম তালুকদারের মৃত্যুর সাত মাস পর সন্তানের জন্ম হলো। বাবার স্নেহ-ভালোবাসা কখনো পাবে না রোজা। সেলিমও জেনে যেতে পারেননি তিনি বাবা হতে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২
চকরিয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে নারীর মৃত্যু
রোজার জন্মে কষ্টের মাঝেও আনন্দিত পরিবারের সদস্যরা। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নবজাতককে দেখতে এসে বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়। সেলিম তালুকদারের স্ত্রীর হাতে উপহার তুলে দেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। এ সময় পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেজো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩১ জুলাই রাতে তার মৃত্যু হয়।
আরো পড়ুন: মৃত্যুর সাত মাস পর বাবা হলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সেলিম
নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেড কারখানায় সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম।
সেলিম মারা যাওয়ার ৪ দিন পর সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা করিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের আগমনের খবর সেলিম তালুকদার জানতেন না।
ঢাকা/অলোক/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ
মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।
আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’
আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।
আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।
বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।